ফোনের কথোপকথন বা মেসেজে ধর্ষণ হয় না

প্রকাশ | ১৫ অক্টোবর ২০২১, ১৮:০৩ | আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০২১, ১৮:০৬

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
মোসারাত জাহান মুনিয়া (ফাইল ছবি)

মুনিয়া আত্মহত্যা ঘটনায় প্ররোচনা মামলা নাকচ হয়ে যাওয়ার পর দায়ের করা হত্যা ও ধর্ষণের মামলা তদন্ত করছে পিবিআই। ৮ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে করা মামলার তদন্ত অনেক দূর এগিয়েছে বলে পিবিআই সূত্রে জানা গেছে।

তবে যেসব অভিযোগ বা তথ্য-প্রমাণ দিয়ে মুনিয়া হত্যা-ধর্ষণের মামলা করা হয়েছে সেগুলো আইনের চোখে অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করছে বিভিন্ন সূত্র।

আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, ধর্ষণ হতে হলে আসামির শারীরিক উপস্থিতি জরুরি। নারীর কাছে গিয়ে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে শারীরিক চাহিদা মেটানো হচ্ছে ধর্ষণ। দণ্ডবিধি অনুযায়ী নারী ধর্ষণে সুনির্দিষ্ট নয়টি কারণ রয়েছে। শুধু টেলিফোন আলাপে ধর্ষণ হয় না।

মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত তানিয়া মামলাগুলো করেন। গুলশানের একটি ফ্ল্যাটে গত এপ্রিলে মারা যান মুনিয়া। তার মৃত্যুর পর প্রথমে মুনিয়ার বোন নুসরাত একটি আত্মহত্যায় প্ররোচনা মামলা করেন। মামলাটি তিন মাস তদন্তের পর গুলশান থানা আত্মহত্যার প্ররোচনার কোনো প্রমাণ না পাওয়ায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। কিন্তু মুনিয়ার বোন ওই পুলিশ প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে আদালতে নারাজি দরখাস্ত দেন। এরপর আদালত ওই নারাজি দরখাস্তটি নাকচ করে দেয়।

পরে নুসরাত তানিয়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে হত্যা ও ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন। ট্রাইব্যুনাল এই মামলা তদন্তের দায়িত্ব দেয় পিবিআইকে। একাধিক সূত্র বলছে, এখন পর্যন্ত যেসব আলামত এবং তথ্য-প্রমাণ দেওয়া হয়েছে তাতে হত্যা বা ধর্ষণের কোনো কিছুই প্রমাণ হয় না।

বিভিন্ন সূত্র বলছে, হত্যা ও ধর্ষণের জন্য কয়েকটি সুনির্দিষ্ট বিষয়ে লাগে। শারীরিক উপস্থিতির প্রয়োজন হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত তদন্তে শারীরিক উপস্থিতির কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। হত্যা বা ধর্ষণের ক্ষেত্রে যে আলামতগুলো দরকার সে ধরনের কোনো আলামত বাদীপক্ষ এখন পর্যন্ত দিতে পারেনি। হত্যা বা ধর্ষণের যে সাক্ষ্য-প্রমাণের বিষয় থাকে, সেই সাক্ষ্য-প্রমাণও এখন পর্যন্ত অনুপস্থিত।

একটি হত্যা মামলায় সুনির্দিষ্ট উপস্থিতিটিই সবচেয়ে প্রধান উপজীব্য বিষয়। কিন্তু মুনিয়ার কথিত হত্যা ও ধর্ষণ মামলায় কারও কোনো সুনির্দিষ্ট শারীরিক উপস্থিতির প্রমাণ মেলেনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, শুধু ফোনের কথোপকথনে বা বিভিন্ন মেসেজ আদান-প্রদানের মাধ্যমে হত্যা-ধর্ষণ প্রমাণ হয় না। ফোনে হত্যা করা যায় না বা মেসেজ দিয়ে হত্যা করা যায় না, হত্যার জন্য যে উপস্থিতির প্রয়োজন সেই উপস্থিতি সম্পর্কে কোনো তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। আবার যিনি হত্যা ও ধর্ষণের জন্য উপস্থিত হয়েছেন, তার জন্য প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য বা প্রমাণ লাগবে।

এই মামলার বাদী নিজেই বলেছেন, তিনি কুমিল্লা থেকে আসছিলেন এবং কুমিল্লা থেকে আসার পথে কয়েক দফা তার সঙ্গে মুনিয়ার কথাবার্তা হয়েছে। কাজেই তিনি প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী নন। ওই ফ্ল্যাটে দায়িত্বে থাকা গার্ড বা অন্য প্রতিবেশীরা, তারা কেউই মুনিয়াকে হত্যা করা হয়েছে বা মুনিয়ার বাসায় প্রবেশ করে কেউ তাকে হত্যা করেছে এমন সাক্ষ্য-প্রমাণ দিতে পারেননি। ফলে যেসব অভিযোগ বা তথ্য-প্রমাণ দিয়ে মুনিয়ার হত্যা-ধর্ষণের মামলা করা হয়েছে সেগুলো আইনের চোখে অগ্রহণযোগ্য বলেই মনে করছেন বিভিন্ন সূত্র।

মুনিয়ার হত্যাকাণ্ডের প্রধান তথ্য-প্রমাণ হিসেবে দেওয়া হয়েছে কিছু টেলি আলাপ এবং কিছু মেসেজ। এই মেসেজ এবং টেলি আলাপ দিয়ে কোনো কিছুই প্রমাণিত হয় না বলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বিভিন্ন কর্মকর্তারা মনে করছেন। তারা বলছেন, হত্যা প্রমাণের জন্য যেসব তথ্য-প্রমাণ বা আলামতের প্রয়োজন তার কোনো কিছুই এখানে নেই। সে ক্ষেত্রে এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন গুলশান থানা পুলিশের অনুরূপই হতে পারে বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র মনে করছেন।

জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ধর্ষণ হতে হলে আসামির শারীরিক উপস্থিতি জরুরি। নারীর কাছে গিয়ে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে শারীরিক চাহিদা মেটানো হচ্ছে ধর্ষণ। অন্যান্য অপরাধের সঙ্গে ধর্ষণ অপরাধের পার্থক্য রয়েছে। কোনো নারীর কাছে না গিয়ে শারীরিক সম্পর্ক না করলে কখনোই তা ধর্ষণ হবে না।

(ঢাকাটাইমস/১৫অক্টোবর/এআইএম/মোআ)