কুমিল্লার ঘটনায় সরকারকে দায়ী করলেন ডা. জাফরুল্লাহ

প্রকাশ | ১৫ অক্টোবর ২০২১, ১৮:০৭ | আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০২১, ১৮:১৬

কুমিল্লা প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, ‘কুমিল্লার পূজামণ্ডপের ঘটনার সঙ্গে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’সহ দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা জড়িত রয়েছে। সরকারের পায়ের নিচে এখন মাটি নেই। তাই সরকার ইচ্ছে করেই ফায়দা লোটার জন্য এই জঘন্য ঘটনা ঘটিয়েছে।’ পূজামণ্ডপের নিরাপত্তা দিতে না পারার জন্য অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগ দাবি করে আগামী দুই বছরের জন্য জাতীয় সরকার গঠনের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

শুক্রবার দুপুর ১২টায় কুমিল্লা নগরীর নানুয়া দিঘীরপাড়স্থ ঘটনাস্থল ভাংচুরকৃত পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করতে এসে এসব কথা বলেন ডা. জাফরুল্লাহ।

ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, প্রতীমা বিসর্জনের আগেই প্রতীমাকে বিসর্জন করা চরম দুঃখজনক ঘটনা। দেশের ইতিহাসে এই ধরনের ঘটনা আর ঘটেনি। ভাটেশ্বরী থেকে চট্রগ্রাম, এরপর কুমিল্লা, সব জায়গায়ই নিরাপত্তা দিতে সরকার পরিপূর্ণভাবে ব্যর্থ।

ডা. জাফরুল্লাহ পুলিশ প্রশাসনের উদ্দেশে বলেন, ‘খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পূজামণ্ডপে উপস্থিত হওয়ার পরেও কিভাবে মণ্ডপ ভাঙচুর হলো, শহরে হামলার ঘটনা ঘটল। এর দায় পুলিশকেও নিতে হবে। পূজামণ্ডপে কোরআন শরীফ ও পরবর্তীতে মণ্ডপ ভাঙচুরের ঘটনা সরকার উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ঘটিয়েছে। সরকার বুঝে গেছে দেশে তাদের পায়ের তলায় কোনো মাটি নেই। এই ঘটনা সরকার অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ঘটাতে পারে।’

‘সরকার বলছে, দেশের আইনশৃংখলা পরিস্থিতি ভালো আছে। আইনশৃংখলা পরিস্থিতি ভালো থাকলে পুলিশ দিয়ে কেন মন্দির পাহারা দিতে হবে।’ তিনি মন্দিরে হামলার জন্য দেশের সব মুসলমান নাগরিকের পক্ষ থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে ক্ষমা চান।

ট্রাইব্যুনাল গঠন করে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে জনসমক্ষে তা প্রকাশ করার দাবি জানিয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা বলেন, এই ঘটনায় যাতে সাধারণ মানুষকে হয়রানি না করা হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, ‘সরকার বলছে এই ঘটনায় বিএনপি-জামায়াত জড়িত থাকতে পারে। আরে বিএনপিরতো হাঁটার মতো কোনো ক্ষমতাই নেই। তাদেরতো কোমরে শক্তি নেই। তারা কিভাবে এই ঘটনা ঘটাবে।’

‘সরকার দেশের মাদরাসাগুলোকে পাঁচ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে। যখন দেখছে টাকা দিয়েও মাদরাসাগুলো তাদের কথা শুনছে না। তখন কৌশল করে তাদেরকে জেলে পাঠিয়েছে। এখনো অনেক আলেম জেলে রয়েছে, জামিন পাচ্ছে না।’

একই এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকি সাংবাদিকদের বলেন, ‘কুমিল্লার নানুয়া দিঘির পাড়ের এই পূজামণ্ডপে পুলিশ উপস্থিত হওয়ার পরেও কিভাবে হামলা হলো তা খতিয়ে দেখতে হবে। কক্সবাজারের রামু, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর ও কুমিল্লার নানুয়া দিঘির পাড়ের ঘটনা- সবই একই সূত্রে গাঁথা এবং প্রতিটি ঘটনার সঙ্গেই সরকার জড়িত।’

‘আজ পর্যন্ত কোনো ঘটনার বিচার হয়নি। বরং যারা এই কাজ করেছে তাদের ইউপি নির্বাচনে সরকার মনোনয়ন দিয়েছে। সরকার দেশকে বিভাজন করার হীন উদ্দেশ্যে কাজ করছে। সরকারের মদদেই কুমিল্লার পূজামণ্ডপগুলোতে হামলা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। কুমিল্লায় পুলিশের নির্বিচারে গুলির কারণে পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়েছে। সরকার ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টা করছে।’

ভাষানী অনুসারী পরিষদের সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারের ব্যর্থতার কারণেই কুমিল্লায় এই ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে। সরকার যদি আগে থেকেই সোচ্চার থাকত তাহলে এই ধরনের ঘটনা এড়ানো যেত।’

গত ১২ অক্টোবর মঙ্গলবার রাতে কুমিল্লা নগরীর নানুয়ার দিঘিরপাড়ের একটি দুর্গাপূজার মণ্ডপে মূর্তির পায়ের ওপরে কোরআন শরিফ রাখার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পরদিন বুধবার সকালে দুজন ব্যক্তি ৯৯৯-এ কল করে পুলিশকে ঘটনাটি জানালে কোতোয়ালি থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বিষয়টির সত্যতা পায়।

কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আন্ওয়ারুল আজিম কোরআন শরিফটি উদ্ধার করেছেন, এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে বুধবার সকাল থেকে লোকজন নানুয়ার দিঘিরপাড়ে জড়ো হয়ে মিছিল করে। তারা দুটি মণ্ডপে ভাঙচুর চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ারশেল ও ফাঁকা গুলি ছোড়ে।

দুপুর ১২টার পর উত্তেজনা চরম আকার ধারণ করে। শহরের বিভিন্ন প্রান্তে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। মনোহরপুরের রাজেশ্বরী কালিমন্দির, চকবাজারের মন্দিরে ভাঙচুর, ঠাকুরপাড়া বাগানবাড়ি এলাকার পূজার গেটে ভাঙচুর করে। বিকালে টমছমব্রিজেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে জনতার ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ঠাকুরপাড়া এলাকাতেও সংঘর্ষ হয়। বিকাল পৌনে ৫টা পর্যন্ত দফায় দফায় বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ ও মিছিলের ঘটনা ঘটে।

(ঢাকাটাইমস/১৫অক্টোবর/কেএম)