এক লাখ রোগীর জন্য অ্যানেসথেসিওলজিস্ট একজন!

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৬ অক্টোবর ২০২১, ১৩:২২ | প্রকাশিত : ১৬ অক্টোবর ২০২১, ১০:৪১

চিকিৎসা খাতের উন্নয়নে দেশে চিকিৎসক নিয়োগসহ নানা পদক্ষেপ নেয়া হলেও ভয়াবহ সংকট চলছে অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসকের (অবেদনবিদ)। রোগীর বিপরীতে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী যে পরিমাণ অ্যানেসথেসিওলজিস্ট থাকার কথা তার ধারে-কাছেও নেই বাংলাদেশ। উন্নত বিশ্বে যেখানে এক লাখ রোগীর জন্য ২০ জন অ্যানেসথেসিওলজিস্ট রয়েছে, সেখানে দেশে মাত্র ১ জন।

চিকিৎসার মান ঠিক রাখতে অ্যানেসথেশিয়া চিকিৎসকদের আন্তর্জাতিক সংস্থা যুক্তরাষ্ট্রের ‘ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অব সোসাইটি অব অ্যানেসথেসিওলজিসের (ডব্লিউএফএসএ) মতে, প্রতি লাখ রোগীর বিপরীতে পাঁচজন করে অ্যানেসথেসিওলজিস্ট থাকা দরকার। তাই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।

বিশেষ করে করোনার সংক্রমণ যখন ঊর্ধ্বগতি ছিল, তখন আইসিইউতে রোগীদের চিকিৎসায় অ্যানেসথেসিওলজিস্টদের অভাব চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। অ্যানেসথেশিওলিস্টদের অভাবে অনেক হাসপাতালে অস্ত্রোপচার বন্ধ থাকে এমন তথ্যও আছে। পরে দ্রুত অ্যানেস্থেসিওলজি বিভাগে জুনিয়র কনসালট্যান্ট পদে ৪০৯ জন চিকিৎসক নিয়োগ দেয় সরকার।

এমন বাস্তবতার মধ্যে সারা বিশ্বের মতো আজ দেশে পালিত হবে ওয়ার্ড অ্যানেসথেসিয়া ডে। দিবসটি উপলক্ষে বৈজ্ঞানিক সেমিনারসহ নানা কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সোসাইটি অব অ্যানেসথেসিওলজিস্টের হিসাবে, বর্তমানে দেশে সরকারি-বেসরকারি মিলে বিভিন্ন ক্যাটাগরির তিন হাজারের মতো অ্যানেসথেসিওলজিস্ট রয়েছেন। এর মধ্যে সরকারি হাসপাতালে পদ ও অ্যানেসথেসিওলজিস্টের সংখ্যা হাজারের মতো।

সোসাইটি আরও জানায়, মোট অ্যানেসথেসিওলজিস্টের মধ্যে সোসাইটির অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন প্রায় ১৮০০ চিকিৎসক। এদের বড় অংশ নিয়মিতভাবে অ্যানেসথেসিওলজিস্ট হিসেবে কাজ করছেন। কিন্তু চিকিৎসাসেবার মান ঠিক রাখতে প্রতি লাখে ৫ জন করে অ্যানেসথেসিওলজিস্ট থাকা দরকার বলে মনে করেন সংগঠনটির দায়িত্বপ্রাপ্তরা।

একই সঙ্গে আলাদা আলাদা বিষয়ে দক্ষ অ্যানেসথেসিওলজিস্ট গড়ে তোলা সম্ভব হলে চিকিৎসার মান বাড়বে বলেও মনে করেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের চিকিৎসক ও অ্যানেসথেসিওলজিস্টদের সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. দেবব্রত বণিক ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এই সংকট কাটানোর জন্য সরকারের কাছে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা জমা দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে স্বল্প মেয়াদের পরিকল্পনায় সাড়া দিয়ে দ্রুততার সঙ্গে বেশ কিছু চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তবে তাদের এখনো পদায়ন নিয়ে সমস্যা রয়েছে। আশা করি সরকার গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি দেখবে।’

চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একজন সার্জন মূলত সংশ্লিষ্ট রোগীর অস্ত্রোপচার করেন। অস্ত্রোপচার শেষে তার খুব বেশি কাজ না থাকলেও একজন অ্যানেসথেসিওলজিস্টের কাজ শুরু হয় অপারেশনের আগে রোগীকে অজ্ঞান করার মধ্য দিয়ে। সার্জন যখন অস্ত্রোপচার করেন তখনো অ্যানেসথেসিওলজিস্টের রোগীর দিকে সতর্ক নজর রাখতে হয়। কারণ অপারেশনের মধ্যেও রোগীর ব্যথা উঠতে পারে। একটা অপারেশন তখনই সফল হয় যখন রোগীর ব্যথামুক্তভাবে জ্ঞান ফিরে আসে। অ্যানসেথেসিওলজিস্ট একটু অসতর্ক হলেই রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। কোনো রোগীকে আইসিইউতে নেয়ার প্রয়োজন হলে সেখানেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হয় একজন অ্যানেসথেসিওলজিস্টের।

ডা. দেবব্রত বণিক বলেন, ‘পোস্ট গ্রাজুয়েট করা যেসব অ্যানেসথেসিওলজিস্ট রয়েছেন তাদের অর্ধেক সরকারি এবং অর্ধেক বেসরকারি হাসপাতালে কাজ করছেন। এ ছাড়া ৬ মাস বা এক বছরের প্রশিক্ষণ নিয়ে কেউ কেউ কাজ করছেন। কিন্তু উন্নত বিশ্বে একজন রোগীকে সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার জন্য আলাদা আলাদা বিষয়ে দক্ষ অ্যানেসথেসিওলজিস্ট থাকেন।

দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন পদ সৃষ্টি করে চাহিদার আলোকে চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হলে রোগীরাই উপকৃত হবেন বলে মনে করেন এই চিকিৎসক। বাংলাদেশসোসাইটিঅব অ্যানেসথেসিওলজিস্টেরসাধারণসম্পাদক ও বারডেম হাসপাতালের চিকিৎসক কাওসারসরদার ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘অ্যানেসথেসিওলজিস্টের প্রচণ্ড ঘাটতি রয়েছে। ২০১৬ সালের তথ্য অনুযায়ী ১ লাখ রোগীর বিপরীতে দেশে ০.৭৩ জন ছিলেন। এখন হয়তো লাখে ১ জন হবে। কিন্তু এটা মানদণ্ড অনুযায়ী অনেক কম। কমপক্ষে ৫ গুণ বাড়াতে হবে এই সংখ্যা। ’

(ঢাকাটাইমস/১৬অক্টোবর/বিইউ/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :