যেভাবে দেশে আসে ১২ কোটি টাকার ভয়ংকর মাদক আইস

প্রকাশ | ১৬ অক্টোবর ২০২১, ১৩:৪৭ | আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০২১, ১৪:৩৮

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে ভয়ংকর মাদক ক্রিস্টাল মেথ বা আইস সিন্ডিকেটের অন্যতমহোতা হোছেন ওরফে খোকন ও তার সহযোগী মোহাম্মদ রফিককে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। এ সময় তাদের কাছ থেকে পাঁচ কেজি ৫০ গ্রাম আইস জব্দ করা হয়। যার বাজারমূল্য প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকা। 

র‍্যাব বলছে, পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে নাফ নদীর মাধ্যমে তারা এই আইস নিয়ে আসে। পার্শ্ববর্তী দেশের বার্মিজ আচার, কাপড় ও চায়ের চাহিদা রয়েছে বাংলাদেশে। তারা আচার ও চায়ের আরালে এই ভয়ংকর মাদক আইস নিয়ে এসে সেগুলো রাজধানীর বিভিন্ন এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সাপ্লাই দিত। দেশে জব্দকৃত আইসের সবচেয়ে বড় চালান এটি।

শনিবার দুপুরে কারওয়ানবাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, অভিযানে জব্দ করা হয় নতুন ভয়ংকর মাদক আইস, যার পরিমাণ প্রায় পাঁচ কেজি ৫০ গ্রাম। যার বাজারমূল্য প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকা। এছাড়াও তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, ৫ রাউন্ড গোলাবারুদ, ২টি মোবাইল, ৩টি দেশি-বিদেশি সিমকার্ড ও মাদক কারবারে ব্যবহৃত ২০ হাজার টাকা জব্দ করা হয়। র‍্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র‍্যাব-১৫ এর একটি আভিযানিক দল শনিবার ভোরে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে।

আইসের ক্ষতিকর দিক

বর্তমান সময়ে সবচেয়ে আলোচিত মাদক হলো আইস বা ক্রিস্টাল মেথ। ক্রিস্টাল মেথ বা আইসে ইয়াবার মূল উপাদান এমফিটামিনের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। তাই মানবদেহে ইয়াবার চেয়েও বহুগুণ ক্ষতিসাধন করে এই আইস। এটি সেবনের ফলে অনিদ্রা, অতি উত্তেজনা, স্মৃতিভ্রম, মস্তিষ্ক বিকৃতি, স্ট্রোক, হৃদরোগ, কিডনি ও লিভার জটিলতা ও মানসিক অবসাদ ও বিষণ্নতার ফলে আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। শারীরিক ও মানসিক উভয় ক্ষেত্রে এটির নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। এই মাদকের প্রচলনের ফলে তরুণ-তরুণীদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে ও অস্বাভাবিক আচরণ পরিলক্ষিত হয়। এই মাদকে আসক্ত হয়ে মাদকাসক্তরা নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।

পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে যেভাবে ঢাকায় আসে আইস

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা টেকনাফ কেন্দ্রিক মাদক সিন্ডিকেটের সদস্য। এই চক্রটি গত কয়েক বছর ধরে অবৈধ মাদক ইয়াবার কারবার করে আসছে। সিন্ডিকেটে ২০-২৫ জন যুক্ত রয়েছে। সিন্ডিকেটের সদস্যরা সাধারণ নৌপথ ব্যবহার করে মাদকের চালান দেশে নিয়ে এসে থাকে। চক্রটি ইয়াবা কারবারের সঙ্গে জড়িত থেকে গত কয়েক মাস ধরে আইস পাচার করে আসছিলো। ঢাকার উত্তরা, বনানী, গুলশান, ধানমন্ডি ও মোহাম্মদপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় তাদের সিন্ডিকেট সদস্য রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে টেকনাফ কেন্দ্রিক কয়েকটি মাদক চক্র বেশ কিছুদিন ধরে পাশ্ববর্তী দেশ থেকে মাদকদ্রব্য আইস বাংলাদেশে নিয়ে আসছে। ফলে র‍্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, টেকনাফের নাফ নদীতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তল্লাশি চৌকি থাকলেও গ্রেপ্তার এই আইস সিন্ডিকেটের সদস্যরা রাতের অন্ধকারে নৌকায় লাইটার সিগন্যালের মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী দেশের মাদক কারবারিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আইস নিয়ে আসে। তারা এর আগে ইয়াবা নিয়ে এলেও বেশি লাভের আশায় সম্প্রতি আইস নিয়ে আসা শুরু করে। টেকনাফ থেকে চট্রগ্রাম পর্যন্ত সড়ক পথে নিয়ে আসে। এরপর তারা চট্রগ্রাম থেকে সড়ক পথে ঢাকায় নিয়ে আসে।

বার্মিজ আচার, কাপড় ও চায়ের আড়ালে আসছে মাদক

পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে নাফ নদীর মাধ্যমে তারা এই আইস নিয়ে আসে। পার্শ্ববর্তী দেশের বার্মিজ আচার, কাপড় ও চায়ের চাহিদা রয়েছে বাংলাদেশে। গ্রেপ্তার আইসের অন্যতম হোতা রফিকের বার্মিজ আচার, কাপড় ও চায়ের ব্যবসা ছিল। সে এই ব্যবসার আড়ালে এই ভয়ংকর মাদক আইস নিয়ে এসে সেগুলো রাজধানীর বিভিন্ন এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সাপ্লাই দিত। দেশে জব্দকৃত আইসের সবচেয়ে বড় চালান এটি।

এই চক্রের অন্যতম হোতা খোকনের নামে বিভিন্ন থানায় অস্ত্র ও মাদকসহ একাধিক মামলা রয়েছে। তার সহযোগী মোহাম্মদ রফিক চক্রের একজন সক্রিয় সদস্য এবং টেকনাফে অটোরিকশা চালকের ছদ্মবেশে মাদক পরিবহণ ও স্থানান্তর করতো।

এক প্রশ্নের জবাবে র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, এই সিন্ডিকেটে যে ২০ থেকে ২৫ জন রয়েছে। তাদেরকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

(ঢাকাটাইমস/১৬অক্টোবর/এসএস/কেআর)