কুমিল্লার ঘটনা নিয়ে বিএনপি নেতারা যা বললেন

প্রকাশ | ১৬ অক্টোবর ২০২১, ১৮:১৭

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

কুমিল্লায় দুর্গাপূজার মণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরীফ রাখার পেছনে সরকারের দায় আছে বলে দাবি করছে বিএনপি। দলটির নেতারা বলছেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ সরকারের ব্যর্থতা থেকে মানুষের নজর ভিন্নখাতে নিতেই এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে।

ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে বিএনপি নেতারা বলছেন, সরকার চাইলে এই ঘটনার সঠিক তদন্ত করা সম্ভব।

শনিবার আলাদা অনুষ্ঠানে বিএনপির একাধিক নেতা এসব কথা বলেন।

জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির এক অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশে রাষ্ট্র, সমাজ, রাজিনীতি সব ক্ষেত্রেই ইসলামের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র হচ্ছে। যার কারণে অন্যায়, অত্যাচার চলছে। দেখা যাচ্ছে সত্যকে মিথ্যা দিয়ে পরাজিত করবার অপচেষ্টা চলছে। ন্যায়, অন্যায়ের কাছে পরাজিত হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করে, মিথ্যাচার করে বর্তমান প্রজন্মকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা চলছে।

খন্দকার মোশাররফ আরও বলেন, আমরা রাসূলের আদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি, তাই সমাজে এত অত্যাচার অনাচার চলছে, গায়ের জোর প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, দেশে কোরআনের অনুশাসন ও রাসূলের আদর্শ নেই বলেই মানুষ গুম হচ্ছে। আজকে অনেকেই মুখে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলেন। কিন্তু একজন মানুষ যদি কোনো ধর্ম মানেন, তাহলে তিনি ধর্মনিরপেক্ষ হন কীভাবে? তিনি যে ধর্মই পালন করুন, তিনি ওই ধর্মের লোক।

কুমিল্লার ঘটনা প্রসঙ্গে খন্দকার মোশাররফ বলেন, পূজার সময় মন্দিরে কে কোরআন রেখেছে এটা আমরা জানি না। যারা এটাকে ব্যবহার করে রাজনীতি করতে চাচ্ছেন, তাদের ধিক্কার জানাই। সরকার চাইলে এটার সঠিক তদন্ত কঠিন কিছু নয়।

নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচে বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় আয়োজিত দোয়া মাহফিলে বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস বলেন, বিএনপি অত্যন্ত উচ্চ পর্যায়ের একটি অসাম্প্রদায়িক দল ও দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া অত্যন্ত উচ্চ মানসিকতার একজন নেত্রী’।

মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমার নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া একদিন রাতে হঠাৎ আমাকে ফোন দিয়েছিলেন। জানতে চাইলেন আব্বাস কি করছেন? আমি বললাম, ম্যাডাম ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি। তিনি আমাকে বললেন ঘুমালে তো চলবে না। আপনি কিছু শোনেননি? আমি বললাম না ম্যাডাম। তিনি বললেন- ভারতে বাবরি মসজিদ ভাঙা হচ্ছে। আপনি যান, আপনার এলাকার মন্দিরগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।’

খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে প্রথমবারের ক্ষমতায় আসার পর ১৯৯২ সালের ওই ঘটনার কথা তুলে ধরে মির্জা আব্বাস আরও বলেন, তিনি তখন খুব সুন্দরভাবে আমাদের দেশের মুসলমানদের ধৈর্য ধারণ করতে বলেছেন। তাই এটা প্রমাণিত বিএনপি অত্যন্ত উচ্চ পর্যায়ের একটি অসাম্প্রদায়িক দল ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া অত্যন্ত উচ্চ মানসিকতার একজন নেত্রী।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সরকারকে পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই- এসব নোংরামি ছাড়েন। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য বহু পন্থা অবলম্বন করেছেন- খুন করেছেন, গুম করেছেন। আমাদের যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও বিএনপির নেতাকর্মীদের দিয়ে জেলখানা ভরে ফেলেছেন। কোর্টে গেলে আমাদের লোক ছাড়া আর কাউকে দেখা যায় না।’

একই অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, দেশকে চরম দুর্দিনের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন শেখ হাসিনা। নিজের অবৈধ সত্তাকে টিকিয়ে রাখার জন্য। আর প্রভুদের খুশি রাখার জন্য। আর প্রভুদের দেখাচ্ছেন আমি ছাড়া এসবের মোকাবেলা কেউ করতে পারবে না।’

কুমিল্লার ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে সরকারের সমালোচনা করেন রিজভী। বলেন, এদেশের কোনো মুসলমান হিন্দু এই ঘটনা ঘটাবে না এটা আমাদের বিশ্বাস। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধনে দেশ বাংলাদেশ। সেখানে আপনার আমলেই রামু উখিয়া টাঙ্গাইল পাবনা হিন্দুদের উপর আক্রমণ হয়েছে এবং তাদের সম্পত্তি লুট করা হয়েছে।

রিজভী বলেন, এগুলো কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এই সরকার তার সকল অপকর্ম, সকল জনবিরোধী কর্ম, রক্তপাত গুম-খুন সবকিছু আড়াল করার জন্য এবং দ্রব্যমূল্য যে বাড়তি সেগুলো আড়াল করার জন্য। সরকারের এজেন্সির যে নীলনকশা সেই নীল নকশার-ই একটা অংশ কুমিল্লার ঘটনা।

(ঢাকাটাইমস/১৬অক্টোবর/বিইউ/এমআর)