প্রবাসীদের সর্বস্ব লুট করাই তাদের মিশন

প্রকাশ | ১৭ অক্টোবর ২০২১, ১৩:১৬ | আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০২১, ১৫:০৪

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

কখনও সখ্য গড়ে। কখনও ছিনতাইকারী এমনকি ডাকাতের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় চক্রটি। তাদের বিচরণ হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ঘিরে। সেখানেই বিদেশ ফেরত প্রবাসীদের সর্বস্ব কেড়ে নেয়ার ধান্দায় থাকে অপরাধী চক্রটি। এই চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে এসব তথ্য।

রবিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার। 

এর আগে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তরা বিভাগের একটি দল অভিযান চালিয়ে এই চক্রের তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মাসুদুল হক, মো. আমির হোসেন হাওলাদার ও মো. শামীম। এ সময়ে তাদের কাছ থেকে পাঁচটি পাসপোর্ট, দুটি জাতীয় পরিচয়পত্র, দুটি এটিএম কার্ড, একটি আইপ্যাড, একটি ওয়ার্ক পারমিট, একটি বিএমইটি কার্ড, একটি অফিস আইডি, একটি চাকু ও নগদ ৫৫ হাজার টাকা জব্দ করা হয়েছে। 

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) শফিকুল ইসলাম ও অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) কোরাইশীর নেতৃত্বে অভিযানটি পরিচালিত হয়।  

সংবাদ সম্মেলনে হাফিজ আক্তার বলেন, গত ৭ সেপ্টেম্বর লিটন সরকার নামের এক ব্যক্তি দীর্ঘ পাঁচ বছর পরে মিশর থেকে টার্কিশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে বাংলাদেশে আসেন। তিনি বিমানবন্দরের টার্মিনাল থেকে গোল চত্বরে এসে ফুটওভার ব্রিজের নিচে এসে বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন।  এসময় অজ্ঞাতনামা পাঁচ থেকে ছয়জন লোক তাকে ধারালো চাকুর ভয় দেখিয়ে তার সাথে থাকা হ্যান্ডব্যাগ ও লাগেজ, একটি পাসপোর্ট, মিশনের ভিসা, বিমানের টিকিট, আট আনা ওজনের স্বর্ণের চেইন, দুটি মোবাইল সেট, একটি স্মার্ট কার্ড, কাপড় চোপড়সহ নগদ ৪০ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে এই চক্রের সদস্যরা ভুক্তভোগী লিটন সরকারকে ঘটনাস্থল থেকে একটি বাসে তুলে দিয়ে ঘটনা সম্পর্কে কাউকে কিছু না বলার জন্য হুমকি দেয়। এ ঘটনায় গত শুক্রবার বিমানবন্দর থানায় একটি মামলা হয়। মামলাটির তদন্ত শুরু করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তরা বিভাগ। 

গ্রেপ্তারকৃতদের বরাত দিয়ে ডিএমপির এই গোয়েন্দা প্রধান বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা ডকাতির জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে থাকে। তারা বিদেশ থেকে আসা প্রবাসীদের টার্গেট করে থাকে। মূলত যারা একা একা  বাড়ি যাওয়ার জন্য গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে থাকে তাদের টার্গেট করে থাকে।  টার্গেট করা এই যাত্রীদের সাথে সুকৌশলে সম্পর্ক তৈরি করে পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনা করে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয়।  এছাড়াও বিদেশ থেকে আসা প্রবাসীদের সঙ্গে সখ্য তৈরি করে তাদের চেতনানাশক মিশ্রিত খাবার খাইয়ে মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয়। 

এই চক্রটি কতদিন ধরে কয়টি অপরাধ সংঘটিত করেছে এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএমপির এই গোয়েন্দা প্রধান বলেন, তারা  ৫০ থেকে ৬০টির মতো ঘটনা ঘটিয়েছে। কখনও কখনও গাড়িচালকেরাও তাদের শিকার হয়েছে। তারা যখন যে সুযোগ পায় সেই অপরাধ করে থাকে। কখনও ডাকাতি আবার কখনও ছিনতাই বা অচেতন করে সম্পদ ছিনিয়ে নেয়।  

এসব ঘটনায় কেন মামলা করা হয় না এমন প্রশ্নের জবাবে হাফিজ আক্তার বলেন, যারা বিদেশ থেকে আসেন তারা মূলত সময় পান না। তারা কোনোভাবে তাদের খোয়া যাওয়া পাসপোর্টটি সংগ্রহ করে বিদেশে চলে যান। এছাড়াও মামলা চালানো ঝামেলা হওয়ার কারণে তারা মামলা করতে আগ্রহ দেখান না। মূলত অপরাধীরা এই সুযোগটি নিয়েই অপরাধ করে থাকেন। 

সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ, গণমাধ্যম শাখার উপ-কমিশনার ফারুক হোসেন, অতিরিক্ত উপ-কমিশনার হাফিজ আল আসাদ ও গোয়েন্দা পুলিশের বিমানবন্দর জোনের এডিসি  মো. কায়সার রিজভী কোরায়েশী উপস্থিত ছিলেন। 

(ঢাকাটাইমস/১৭অক্টোবর/এএ/কেআর)