দাগনভূঞা পৌরসভার সড়কগুলোর বেহালদশা

প্রকাশ | ১৭ অক্টোবর ২০২১, ১৬:৪৯

মোকাররম হোসেন, দাগনভূঞা (ফেনী)

প্রথম শ্রেণির এই পৌরসভাটি ফেনী জেলার অন্যতম হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু এই পৌরসভার বাসিন্দাদের প্রতিনিয়ত সড়ক নিয়ে নানারকম ভোগান্তির সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দাগনভূঞা পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের দাসপাড়া সড়ক ও ২ নম্বর ওয়ার্ডের ডাকবাংলো সড়ক। গত ৫ বছরেও সড়ক সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় সড়কের অধিকাংশ জায়গায় বড় বড় গর্ত হয়ে গেছে। পানি নিষ্কাশনব্যবস্থা সচল না থাকায় অল্প বৃষ্টিতেই সড়ক চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।

৯ নম্বর ওয়ার্ডের দাশপাড়া রোডটি একটু বৃষ্টি হলেই হাটু পানি হয়ে যায়। তাছাড়া রাস্তায় দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় অনেক বড় বড় গর্ত হয়ে গেছে। এই কারণে ওই সড়কে কোনো ধরনের যান চলাচল করতে পারে না। এমনকি রিকশা পর্যন্ত ওই রোড়ে যেতে চায় না। ১০ টাকার ভাড়া ২০ টাকা দিবে বললেও যেতে রাজি নয় তারা। অথচ এই রাস্তার শেষ প্রান্তে অবস্থিত বালিকা বিদ্যালয়। প্রতিদিন শত শত শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের একমাত্র পথ এই রাস্তাটি। এর ফলে স্থানীয়দের এবং শিক্ষার্থীদের পোহাতে হয় চরম দুর্ভোগ।

দাগনভূঞা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী সায়মা বিনতে কাদের বলেন, আমাদের এখন স্কুল খুলে গেছে। আমরা নিয়মিত স্কুলে যেতে হয় এই পথ দিয়ে। কিন্তু রাস্তার এই বেহাল অবস্থার কারণে আমাদের পড়তে হয় অনেক ভোগান্তিতে। বৃষ্টির সময় গর্তগুলো দেখাও যায় না। এ সড়কে ঠিক করার ব্যাপারে কারও যেন নজরই নেই। আমরা কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, যেন দ্রুত এটি সংস্কার করে আমাদের দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দেয়া হয়।

২ নম্বর ওয়ার্ডের ডাকবাংলো সড়কও দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্তের। এটি বাইপাস সড়ক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। দাগনভূঞা বাজারকে যানজটমুক্ত রাখতে এই রাস্তা সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে।

বড়, ছোট, মাঝারি মোটামুটি সব ধরনের যানচলাচল করে এই রাস্তা দিয়ে। এছাড়া এই রাস্তার পাশ দিয়ে উপজেলার মুক্তিযুদ্ধ কমপ্লেক্স ভবন, সরকারি ইকবাল মেমোরিয়াল কলেজের শিক্ষকদের আবাসিক ভবন, দাগনভূঞা প্রেসক্লাব ভবন, হাসপাতাল, দাতব্য চিকিৎসালয় অবস্থিত। এসব জায়গায় যেতে স্থানীয়দের বিশেষ করে মুক্তিযোদ্ধাদের, অসুস্থ রোগীদের যাতায়াতে খুবই কষ্ট হয়।

এলাকাবাসী জানান, সঠিকভাবে সংস্কার করলে রাস্তা এমন হওয়ার কথা নয়। রোগীদের কথা চিন্তা করে হলেও যেন এই রাস্তাটি দ্রুত সংস্কার করা হয়।

সরকারি ইকবাল মেমোরিয়াল কলেজের শিক্ষার্থী সাদ্দাম হোসেন হৃদয় বলেন, আমরা কলেজে বা প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার জন্য সাধারণত এই বাইপাস সড়ক ব্যবহার করে থাকি। দীর্ঘদিন ধরে দেখছি এই রাস্তা সংস্কার হচ্ছে না। এতে আমাদের শিক্ষার্থীরাসহ সাধারণ মানুষদের খুবই কষ্ট হয়। এছাড়াও রাস্তায় বড় গর্ত থাকায় যেকোন মুহূর্তে বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। এর দায়ভার কে নেবে? কর্তৃপক্ষ দ্রুত সড়কের সংস্কারকাজ সম্পন্ন করবে বলে আশা প্রকাশ করেন এই কলেজ শিক্ষার্থী।

দাগনভূঞা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সাংবাদিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি সৈয়দ ইয়াছিন সুমন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ঠিকাদারের নিম্নমানের কাজের কারণে অল্প সময়েই সড়কের এই বেহাল দশা।  তিনি তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে অতি দ্রুত ভালো মানের কাজ করে এমন ঠিকাদারকে দিয়ে সংস্কার কাজ করাতে কর্তৃপক্ষের প্রতি পরামর্শ দেন।

রাস্তা সংস্কার প্রসঙ্গে দাগনভূঞা পৌরসভার মেয়র ওমর ফারুক খান বলেন, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের দাসপাড়া সড়কের টেন্ডার হয়েছে। বর্ষা শেষ হলে ঠিকাদার কাজ শুরু করবে। আর ২ নম্বর ওয়ার্ডের ডাকবাংলো সড়ক বা বাইপাস সড়কটি নতুন প্রকল্পের মধ্যে তালিকা দেয়া হয়েছে। একনেকে অনুমোদন পেলে সড়ক সংস্কারের কাজ শুরু করা হবে।

দাগনভূঞা পৌরসভার মানুষের প্রাণের দাবি দ্রুত সড়কগুলো সংস্কার করে তাদের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ থেকে তাদের যেন মুক্তি দেয়া হয় এবং তারা যেন ‘প্রথম শ্রেণির পৌরসভা’র বাসিন্দা হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিতে আর লজ্জা পেতে না হয়।

(ঢাকাটাইমস/১৭অক্টোবর/কেএম)