আপন মনে একে যাচ্ছেন তিনি

কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৮ অক্টোবর ২০২১, ০১:২৮

বাড়ির কথা জানতে চাইলে সড়কে চক দিয়ে বড় বড় করে লেখা “বাড়ি ছিল দক্ষিণবঙ্গে বিশাল এক নদীর তীরে বরিশাল”- দেখিয়ে দিচ্ছেন। সবাই ফোনে ছবি তোলায় সড়কে আরও লেখেন “এগুলো মোবাইলে তুলে তুলে যে নেটের ভিতর ছাড়বে তাকে অভিশাপ করব, নেট এগুলোর কোনো মর্যাদা দেয় না।” আবার ইংরেজিতে বড় করে লেখা “DO NOT-WIPE”। কিন্তু মানুষ ফোনে ছবি তোলায় বিরক্ত হয়ে নিজেই পানি দিয়ে সেগুলো ধুয়ে ফেলছেন।

রবিবার গাজীপুরের কালীগঞ্জ পৌর শহরের পুরাতন ব্যাংকের মোড় থেকে খেয়াঘাট সড়কে যাওয়ার পথে ঠিক মাঝখানে কালীগঞ্জ আর আর এন পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও কালীগঞ্জ ডাকঘরের সামনে এমনই আগন্তুকের হঠাৎ দেখা মিললো।

চল্লিশোর্ধ্ব হালকা গড়নের মানুষটি সড়কের একপাশে আপন মনে ছবি একে চলেছেন। বাড়ি কোথায় জিজ্ঞেস করলে মুখে কিছু বলছেন না, দেখিয়ে দিচ্ছেন ওই চিত্রকর্মের পাশে। তার বিভিন্ন লেখা ও উপদেশ। আবার তার আঁকা ছবি কেউ ফোনে ধারন করতে চাইলে তার দিকে তেড়ে আসছেন।

এমনই এক রহস্যময় মানুষকে ঘিরে উপজেলা পোস্ট অফিসের সামনে বেঁধেছে জটলা। রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় পথচারীরা সাইকেল, মোটরসাইকেল, রিকশা, ইজিবাইক, সিএনজিচালিত অটোরিকশা থামিয়ে সবাই দেখে যাচ্ছেন মুখে কথা না বলা মানুষটার চিত্রকর্ম।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কালীগঞ্জ পুরাতন ব্যাংকের মোড় থেকে খেয়াঘাট সড়কে যাওয়ার কালীগঞ্জ আর.আর.এন পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও উপজেলা ডাকঘরের সামনে এক দল মানুষের জটলা। আর এই জটলা দেখে অনেকেই এগিয়ে যাচ্ছে ওখানে কী হচ্ছে জানতে। কিন্তু যে যাচ্ছে সেই এই জটলায় আটকে যাচ্ছেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে আস্তে আস্তে জটলা বড় হচ্ছে।

সকাল থেকেই সাধারণ মানুষের ভিড় লেগে আছে তাকে ঘিরে। উৎসুক জনতার মধ্যে কেউ কেউ সাদা কাগজ এনে দিচ্ছেন ছবি এঁকে দেওয়ার জন্য। লোকটি কাউকেই নিরাশ করছেন না। ময়লা কাপড় চোপড় পড়া মানুষটির মুখে মাস্ক লাগিয়ে আপন মনে চিত্রকর্ম করে যাচ্ছেন। কারো কোনো প্রশ্নের উত্তর মিলছে না। এঁকেছেন একটি লতা গাছ। তাতে বসা দুটি পাখি। আর এই চিত্রকর্মে প্রকৃতি থেকে নেওয়া পোড়া কয়লা (কালো), ইটের টুকরো (লাল), গাছের পাতা (সবুজ) ও চকের সাদা রঙ হিসেবে ব্যবহার করছেন।

চিত্রকর্মের পাশে “এমন জীবন তুমি করিবে গঠন, মরিলে হাসিবে তুমি কাঁদিবে ভুবন”, “পথ চলতে খাবার-দাবারে খুব সমস্যা যদি কারো মন চায় কিছু “HELP” করতে পারেন”, “টাকা পয়সা দুই দিনের ভালোবাসা চিরদিনের”, “জগতের সব মানুষ সমান না, সব মানুষ মানুষ না” এবং “কথা বলার মত মন মানসিকতা সব সময় থাকে না”- ইত্যাদি সব কথা বড় বড় অক্ষরে লিখে রেখেছেন।

সকাল গড়িয়ে দুপুর বয়ে এলে আশেপাশের পথচারী এবং দোকান মালিকরা তার জন্য খাবার নিয়ে এলেও তিনি তাঁর ক্যানভাসে আপন মনে আঁকতে থাকেন বাহারী সব আল্পনা। অনেক অনুরোধ করলেও হাত দেননি খাবারে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপারটি ভাইরাল হতে থাকলে দর্শনার্থীর সংখ্যাও বাড়তে থাকে। তবে স্থানীয়রা মনে করছেন লোকটি অনেক বড় প্রতিভার অধিকারী।

কালীগঞ্জ পৌর এলাকার দড়িসোম গ্রামের বাসিন্দা আলিফ সিরাজ জানান, তিনি সকালে যখন ওই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন রাস্তার উপর এমন চিত্রকর্ম দেখে থমকে দাঁড়ান। হাতের কাছে যা আছে তাই দিয়েও যে কিছু করা যায়, তা তিনি এই লোকের কাছ থেকে শিখেছেন বলেও জানান আলিফ।

কালীগঞ্জ উপজেলার ডাকঘরের উদ্যোক্তা মো. বিল্লাল হোসেন রুবেল বলেন, আমি যখন সকালে পোস্ট অফিসে কাজ শুরু করি তখন থেকে দেখি এই মানুষটি আঁকা-আঁকি শুরু করেছেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে চিত্রকর্মের দৈর্ঘ্য। বিষয়টি খুব দ্রুত স্থানীয়ভাবে ফেসবুকে ভাইরাল হয়। শুরু হয় মানুষের ভীর। তবে সত্যি অসাধারণ আঁকেন মানুষটি।

স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী মো. রিয়াদ হোসাইন বলেন, তিনি মোটরসাইকেলে এই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ চোখে পড়লো প্রতিভাবান ওই মানুষটির চিত্রকর্ম। মোটরসাইকেল থামিয়ে কথা বলার চেষ্টা করলাম কিন্তু পারলাম না। একজন মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষ কিভাবে এতটা প্রতিভার অধিকারী হতে পারে? আমি ছবি তুলতে গিয়েছিলাম পরে দেখলাম তিনি বাধা দিচ্ছেন। তাই তাকে আর বিরক্ত না করে চলে এসেছি।

কালীগঞ্জ আর.আর.এন পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ইকবাল চৌধুরী জানান, তিনি স্কুল ক্যাম্পাসে থাকেন। তাই খুব কাছ থেকে বিষয়টি দেখার সুযোগ হয়েছে। সকাল থেকে ওই লোকটি সড়কে বিশাল এক চিত্রকর্ম করেছেন। আর প্রকৃতি থেকে নিয়েছেন রং। মুখে কিছু বলছেন না। শুধু আপন মনে একে চলেছেন। তবে অপরিচিত এই মানুষটির প্রতিভায় তিনি অবাকও হয়েছেন।

ইকবাল চৌধুরী জানান, চল্লিশোর্ধ্ব এই ব্যক্তিটির স্বাভাবিক পরিচয় পাওয়া যায়নি। পরিচয় পাওয়া না গেলেও তার চিত্রকর্ম এবং হাতের লেখা দেখে অনুমান করা যায়, তিনি শিক্ষিত এবং ভদ্র গোছের মানুষ। শরীরের কাপড় চেষ্টা করেছেন গুছিয়ে রাখতে। মাথায় অল্প সাদাকালো চুল আর মুখে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি। কথাবার্তা মোটেই বলেন না। তবে মাঝে মধ্যে আনমনা হয়ে কিছু বলেন, যা বুঝার সাধ্য নেই।

(ঢাকাটাইমস/১৮অক্টোবর/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :