পাঁচ দিনমজুরের জামিন বহাল

প্রকাশ | ১৯ অক্টোবর ২০২১, ১৫:০৮ | আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২১, ১৫:৪৬

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

প্রতারক চক্রের ফাঁদে পড়ে কারাগারে থাকা কুড়িগ্রামের দিনমজুর বিধবা ফুলমনি রানি, রণজিৎ কুমার, প্রভাস চন্দ্র, কমল চন্দ্র রায় ও নিখিল চন্দ্র বর্মণকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন বহাল রাখা হয়েছে।

মঙ্গলবার চেম্বার বিচারপতি ওবায়দুল হাসান এ আদেশ দেন।

শুনানিতে আদালত বলেছেন, এরা তো কিছু জানে না। এই কৃষকরা ভিকটিম।

এর আগে হাইকোর্ট ওই পাঁচ দিনমজুরকে জামিন দেন হাইকোর্ট।

বুধবার তাদের জামিন আবেদনের শুনানি করে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মাদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ভার্চুয়াল বেঞ্চে এ আদেশ দেওয়া হয়।

আদেশের বিষয়টি ঢাকাটাইমসকে জানান শ্রমিকদের আইনজীবী মোহাম্মাদ শিশির মনির। তিনি বলেন, পাঁচ শ্রমিককে ১ বছরের জন্য জামিন দেওয়া হয়েছে। এর আগে গত রবিবার সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় শ্রমিকদের পক্ষে শিশির মনির জামিন আবেদন করেন।

এই পাঁচ শ্রমিক হলেন কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের নওদাবাঁশ গ্রামের বিধবা ফুলমনি রানী, রণজিৎ কুমার, প্রভাস চন্দ্র, কমল চন্দ্র রায় ও নিখিল চন্দ্র বর্মণ। এরও আগে গত ১৫ জুলাই একটি জাতীয় দৈনিকে ‘করোনা প্রণোদনার নামে প্রতারক চক্রের ফাঁদে পড়ে ৪ দিনমজুর কারাগারে’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতারণার মাধ্যমে সরকারি প্রায় আড়াই কোটি টাকা আত্মসাৎ চেষ্টার অভিযোগে দুই সরকারি কর্মকর্তাসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয় গাজীপুরের শ্রীপুরে। এর মধ্যে গাজীপুর থানা পুলিশ ২ জুলাই চার দিনমজুরকে তাদের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসে। আরেকজনের বিরুদ্ধে মামলা হলেও তিনি গ্রেপ্তার হননি। সরকারি ২ কোটি ৪৬ লাখ ৯ হাজার ৯৬০ টাকা আত্মসাতের চেষ্টার মামলায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

পাঁচ দিনমজুরের পরিবার বলছে, করোনা প্রণোদনা দেওয়ার কথা বলে তাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। টাকা আত্মসাতের সঙ্গে তারা জড়িত নন। দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে ফাঁসানো হয় তাদেরকে। এর আগে ১ জুলাই গাজীপুর জেলার শ্রীপুর থানায় মামলাটি করেন সোনালী ব্যাংকের শ্রীপুর হেডকোয়ার্টার শাখার ব্যবস্থাপক রেজাউল হক। এ মামলায় ওই চারজনসহ আসামি করা হয় শ্রীপুর উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা বজলুর রশিদ, হিসাবরক্ষণ অফিসের অডিটর আরিফুর রহমান, মাস্টাররোল কর্মচারী তানভীর ইসলাম স্বপন ও ঢাকার উত্তরখান জামতলা এলাকার বাসিন্দা শাহেনা আক্তারকে।

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার ধরলা নদীর পাড়ে বড়ভিটা ইউনিয়নের নওদাবাঁশ গ্রামের বাসিন্দা ওই পাঁচ পরিবার বলছে, তাদের ভাগ্যে এমন বিপদ নেমে এসেছে সরকারি টাকা আত্মসাতকারী একটি চক্রের প্রতারণার কারণে। বসতভিটার জমি ছাড়া তাদের নিজস্ব কোনো সম্পদ নেই বলে জানান।

বাড়ি ছাড়া দিনমজুর সুবল চন্দ্র মোহন্ত বলেন, তারা গাজীপুর ও শ্রীপুরে কোনো দিন যাননি। তানভীর ইসলাম স্বপনই তাদের নিয়ে গেছেন। তাদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে প্রণোদনা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলেছিলেন তিনি। তারা প্রণোদনার টাকার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এর মধ্যেই পুলিশ এসে চারজনকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। এসময় তিনি বাড়ির বাইরে ছিলেন।

সোনালী ব্যাংক নাগেশ্বরী শাখার ব্যবস্থাপক শরিফুল আজম বলেন, ব্যাংক হিসাব চালুর কিছুদিন পর এই পাঁচ দিনমজুরের হিসাব নম্বরে ২ কোটি ৪৬ লাখ ৯ হাজার ৯৬০ টাকা চলে আসে। এর মধ্যে রনজিতের সঞ্চয়ী হিসাবে ৪৮ লাখ ৪৫ হাজার ৭২০ টাকা, প্রবাসের ৬৫ লাখ ৭২ হাজার ১২০ টাকা, সুবলের ৪০ লাখ ৭১ হাজার ৭২০ টাকা, কমলের ৪২ লাখ ৪৯ হাজার ৮৮০ টাকা এবং ফুলমণি রানীর হিসাব নম্বরে ৪৮ লাখ ৭০ হাজার ৫২০ টাকা আসে।

কয়েক দিন পর অপরিচিত তিন-চারজন লোক এসব হিসাব নম্বর থেকে টাকা তুলতে এলে তার সন্দেহ হয় এবং শ্রীপুর হেডকোয়ার্টার শাখায় যোগাযোগ করে টাকা উত্তোলন বন্ধ করা হয়। কিন্তু অপরিচিত লোকগুলোকে আটক করার আগেই তারা ব্যাংক থেকে সরে যায় বলে জানান ব্যাংকের ব্যবস্থাপক শরিফুল আজম। হিসাব নম্বরধারী দিনমজুররা এসবের কোনো কিছুই জানতেন না বলে জানান তিনি।

(ঢাকাটাইমস/১৯অক্টোবর/এআইএম/কেআর)