সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় জড়িতদের শাস্তি দাবি ঢাবি শিক্ষার্থীদের

ঢাবি প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২০ অক্টোবর ২০২১, ১৩:৩৪

দেশজুড়ে চলমান সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় দোষীদের গ্রেপ্তার করে দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে বিচারসহ তিন দফা দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (ডুজা) কক্ষে বুধবার বেলা ১২টায় এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সম্মেলনে গত ১৩ অক্টোবর শারদীয় দুর্গোৎসবের মহাষ্টমীর দিন কুমিল্লা থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম, খুলনা, নোয়াখালী, ফেনী, চাঁদপুর, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি রংপুর, গাইবান্ধা, পঞ্চগড়, দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সাম্প্রদায়িক হামলার নিন্দা করে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানানো হয়। ৩১ অক্টোবরের মধ্যে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে ১ নভেম্বর থেকে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।

সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠকালে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র হিসেবে জয়দীপ দত্ত বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অসাম্প্রদায়িকতাকে ভিত্তি করে বাংলাদেশের পথচলা হলেও স্বাধীনতার পর থেকেই দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে পাকিস্তানি ভাবাধারাপুষ্ট মৌলবাদী ও উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী বারবার বাংলাদেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ অন্যান্য সংখ্যালঘুদের উপর হামলা, নির্যাতন, লুট, খুন এবং অরাজকতা সৃষ্টি করেছে।

তিনি বলেন, আগেও বহুবার এদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হয়েছে। গত ১৩ অক্টোবর দুর্গোৎসবের মহাষ্টমীর দিন কুমিল্লা থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম, খুলনা, নোয়াখালী, ফেনী, চাঁদপুর, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি রংপুর, গাইবান্ধা, পঞ্চগড়, দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মন্দিরে হামলা, প্রতিমা ভাঙচুর, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বসতবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাট এবং পরবর্তীতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া ও হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এসব হামলা, লুট ও হত্যা প্রতিহত করতে ব্যর্থ প্রশাসন কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারে না। সারাদেশে এখনও বিভিন্ন জায়গায় হামলার পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা চলছে। ফলে দেশের সংখ্যালঘুরা অত্যন্ত নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী সাম্প্রদায়িক হামলায় আহত পরিবারগুলোকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন বলে আমরা জেনেছি। দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক সংঘাতে লিপ্ত অনেক দুর্বৃত্তকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও এবিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দিয়েছেন।

জয়দীপ দত্ত আরও বলেন, আমরা আশাবাদী হলেও আত্মতুষ্টিতে ভুগতে রাজি নই। দেশের সার্বিক পরিস্থিতির প্রতি আমরা সার্বক্ষণিক নজর রাখছি। আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, যদি আবারও দেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা সৃষ্টি হয় তবে আমরা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে রাজপথে নামবো এবং দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আরও কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো।

তিনি বলেন, জনদুর্ভোগ কমাতে আমরা আপাতত আমাদের অবরোধ কর্মসূচি স্থগিত করছি। তবে দাবিগুলো বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমরা নিয়মতান্ত্রিক সংগ্রাম চালিয়ে যাবো। আমরা গণমাধ্যমে দেখেছি গতকালও চাঁদপুর ও গাইবান্ধায় সাম্প্রদায়িক হামলা হয়েছে। আগামী ৩১ তারিখ পর্যন্ত সরকার ও প্রশাসনের ওপর আস্থা রেখে নজরদারি করছি। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া না হলে ১ নভেম্বর থেকে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ একত্রিত হয়ে রাজপথে নেমে দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তুলতে বাধ্য হবো।

এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে গত ১৮ অক্টোবর শাহবাগে সাম্প্রদায়িক হামলার বিরুদ্ধে অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ ও প্রশাসনের কাছে ৭ দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়। এছাড়াও ১৯ অক্টোবর রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।

শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি

১. দোষীদের গ্রেপ্তার ও দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে বিচার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

২) ক্ষতিগ্রস্ত মন্দির, বসতবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সংস্কারে প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং হামলায় আহত ও নিহতদের পরিবারগুলোকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে।

৩) সংখ্যালঘু কমিশন ও সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠন এবং হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে ফাউন্ডেশনে উন্নীত করে জাতীয় বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ প্রদান করতে হবে।

(ঢাকাটাইমস/২০অক্টোবর/আরএল/কেআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

শিক্ষা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :