সামিয়া রহমানের গবেষণা জালিয়াতি সংক্রান্ত সব নথি হাইকোর্টে

প্রকাশ | ২১ অক্টোবর ২০২১, ১৬:২৫ | আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২১, ১৬:২৭

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
ফাইল ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগের শিক্ষক সামিয়া রহমানের গবেষণা জালিয়াতি সংক্রান্ত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনসহ যাবতীয় নথি হাইকোর্টে এসেছে। আগামী রবিবার হাইকোর্টে এ বিষয়ে শুনানি হবে।

বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে শুনানির জন্য দিন নির্ধারণ ছিল। রিটকারী সামিয়া রহমানের আইনজীবীর আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ ‘নট টুডে’ (শুনানি আজ নয়) বলে আদেশ দেন।

আদালতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে শুনানি করেন নাঈম আহমেদ। অপরদিকে সামিয়া রহমানের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার হাসান এম এস আজিম।

আদালত থেকে বেরিয়ে আইনজীবী নাঈম আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, জালিয়াতির অভিযোগ ওঠা ওই গবেষণা নিবন্ধের রিভিউ, জালিয়াতি অনুসন্ধানকারী কমিটির প্রতিবেদন ও জালিয়াতির শাস্তি নির্ধারণে গঠিত ট্রাইব্যুনালের সুপারিশ প্রতিবেদন আকারে হাইকোর্টে এফিডেভিট করেছি। আগামী রবিবার এটা শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসবে।

এর আগে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে সামিয়া রহমান ও সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজানের যৌথভাবে লেখা ‘এ নিউ ডাইমেনশন অব কলোনিয়ালিজম অ্যান্ড পপ কালচার: এ কেস স্ট্যাডি অব দ্য কালচারাল ইমপেরিয়ালিজম’ শিরোনামের আট পৃষ্ঠার একটি গবেষণা প্রবন্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সোশ্যাল সায়েন্স রিভিউ’ জার্নালে প্রকাশিত হয়। এটি ১৯৮২ সালের শিকাগো ইউনিভার্সিটির জার্নাল ‘ক্রিটিক্যাল ইনকোয়ারি’তে প্রকাশিত ফরাসি দার্শনিক মিশেল ফুকোর ‘দ্য সাবজেক্ট অ্যান্ড পাওয়ার’ নামের একটি নিবন্ধ থেকে প্রায় পাঁচ পৃষ্ঠা হুবহু নকল বলে অভিযোগ ওঠে।

২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে এক লিখিত অভিযোগের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এই চুরির কথা জানিয়েছিল ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো প্রেস। শুধু মিশেল ফুকোই নন, বুদ্ধিজীবী এডওয়ার্ড সাঈদের ‘কালচার অ্যান্ড ইমপেরিয়ালিজম’ গ্রন্থের পাতার পর পাতাও সামিয়া ও মারজান হুবহু নকল করেন বলে অভিযোগ ওঠে।

ওই ঘটনায় ওই সময়ের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরিন আহমেদকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট। এরপর ওই কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়। এতে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গত ২৯ অক্টোবর তাদের একাডেমিক অপরাধের শাস্তির সুপারিশ করতে আইন অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন ও সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক মো. রহমত উল্লাহকে আহ্বায়ক করে একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়।

ট্রাইব্যুনাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে শাস্তির বিষয়ে সুপারিশ জমা দিলে গত ২৮ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গবেষণায় জালিয়াতির শাস্তি হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিয়া রহমানের পদাবনমন (ডিমোশন) ঘটে।

এছাড়া পিএইচডি থিসিসে জালিয়াতির আরেক ঘটনায় ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষক ওমর ফারুককে সহকারী অধ্যাপক থেকে প্রভাষক পদে অবনমন ঘটানো হয়েছে। তার ডিগ্রিও বাতিল করা হয়।

গত ৩১ আগস্ট পদাবনতি বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন সামিয়া রহমান। গত ৫ সেপ্টেম্বর সামিয়া রহমানকে পদাবনতি দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি সামিয়া রহমানের গবেষণা জালিয়াতি সংক্রান্ত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট, গঠিত ট্রাইব্যুনালের নথিসহ সব কাগজপত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে বলা হয়।

ঢাকাটাইমস/২১অক্টোবর/এআইএম/এমআর