আদি বুড়িগঙ্গা উদ্ধারে অভিযানে নামছে বিআইডব্লিউটিএ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০২১, ২১:০৯ | প্রকাশিত : ২১ অক্টোবর ২০২১, ১৯:৫৩

আদি বুড়িগঙ্গা উদ্ধারে দুই দিনের অভিযানে নামছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। আগামী রবিবার ও সোমবার নদী তীরবর্তী অবৈধ স্থাপনা উদ্ধারে অভিযান চালাবে সংস্থাটি।

বৃহস্পতিবার বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক ও ঢাকা নদী বন্দর কর্মকর্তা গুলজার আহমেদ ঢাকাটাইমসে এই তথ্য জানিয়েছেন।

গুলজার আহমেদ জানান, দ্বিতীয় আদি বুড়িগঙ্গা উদ্ধারে রবিবার ও সোমবার অভিযান পরিচালনা করবে বিআইডব্লিউটিএ। অভিযানে আদি বুড়িগঙ্গা দখল করে যেসব অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে তা উচ্ছেদ করা হবে।

আদালতের আদেশের প্রেক্ষিতে ঢাকা নদীবন্দরের চার নদী বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু নদী ও শীতলক্ষ্যার তীরে অভিযান পরিচালনা করছে বিআইডব্লিউটিএ।

২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারি থেকে ঢাকা নদী বন্দরের খোলামুড়া ঘাট এলাকা থেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে সংস্থাটি। এক বছরের সাড়ে সাত হাজারের বেশি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে। এর মধ্যে বিটিসিএল’র স্থাপনা, ঢাকা-৭ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য হাজী মো. সেলিমের একাধিক স্থাপনা, ঢাকা-১৪ আসনের সাবেক সাংসদ আসলামুল হকের বিদ্যুৎ কেন্দ্র, দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজলের বাড়ি উচ্ছেদ করে সংস্থাটি।

এছাড়া নদী দখল করে প্রভাবশালী ডেভলপার্স প্রতিষ্ঠান আমিন মোমেন হাউজিং একটি এলাকা গড়েছিল। সে জায়গা উচ্ছেদ করে সেখানে পুনরায় পানির প্রবাহ ফিরিয়ে আনে বিআইডব্লিউটিএ। এছাড়া উচ্ছেদ অভিযানে স্থানীয় প্রভাবশালীদের স্থাপনা, রাজনৈতিক কার্যালয়সহ বিভিন্ন ধরণের আবাসিক ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

ঢাকার চার নদী উদ্ধারের পর এর তীর ঘেঁষে যেসব উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়ার কথা, তা ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে। কোভিড-১৯ এর প্রভাবে নানা কাজে ব্যাঘাত ঘটলেও ঢাকা নদী বন্দরের উন্নয়ন কার্যক্রম থেমে থাকেনি। তুরাগ নদে ঢাকা উদ্যান, চন্দ্রিমা হাউজিং অংশে এরইমধ্যে ওয়াকওয়ে নির্মাণ হয়েছে। যেখানে এখন প্রতিদিনই নগরবাসীর ঢল নামে। চলতি মাসেই বুড়িগঙ্গা নদীর কামরাঙ্গীর চর ও আশপাশের এলাকায় ওয়াকওয়ে নির্মাণ কাজ শুরু হচ্ছে। যা তুরাগে নির্মিত ওয়াকওয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে।

আদি বুড়িগঙ্গার বর্তমান অবস্থা

সরেজমিনে দেখা যায়, বেড়িবাঁধ সিকসনের (হাতির ঘাট) বিপরীতে কামরাঙ্গীর চরের রনি মার্কেট এলাকা। বেড়িবাঁধ থেকে চরে ঢুকতে হয় ছোট একটি সেতু পার হয়ে। প্রায় ৫০ ফুট দীর্ঘ সেতুর নিচে তাকালে এখন আর পানির প্রবাহ দেখা যায় না। এমনকি সেতু থেকে দুই পাশে তাকালে কোথাও পানির প্রবাহ দেখা যায়নি। বরং পানিপ্রবাহের বদলে সেখানে জমে আছে ময়লার বিশাল স্তূপ।

কামরাঙ্গীরচরের মুসলিমবাগ থেকে রায়েরবাজার পর্যন্ত আদি বুড়িগঙ্গা। প্রায় সাড়ে সাত কিলোমিটার দীর্ঘ এই চ্যানেলটির দুই পাশে রয়েছে কয়েক হাজার অবৈধ স্থাপনা। দখল করে রেখেছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। দীর্ঘ সময় ধরে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর হস্তক্ষেপ না থাকায় আদি বুড়িগঙ্গার ওপর গড়ে উঠেছে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বহুতল ভবন।

বেড়িবাঁধ ইসলামবাগ থেকে কোম্পানিঘাট পর্যন্ত বেড়িবাঁধের পাড় ঘেঁষে দেখা গেছে বিপুল অবৈধ স্থাপনা। এর মধ্যে রয়েছে পাকা, আধাপাকা ও টিনের ঘর, রিকশার গ্যারেজ, ট্রাক স্ট্যান্ড, ট্রেম্পু স্ট্যান্ড, বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কারখানা। রয়েছে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানও।

দখল-দূষণের পেছনে কারা?

স্থানীয় সূত্র জানায়, বেড়িবাঁধের সড়ক ও কামরাঙ্গীরচরের দুই পাশ থেকে ময়লা ফেলে আদি বুড়িগঙ্গা ভরাট করা হয়। ময়লা ফেলে ভরাটের পর সে অংশে গড়ে তোলা হয় রিকশার গ্যারেজ বা কাঁচা স্থাপনা। রনি মার্কেট অংশে খালের উপর গড়ে উঠেছে মার্কেটের বর্ধিতাংশ, পাকা স্থাপনা। দিনের পর দিন ময়লা ফেলে বেড়িবাঁধ অংশের সঙ্গে গড়ে তোলা হয়েছে বিশালাকার টেম্পুস্ট্যান্ড। কিছুটা পশ্চিম দিকে আদি বুড়িগঙ্গার ওপর গড়ে তোলা হয়েছে ট্রাকস্ট্যান্ড, দোকান ও বসতবাড়ি।

কোম্পানিঘাট এলাকায় খালের ওপর কায়দা করে একটি মসজিদ নির্মাণ করেছে মেটাডোর কোম্পানি। মসজিদ বরাবর আদি বুড়িগঙ্গা দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে কোম্পানিটির কারখানা। মেটাডোরের পাশে থাকা পান্না ব্যাটারিও দখল করে আছে আদি বুড়িগঙ্গা। কোম্পানি দুটির বিপরীত পাশে রয়েছে স্থানীয়দের আরও অনেক অবৈধ স্থাপনা।

কামরাঙ্গীরচরের পরে হাজারীবাগ, ঝাউচর, বউবাজার ও রায়েরবাজার অংশে আদি বুড়িগঙ্গার দেখা মেলে নামমাত্র। দুই পাড়ের বসতবাড়ি, বাজার ও কারখানা থেকে সব বর্জ্য ফেলে হচ্ছে জলাধারে। ফলে পানির প্রবাহের জায়গা ময়লার বিশাল স্তূপ গড়ে উঠেছে। ভাসমান এ ময়লার স্তূপ এতটাই পুরু হয়েছে যে- এর ওপর দিয়ে মানুষ চলাচল করতে পারে। নিচে পানির প্রবাহ রয়েছে তা নিশ্চিত হতে অন্তত এক ফুট পরিমাণ ময়লা সরাতে হবে।

ঢাকাটাইমস/২১অক্টোবর/কারই/এমআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :