কুমিল্লায় কোরআন অবমাননা: সেই ইকবাল আটক

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০২১, ০০:২১ | প্রকাশিত : ২১ অক্টোবর ২০২১, ২৩:১৪

কুমিল্লার নানুয়াদীঘির পাড়ে একটি পূজামণ্ডপে কোরআন শরীফ অবমাননার অভিযোগে প্রধান অভিযুক্ত ইকবাল সন্দেহে একজনকে আটক করেছে পুলিশ। তাকে কক্সবাজার থেকে আটক করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজারের কলাতলীর সুগন্ধা পয়েন্ট থেকে তাকে আটক করা হয় বলে ঢাকাটাইমসকে জানান চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, আটক ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত করতে যাচাই-বাছাই চলছে।

গত ১৩ অক্টোবর কুমিল্লার একটি পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন পাওয়া যাওয়ার ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এসময় জেলার কয়েকটি পূজামণ্ডপ ভাংচুর করে দুর্বৃত্তরা। এই ঘটনার জেরে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে স্থানীয় জনতার সংঘর্ষে চারজন মারা যান। এ সময় হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলার ঘটনা ঘটে। এছাড়া ১৫ অক্টোবর নোয়াখালীর বেগমগঞ্জেও হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় একজন নিহত হন। সবশেষ রবিবার রাতে রংপুরের পীরগঞ্জে হিন্দু পল্লীতে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এই ঘটনাগুলোর প্রধান উস্কানি দাতাদের বের করতে মাঠে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

যেভাবে মসজিদ থেকে নিয়ে মণ্ডপে কোরআন রাখেন ইকবাল

সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১২ অক্টোবর রাত ১০টা ৩৮ মিনিটে মসজিদে প্রবেশ করতে দেখা যায় মাজারের খাদেম ফয়সাল ও হাফেজ হুমায়ুনকে। এরপর রাত ১০টা ৫৮ মিনিটে মসজিদে প্রবেশ করেন ইকবাল। এসময় খাদেম ফয়সাল ও হাফেজ হুমায়ুন ইকবালের সঙ্গে কথা বলতেও দেখা যায়। ঠিক রাত ১১টায় তারা তিনজনই সেখান থেকে বেরিয়ে যান।

এরপর ১২ অক্টোবর দিনগত রাত ২টা ১২ মিনিটের দিকে পুনরায় মসজিদে প্রবেশ করে কোরআন নিতে দেখা যায় ইকবালকে। এসময় পাশেই অজ্ঞাতপরিচয় একজন ঘুমিয়ে ছিলেন, আরেকজন ছিলেন নামাজরত অবস্থায়। এর দুই মিনিট পর মেঝেতে কোরআন রেখে তাকে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়। এরপর রাত ২টা ১৮ মিনিটে মসজিদে আবারও প্রবেশ করে মেঝেতে রাখা কোরআন নিয়ে মসজিদ থেকে বের হতে দেখা যায় তাকে। এরপর মসজিদ থেকে বের হয়ে তাকে মূল সড়কে উঠে মন্দিরের দিকে হেঁটে যেতে দেখা যায়।

আরেকটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ইকবাল পূজামণ্ডপের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। পূজামণ্ডপের রোড থেকে জগন্নাথ মন্দির রোডের দিকে এগিয়ে যান। এরপর তিনি জগন্নাথ মন্দির রোড থেকে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক চকবাজার শাখার দিকে এগিয়ে যান। পূবালী ব্যাংক মোড়ের পাশের গলিতে প্রবেশ করেন তিনি। সেখানে অবস্থান করে নৈশপ্রহরীদের সঙ্গে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে কথা বলতে দেখা যায় তাকে। সর্বক্ষণই তার হাতে কোরআন দেখা যাচ্ছিল। কথাবার্তার পরে তাকে জগন্নাথ মন্দিরের দিকে যেতে দেখা যায়। সেই রোডে কিছুক্ষণ অবস্থানের পর পূজামণ্ডপের দিকে এগিয়ে যান ইকবাল। রাত ৩টা ১২ মিনিটে দেখা যায় তার হাতে কোরআন শরিফ নেই। তিনি এসময় গদা কাঁধে নিয়ে মন্দিরের পাশে পুকুরপাড়ের রাস্তায় হাঁটাহাঁটি করছিলেন। এসময় তিনি চারপাশে তাকিয়ে দেখছিলেন কেউ তাকে দেখছে কি না।

চিহ্নিত ব্যক্তির প্রস্থানের একটু পরে রাত ৩টা ১৩ মিনিটের দিকে ৯৯৯ এ কল দেওয়া একরামকে সেখানে দেখা যায়। এরপর তাকে আবার ৩টা ২৩ মিনিটের দিকে দারোগাবাড়ি মসজিদে প্রবেশ করতে দেখা যায়। এসময় তার কাছে কোরআন কিংবা গদা কিছুই দেখা যায়নি। এরপর ১৩ অক্টোবর পুকুরপাড়ে উত্তেজিত জনতার সামনে তাকে কথা বলতে দেখা যায়।

কুমিল্লার পূজামণ্ডপে কোরআন অবমাননার এ ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় সহিংসতা হয়। এই ঘটনায় পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে ১৯ অক্টোবর একটি ভিডিও ছড়ানো হয়। ভিডিওটি জমিজমা বিরোধে গত ১৬ মে রাজধানীর পল্লবীতে দুর্বৃত্তদের হাতে মো. সাহিনুদ্দিন হত্যার। সেসময় কেউ একজন তা ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দিয়েছিলেন। ঘটনার পরই আইনশৃঙ্খলাবাহিনী হত্যায় অভিযুক্ত প্রায় সকল আসামিকেই গ্রেপ্তার করে।

পরবর্তীতে ভিডিওটি ‘নোয়াখালীর হিন্দু মহাজোট কর্মী যতন শাহ হত্যাকাণ্ডের’ ভিডিও বলে গুজব ছড়ানো হয়। যা কলকাতা থেকে দেবদৃতা ভৌমিক নামে একজন ভারতীয় নাগরিক সর্বপ্রথম ফেসবুক মেসেঞ্জারে ছড়িয়ে দেন। তাছাড়া দেবদাস মন্ডল নামে আরও এক ব্যক্তি কলকাতা থেকেই টুইটারে ভিডিওটি আপলোড দেন। ভিডিওর ক্যাপশনে দেবদাস লিখেছিলেন, ‘বাংলাদেশের নোয়াখালীর পূজামণ্ডপে হিন্দু মহাজোট কর্মী যতন সাহা হত্যার ভিডিও ফুটেজ। দোষীদের এখনো গ্রেপ্তার করা হইতেছে না কেন?’

এদিকে, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক রুমা সরকারের এই ভিডিও ফেসবুকে শেয়ার দেন। পরবর্তীতে ফেসবুক লাইভে এসে রাষ্ট্রবিরোধী বিভিন্ন কথা বলেন এবং উস্কানিমূলক তথ্য ছড়ান। এতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হতে পারে আশঙ্কা দেখা দেওয়ায় র‌্যাব তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেয়।

পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ধর্মীয় উস্কানিমূলক ভুয়া ভিডিও ছড়ানোর অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে র‍্যাব। বৃহস্পতিবার সকালে এলিট ফোর্স র‌্যাব বাদী হয়ে মামলাটি করে।

ঢাকাটাইমস/২১অক্টোবর/এসএস/ইএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :