আ.লীগ থেকে ছিটকে পড়লেন সেই তাহের

প্রকাশ | ২২ অক্টোবর ২০২১, ২০:০৪ | আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০২১, ২০:০৭

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

লক্ষ্মীপুরের রাজনীতির কথা উঠলেই নাম আসে আবু তাহেরের। স্থানীয় পর্যায়ের ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন তিনি। তার ক্ষমতার কাছে পরাভূত ও নির্যাতিত স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। বাবার ক্ষমতার বলে কারাগারে বসে বিয়ে করেন তাহেরপুত্র। সেই তাহের এবার পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন থেকে ছিটকে পড়লেন। দুবার আওয়ামী লীগের মনোনয়নে মেয়র হওয়া তাহেরের বদলে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে মোজাম্মেল হায়দার মাসুম ভুঞাকে। মোজাম্মেল জেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক।

বৃহস্পতিবার গণভবনে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে দলের লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের এক সভায় লক্ষ্মীপুরসহ নয়টি পৌরসভার দলের প্রার্থী নির্বাচন করা হয়। সেখানে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার মেয়র পদে মনোনয়ন পাওয়া থেকে বাদ পড়েন দুবারের মেয়র আবু তাহের।

নির্বাচনে মনোনয়ন না পাওয়ার মধ্য দিয়ে কি লক্ষ্মীপুরে তাহের যুগের শেষ হতে চলেছে?

১৯৯৬ সাল থেকে দেশব্যাপী আলোচনায় তিনি। পৌর মেয়র হওয়ার পর ক্ষমতা ও সম্পদে ফুলে ফেপে উঠেছেন তিনি। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ক্ষমতা দখল করেছেন তার পরিবারের সদস্যরা। বিশেষ করে তার ছেলেদের দখলে রয়েছে পুরো জেলা। স্থানীয় মাদক বাণিজ্য, রাজনৈতিক পদ বাণিজ্য, চাঁদাবাজী, দখল থেকে শুরু করে স্থানীয় সকল পর্যায় থেকে মোটা অংকের আয় রয়েছে তাহের পরিবারের। পাশাপাশি দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর প্রভাব বিস্তার করে রয়েছেন তিনি।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী ক্ষমতা আসার পর আবু তাহের লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ও লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও আইনজীবী নুরুল ইসলাম হত্যার ঘটনায় কারণে তিনি সারা দেশে আলোচনা আসেন।

সে সময় থেকে তাহের পরিবারের সন্ত্রাস, অস্ত্রের ঝনঝনানি ও ক্যাডার বাহিনী তৈরির মধ্য দিয়ে লক্ষ্মীপুরে খুনের রাজনীতি শুরু হয়। তাহেরের বড় ছেলে বিপ্লবের নেতৃত্বে গ্রামগঞ্জে বেশ কয়েকটি অস্ত্রধারী ক্যাডার বাহিনী তৈরি করা হয়। বশিকপুর ইউনিয়নের জেহাদী বাহিনী, দত্তপাড়ার নুর হোসেন শামীম বাহিনী, হাজিরপাড়া ইউনিয়নের মুন্না বাহিনী চলত বিপ্লবের নির্দেশে। বিপ্লব ও তার এসব বাহিনীর হাতে যুবলীগ কর্মী কামাল হোসেন, বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলামসহ বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

সম্প্রতি পৌরসভায় গৃহকর অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি করায় তাহেরের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়ে। প্রতিবাদে গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর লক্ষ্মীপুর প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করা হয়। এতে স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন।

এর জেরে তৃণমূল থেকে আবু তাহেরের নাম বাদ দিয়ে গত ১০ ডিসেম্বর ১০ জন নেতার নাম কেন্দ্রে জমা দেয় জেলা আওয়ামী লীগ। ওই দিন তাহেরকে পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে মনোনয়ন না দেওয়ার অনুরোধ করে দলের সভাপতির কাছে একটি চিঠিও দেন আওয়ামী লীগের নেতারা। সাবেক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী ও লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের সাংসদ এ কে এম শাহ জাহান কামাল ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক ও সাধারণ সম্পাদক নুরউদ্দীন চৌধুরীসহ চারজন নেতা স্বাক্ষর করেন এই চিঠিতে।

গত সেপ্টেম্বরে লক্ষ্মীপুরে জেলা যুবলীগের বর্ধিত সভা ও পৃথক শোডাউন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে স্থানীয় যুবলীগের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে তাহের সমর্থিতদের। দুই পক্ষের সংঘর্ষের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হন।

এ ঘটনায় তোপের মুখে একঘরে হয়ে পড়েন তাহের পরিবার। তাহের পরিবারের অন্যতম সদস্য তাহেরের ছেলে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান, জেলা যুবলীগের সভাপতি এ কে এম সালাউদ্দিন টিপু। তাকে ঘিরেও জেলাজুড়ে রয়েছে বিতর্ক ও আলোচনা-সমালোচনা।

মাদক ব্যবসা, টেন্ডারবাজি, পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজি, দখল বাণিজ্য, উন্নয়নের নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়াসহ অস্ত্র ও সন্ত্রাসী বাহিনী দ্বারা লক্ষ্মীপুরবাসীকে জিম্মি করে রাখার অভিযোগ আছে তাহের পরিবারের বিরুদ্ধে। জেলাজুড়ে মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ করছেন তাহেরের ছোট ছেলে শিবলু।

(ঢাকাটাইমস/২২অক্টোবর/কারই/মোআ)