মায়ের আঁচলে অবাক পৃথিবী এক

প্রকাশ | ২২ অক্টোবর ২০২১, ২০:১৬

রফিকুল ইসলাম

'কোথায় স্বর্গ? কোথায় নরক? কে বলে তা বহুদূর?/মানুষেরি মাঝে স্বর্গ-নরক, মানুষেতেই সুরাসুর।'

গত ২০ অক্টোবর বুধবার দিনটি ছিল ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) বা ইসলাম ধর্মের মহানবীর (সা.) পবিত্র জন্মদিন। এদিন ঢাকা থেকে প্রকাশিত মূলধারার গণমাধ্যম 'ঢাকা টাইমস' নিউজ পোর্টালে একটি রিপোর্টে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে - কাঁদিয়েছে। সংবাদ শিরোনাম ছিল- 'বৃদ্ধ মাকে রাস্তায় ফেলে গেল সন্তানেরা, এগিয়ে এলো এলাকাবাসী'। অতি সম্প্রতি এ ধরনের ট্রাজেডি গৌণ-গণমাধ্যম ও মূলধারার গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার হচ্ছে। নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের অভাবে সামাজিক নিদারুণ এ অবক্ষয় প্রকট হয়ে উঠেছে। এক্ষেত্রে ব্রিটিশ-ভারতীয় সাহিত্যিক শেখ ফজলুল করিমের লেখা 'স্বর্গ ও নরক' কবিতার কয়েকটি পঙক্তি শঙ্কিত মনে আলোড়িত হয়। বৃদ্ধার নিরন্তর প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত ছয় ছেলে ও দুই মেয়ে মায়ের নামে লেখা ১৫ বিঘা জমি সন্তানদের লিখে না দেওয়ায় এ পরিণতি হয়েছে বলে 'ঢাকা টাইমস'র সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধির কাছে অনুযোগকারী এলকাবাসী, যারা শতবর্ষী বৃদ্ধ মা'কে উদ্ধার করেন।

কবিতার বাকি অংশটুকুও এখানে না পাড়লেই নয়। লেখক লিখেছেন- 'রিপুর তাড়নে যখনই মোদের বিবেক পায় গো লয়/আত্মগ্লানির নরক-অনলে তখনি পুড়িতে হয়।/প্রীতি ও প্রেমের পূণ্য বাঁধন যবে মিলি পরস্পরে/স্বর্গ আসিয়া দাঁড়ায় তখন আমাদেরি কুঁড়ে ঘরে।'

অপার্থিব জগতে স্বর্গ ও নরকের অস্তিত্ব কল্পনা ও বিশ্বাস করা হলেও আদতে স্বর্গ ও নরকের অবস্থান মানুষের মাঝেই। পুণ্যবান বাস করে স্বর্গে, ভোগ করে অনন্ত সুখসম্ভোগ। আর পাপাচারীরা বাস করে নরকে, ভোগ করে কঠিন শাস্তি। কিন্তু এ জগতেই আমরা এই স্বর্গ-নরকের উপস্থিতি প্রত্যক্ষ করে থাকি প্রতিনিয়ত। ধর্মে মা-বাবা'ই স্বর্গ। তথাপি বিবেকবর্জিত মানুষগুলা পৃথিবীটাকেও নরক বানিয়ে ছেড়েছে।

নারী সৃষ্টির প্রতীক। নারীর শরীর থেকে নতুন প্রাণ জন্ম নেয়। নারী ধারক আর পুরুষ বাহক। মা দিবস ও বাবা দিবস মহাসমারোহে পালিত হয় বিশ্বজুড়ে। আমাদের দেশেও। এমনি আদিখ্যেতায় বেড়েও উঠছে বৃদ্ধাশ্রম। বৃদ্ধাশ্রম থেকে ধরে এনে সেলফি তুলে মা দিবস ও বাবা দিবস পালনের আধিপত্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় বয়ে যায়। হয়ত ঢাকা টাইমস'র রিপোর্টের ভুক্তভোগী বৃদ্ধ মা মরিয়ম বেগমও সেলফিতে উঠে আসবেন সেদিন। বাস্তবিকপক্ষে দিবসগুলোর বিশেষত্ব প্রচারে গণমাধ্যমও উদারনীতি অনুসরণ করে থাকে বটে। যেহেতু মা-বাবার সম্মান সকল ধর্মেই উল্লেখ করা হয়েছে বারবার। বিশেষত মা সন্তান লাভের পর নারী তার রমণীমূর্তি পরিত্যাগ করে মহীয়সী মাতৃরূপে সংসারের অধ্যক্ষতা করেন। মা সন্তানের আবেগ, অনুভূতি, উপলব্ধি এক কথায় আমৃত্যু অস্তিত্বজুড়ে থাকেন। মা দিবস বাবা দিবস আসলে পৃথিবীর তাবৎ মা-,বাবায়েদের সম্মান জানানোর একটি আনুষ্ঠানিক দিন মাত্র। মা-বাবার প্রতি সম্মান দেখানো দরকার সদাসর্বদা, পুরো অন্তরজুড়ে; যা মান্যতার ক্ষেত্রে আবশ্যিক নির্দেশনা রয়েছে পবিত্র ধর্ম গ্রন্থগুলোতে।

মা-বাবাকে অবজ্ঞাকারী ব্যক্তি এবং বৃদ্ধাশ্রমকে 'আই হেটস্' দীক্ষায় উদ্বুদ্ধকরণে লেখাটির অবতারণা। স্রেফ ব্যক্তিগত পাঁচালি তুচ্ছে প্রকাশের ক্ষেত্রে উচ্ছিষ্ট হবে না নিশ্চয়। বিবেচিত হোক 'যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখো তাই, পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন' মাহাত্ম্যে। সরকার তা রোধকল্পে এগিয়ে এসেছে আইন করে, এখন ব্যক্তি ও সমাজ এগিয়ে আসলেই নৈতিকতা ফিরে পেয়ে এগোবে মানবজাতি।

'আমি ভীষণ ভালোবাসতাম মা-কে/কখনো মুখ ফুটে বলিনি।/আমার ভালোবাসার কথা /মা-কে কখনো মুখ ফুটে বলতে পারিনি।/কেমন করে তোমাকে আমি বলি... '

গত বছর ২ অক্টোবর পরলোকগত হন আমার মা। কবর দেওয়া পর্যন্ত ভেঙে পড়িনি, না বিচলিত; কাঁদিওনি এতটুকুন। বরং শিয়রে ভাই-বোনসহ সবাইর ঢুকরে বুকফাটা কান্না ঠেকাতে কী পাষাণ আর নিষ্ঠুরতাই দেখিয়েছি। কেঁদে বাতাস ভারী করব কি! উল্টো ছিল উচ্চকিত কণ্ঠ। বড়দের উপরও ছিল খবরদারি। সুরা পবিত্র কালামুল্লাহ পড়ার এক অঘোষিত হুকুম চালিয়ে মৃত্যুপথযাত্রী মমতাময়ী মায়ের কানের কাছে মুখ নিয়ে শ্বাসরুদ্ধকর নিরন্তর চেষ্টা ছিল, যেন মহামন্ত্রজ্ঞ পবিত্র কালিমাতুস শাহাদাহ নসিব হয়।

জন্মের মৃত্যু অবিনশ্বর। 'মৃত্যুই অনিবার্য পরিণতি' জেনেও প্রেক্ষাপট নিয়ে সন্দিহানে পেয়ে বসে বিচ্ছিন্ন ভাবনা। পারিবারিক কবরস্থান, যেখানে বাবা শায়িত; তা বর্ষায় হাওরের অথৈ জলরাশীর তলে নিমজ্জিত। শরিয়তের দৃষ্টিতে মানবজাতির সৃষ্টিলগ্নেই নির্ধারিত থাকে ব্যক্তির জন্ম, মৃত্যু ও কবরস্থান। নিয়তিতে বাবার সাথে কবর স্থিরীকৃত থাকলে তো বর্ষা মৌসুমে মারা যাবার কথা নয়। মনে আশা জাগে বাবার মৃত্যুর পরিপ্রেক্ষিতকে ঘিরে। বাবার মৃত্যুকালীন শয়নশিয়র উত্তরমুখীর করার পরও ফের প্রাণ পেয়ে সুস্থ শরীরে সকলের মাঝে বেঁচে ছিলেন বর্ষা মৌসুম হতে শুকনা মৌসুম পর্যন্ত। বাঁধভাঙা বিচ্ছিন্ন ভাবনা আছড়ে পড়ে মন ভারী করে তুলছিল তখন।

'বড়বাড়ি'র (নানার বাড়ি) কবরস্থানটি এখনো জাগানো। কিশোরগঞ্জ জেলা পরিষদের দু'বারের চেয়ারম্যান সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট মো. জিল্লুর রহমান ও কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের তিনবারের নির্বাচিত এমপি রাষ্ট্রপতিপুত্র প্রকৌশলী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিকের বদান্যতায় মিঠামইনের ধলাই-বগাদিয়া বাগে জান্নাত কবরস্থানের সাথে সংযুক্তিতে উঁচু করে মাটি ফেলায় জলরাশীর ওপর জেগে রয়েছে ভাবতেই শঙ্কা কুঁকড়ে ভেঙে খানখান হয় উত্তাল হৃদয়। মা'র ক্ষেত্রে অন্যতা হলে তো মা-কে হারাবো! তাহলে কি মা নশ্বর এই পৃথিবীতে আর রইবেন না! আজ তো জুম্মাবার। মানে শুক্রবার। শরিয়তে দিনটি তাৎপর্যময়। ওইদিন কেউ মারা গেলে গোরাযাব বা কবরের শাস্তি হয় না - এমনটি মনে উদয় হতেই নির্দয়ভাবে মায়ের মৃত্যু কামনা করেছি সেদিন।

হৃদরোগে আক্রান্ত শাশুড়ির অবনতির সংবাদে যেতে হয়েছিল। ছুটে আসতে হলো মায়ের 'জওয়াব বদ্ধ' খবরে। এসে শুনি আমাদের নাম ধরে জানতে চেয়েছেন ফিরেছি কি না। ডাক দিতেই 'তোরা আইছত পুত? খাইছত নি?'- সম্বিত ফিরে পেয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। জীবনসায়াহ্নেও আমাদের ছুঁয়ে সুখ গ্রহণে কি যে ব্যাকুলতা! এটা তার চিরায়ত চেতনা। নিজের সব সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য তুচ্ছ করে সন্তানদের মুখের হাসি দেখতে চেয়েছেন জীবনভর। কেবল ক্লান্তিহীনভাবে দিতেই জেনেছেন, নেবার প্রত্যাশা করেননি। ছিলাম আদরের, মমতার, সাত রাজার ধন। কত সাধনায়, কত যত্নে লালন-পালন করেছেন। মায়ের শরীরের অংশ নয় শুধু, পুরো হৃদয় জুড়েই ছিলাম। সমস্ত স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে সুখ দুঃখ দূরে সরিয়ে অহর্নিশি সন্তানদের মঙ্গল কামনায় কাটিয়েছেন প্রতিটা মুহূর্ত। নায়রকে তুচ্ছজ্ঞান করে একমাত্র সন্তানদের ঘিরেই ছিল দিনযাপন, স্বপ্ন, আনন্দ। নায়রের জায়নামাজে দু'হাত তুলে নিরন্তর মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনায় সাফল্য কামনাতে নিমগ্ন থেকেছেন। ভালোটা নিজে না খেয়ে সন্তানদের খাইয়েছেন। সন্তানদের মুখপানে তাকিয়ে নিজের শত বেদনা সয়েছেন, কত না কষ্ট, যন্ত্রণা, দুশ্চিন্তা, দুর্ভাবনা আর কতই না অশ্রু সঙ্গোপনে আড়াল করে রেখেছেন। নিজেকে নিঃশেষ করে সন্তানদের পরিপূর্ণ করতে চেয়েছেন। তার সমস্ত বিসর্জন সন্তানদের মানুষ করার পেছনে। আমাদের সমস্ত অর্জন কেবই তার একনিষ্ঠতা, পরিশ্রম, আত্মত্যাগ, বিসর্জনের ফলশ্রুতিতে। বাবার অপূর্ণ ভালোবাসা ভরিয়ে দিয়ে হয়ে উঠেছিলেন আশ্রয়ের ভরসাস্থল; মহীয়সী মাতৃরূপে সংসারের অধ্যক্ষতা।

১৯৮৮ সালেই বাবাকে হারিয়ে বর্ধিষ্ণু পরিবারে মায়ের আঁচলই ছিল মজবুত গিঁট। আসুরিক শ্যেনদৃষ্টি, শত্রুবিভীষণ বন্ধুর পথ ডিঙিয়ে আমাদের সকলকে আজকের এই প্রতিষ্ঠিত অবস্থানে দাঁড় করানোর পথ মসৃণ ছিল না বলেই বীরাঙ্গনা, মা হিসেবে সার্থক। রিপোর্টিংয়ে ক্রাইম এবং পরবর্তী সময়ে পার্লামেন্ট অ্যান্ড পলিটিক্যাল বিট করতাম বলে আতঙ্ক কাটতো না মায়ের। আমার দুটি কলাম 'দেশচিন্তা' ও 'তথ্যতরঙ্গ' কলাম দুটি বন্ধ করে দেবার উপর্যুপরি হুমকি ও সংবাদপত্রের কার্যালয় উড়িয়ে দিতে বোমা পুঁতে রাখার ঘটনায় মায়ের আঁচল থেকে শক্তি সঞ্চয়ে গর্জে উঠে কলাম লিখেছিলাম - 'হুমকি নয়, আনতে হবে রাঙা প্রভাত'। আনন্দ-বেদনা, দুঃখ-যন্ত্রণা আর স্বপ্নরাজ্যের যত সুখ অনুভূতির আলোড়ন সবই যাকে ঘিরে; তাঁকেই কি না একলা ফেলে যাচ্ছি কবরে! অস্ফুট কান্নার চাপে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ব্যবস্থাধীন থেকে দেহ-মন পুনরুদ্ধারের জায়গাটিতে মরিয়ম বেগমের মতো মায়েদের করুণ পরিণতি জাতিকে পর্যন্ত জরাগ্রস্ত করে তুলেছে।

মায়ের মৃত্যু হয়েছে বার্ধক্যজনিত কারণে। তবে, কোমড়ের একপাশের বাটি ভেঙে পরায় প্রায় ছয় বছর ধরে ছিলেন শয্যাশায়ী। ঢাকাতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চিকিৎসাধীন ও পরামর্শে অপারেশনে যাওয়া হয়নি। মৃত্যুর কয়েক মাস আগে খোলামেলা পরিসরে থাকতে বাচ্চাদের মতো উপর্যুপরি আবদারে পরিত্যক্ত সংস্কার করা একটি হাফ বিল্ডিংয়ে উঠে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেও রাতে দেখভাল, হুট-ফরমায়েশ ও প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার অনিবার্যতা থেকে সেবার সহযোগিতায় মায়ের সাথে একত্রে রাত্রিযাপন শুরু হয় আমাকে দিয়ে। পরে ভাইয়াচারীরা যার যার কর্মস্থল ও অবস্থানের সুবিধা মতে পালাক্রমে প্রাণান্ত সেবা দিয়ে গেছেন। বাকিসময় বউচারীরা এবং যারা চাকরি করতেন, সময় ভাগাভাগি করে নিতেন। যে মা মাথার কাপড়টুকুনও ফেলতেন না আমার সামনে, তিনি অবশেষে প্রকৃতির ডাকে পানি খরচের সেবাটিও নির্দ্বিধায় নিরবে মেনে নিয়েছিলেন শিশুটির মতো, নেহায়েত অপারগতায়। এ ছিল বিরল সুযোগ, যা অনেকের ভাগ্যেই জুটে না।

মা-বাবার কঠোর অনুশাসনের মধ্যে বেড়ে উঠেছি। তাদের আদর আর শাসন এক হয়ে যেতো। শৈশবে কোথাও কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত গণ্ডগোল বাঁধিয়ে বাড়ি ফিরলে প্রথমেই তোপের মুখে পড়তে হতো 'আগে তুই কী করেছিলি' প্রশ্নবাণে। আদুরী সাজার পরিমণামও ছিল পাঙক্তেয়, যার বুমেরাং ভুলবার নয়। বেত দিয়ে মারায় হেড স্যারকে উচিত শিক্ষা দিতে প্রাইমারি স্কুল থেকে বাড়িতে ফিরে মা-বাবার কাছে এসে চোখ আর নাকের পানি একাকার করে কেঁদেকেটে বুক ভাসিয়ে নালিশ জানাই। এতে কারণ জানতে চায়লে তুমুলে ধরা খেতে হয়। 'পড়া কইতে একটু আইটকা গেছিলাম গা' শোনাতেই ভারি গলায় শোধালেন, 'পড়া আইটকা কেন'? প্রত্যুত্তরে 'বেশি পড়ছিলাম না' বলতেই মা-বাবা একাট্টা হয়ে জানতে চাইলেন, 'কেরে বেশি পড়া অইল না? দোষটা তাইলে কার? স্যারের, না তোর?' দু'জনাতে একরত্তি ছাড় পাবো কি, মাথা বরাবর তুলে স্যারের সামনে নিয় আছাড় মেরে ফালায়। স্যারে বাঁচিয়ে জানতে চান 'কোনটা বেশি মজা!' আগে 'নিজেকে চিনা'র দীক্ষা লাভ আজও চলার পথ ও পাথেয়। একটা করতে গেলে দশটা ভাবায়। কোনো পদক্ষেপ বা কাজে অন্যায় কিংবা অসঙ্গতি রয়ে না যায় - বিষয়টি বিবেকের আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে সায় নিই আগে।

মা- একটি মাত্র অক্ষর। কিন্তু বিশালতা অসীম এবং গভীরতা অতল। পৃথিবীর তাবৎ শব্দ দলা করেও এর ধারেকাছেও যাবে না। সৃষ্টিকর্তার পর যে ডাকটি বুকের ভেতর এক অদ্ভুত শান্তি লাগে, তা হলো 'মা'। মা'র চাইতে সুমধুর ডাক পৃথিবীতে আর নেই। মানবজাতি তাই প্রিয় স্বদেশকেই কেবল মায়ের সাথে তুলনা করেছে। মায়ের নাড়িছেঁড়া ভীষণ আরাধ্যা একজন হয়ে তোমার জন্যই আজকের আমি। তোমাতে মা গর্বিত আমি। কী শীতল, স্নিগ্ধ ও শান্তির ছায়াটিই না হারিয়েছি; যেখানে স্বার্থের ঘোর টোপ ছিল না। মায়ের ঋণ আমৃত্যু শোধ হবার নয়। মায়ের সম্মানের ব্যাপ্তী সম্পর্কে ইসলাম ধর্মের মহানবী (সা.) বলেছেন, 'সন্তানের উত্তম ও শ্রদ্ধা পাওয়ার সবচেয়ে বেশি অধিকারী হচ্ছেন মা।'  তিনি আরও বলেছেন, 'মাযের পদতলে সন্তানের বেহেশত্।'

মাগো .../তুমি এসেছো তাই/আলোকিত হয়েছে এ ভুবন, /জন্মেছি আমি তোমার কোলে /ধন্য হয়েছে জীবন। /শত জনমেও তোমাকেই /যেনো বারবার ফিরে পাই,/পরকালেও আমি শুধু / মা - তোমাকেই চাই।'

মা-কে আম্মা ডাকতাম। বাবাকে আব্বা। মা আমার জান্নাত। বাবাও। ইসলাম ধর্মের মহানবীকে (সা.) চতুর্থবার জিজ্ঞাসায় 'মা-বাবার পদতলে সন্তানের বেহেশত্' ঘোষণা করেছেন।

মা তুঝে তসলিম। বাবাকেও। শ্রেষ্ঠত্বের প্রশংসা করে ঋণ শোধবার নয়। প্রার্থনা কেবল - 'হে আমার প্রভু, আপনি তাঁদের (মাতা-পিতা) প্রতি দয়া করুন; যেমনিভাবে তারা আমাদের প্রতি দয়া করতেন।'

পরিশেষে পার্থিব জগতে প্রত্যেক মা-বাবাকে সুখে-শান্তিতে রাখ। পরকালেও তোমার দিদার বা সন্তুষ্টি লাভ করাইও এবং অধিষ্ঠিত করাইও সর্বোচ্চ সম্মানিত স্থানে।

লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও কলামিস্ট