ইভ্যালি বাঁচাতে রাসেলকে ছয় মাস সময় দেওয়ার দাবি

প্রকাশ | ২২ অক্টোবর ২০২১, ২২:০২

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

উচ্চ আদালত আগামী ছয় মাস পাওনা আদায়ে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির গ্রাহকদের পীড়াপীড়া না করতে যে নির্দেশনা দিয়েছেন, সে ছয় মাস এর নির্বাহী মোহাম্মদ রাসেলের হাতে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন গ্রাহক ও বিনিয়োগকারীরা। 

শুক্রবার বিকালে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে আয়োজিত এক মানববন্ধনে তারা এ দাবি জানান।

বৃহস্পতিবার বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চ ইভ্যালি পরিচালনা বিষয়ক ১০ পৃষ্ঠার লিখিত আদেশ প্রকাশ করেন। সেখানে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির ব্যবস্থাপনায় গঠিত বোর্ড কী ধরনের কাজ করবে- সে বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট। এতে বলা হয়, আগামী ছয় মাস পাওনা আদায়ের জন্য বোর্ডকে চাপ দিতে পারবেন না ইভ্যালির গ্রাহকরা। তবে কোনো গ্রাহক চাইলে পাওনার কথা বোর্ডের কাছে বা আদালতের কাছে জানাতে পারবেন। আদালতের এমন নির্দেশনার পর শুক্রবার মানববন্ধনে এলেন ইভ্যালির গ্রাহক ও বিনিয়োগকারীরা।

গ্রাহকরা বলেন, আমাদের মূল দাবি হলো, রাসেল ভাইয়ের মুক্তি। যুব সমাজকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে ইকমার্স দরকার। কমিটি (আদালত) বলেছে, ছয় মাস আমরা আমাদের টাকা চাইতে পারব না। এই ছয় মাস রাসেল ভাইকে দেওয়া হোক। আমরা এটা চাই। আমরা রাসেল ভাইর কাছে টাকা পাই। সরকার তো টাকা পাচ্ছে না।’

এসময় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মানববন্ধনে আগতরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গ্রাহক বলেন, যাদের কোনো ব্যবসা নেই তাদের হাতে কীভাবে ই-কমার্স সংগঠন ই-ক্যাব পরিচালিত হয়।

তিনি বলেন, ‘রাসেল ভাই বিজনেস পলিসি বোঝে। যাদেরকে বসানো হইছে... একজন আইনজীবী কীভাবে বিজনেস বোঝে? যাদের কোনো বিজনেসই নাই, তাদের হাতে কিভাবে ইক্যাব পরিচালিত হয়? এদেশে কেন এ ধরনের পলিটিক্স হচ্ছে? আমরা সাধারণ জনগণ আমরা পলিটিক্স বুঝি না। আমাদের সঙ্গে যেন কোনো পলিটিক্স না করা হয়।’

একই অভিযোগ তুলেছেন আরও কয়েকজন গ্রাহক ও মার্চেন্ট। তারা ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল ও তার স্ত্রী এবং প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান সামিমা নাসরিনের মুক্তির দাবি জানান। প্রয়োজনে রাসেলকে জামিন দিয়ে হলেও ব্যবসা করার সুযোগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন মানববন্ধনকারীরা।

গত ১৬ সেপ্টেম্বর অর্থ আত্মসাতের মামলায় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রাসেল এবং প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। ১৬ সেপ্টেম্বর রাসেল ও শামীমার বিরুদ্ধে গুলশান থানায় একটি মামলা করেন আরিফ বাকের নামে ইভ্যালির এক গ্রাহক। মামলাটি হওয়ার পর সেদিন বিকালেই রাসেলকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

গ্রেপ্তারের পর গুলশান থানায় করা প্রতারণার মামলায় তিন দিনের রিমান্ড শেষে ২১ সেপ্টেম্বর দুজনকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। এরপর ধানমন্ডি থানায় দায়ের করা মামলায় রিমান্ড আবেদন করা হলে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. হাসিবুল হক ইভ্যালির সিইও রাসেলের একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। একই মামলায় তার স্ত্রী শামীমা নাসরিনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়।

রিমান্ড শেষে ধানমন্ডি থানায় করা এক মামলায় ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে রিমান্ড চাওয়া হলে বিচারক রিমান্ড নামঞ্জুর করে রাসেলকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন। বর্তমানে রাসেল কারাগারে আছেন।

এদিকে গত ২২ সেপ্টেম্বর ইভ্যালির স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি ও হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা দেন হাইকোর্ট।

৩০ সেপ্টেম্বর ইভ্যালির সব নথি তলব করে হাইকোর্ট। ১১ অক্টোবর বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চে সব নথি দাখিল করেন জয়েন্ট স্টক কোম্পানির রেজিস্ট্রার।

১২ অক্টোবর ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি পরিচালনার জন্য কমিটি করে দেওয়ার কথা বলেন হাইকোর্ট। একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, একজন সচিব, চার্টার্ড অ্যাকাউনটেন্ট ও একজন আইনজীবীকে কমিটিতে রাখার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন আদালত।

১৮ অক্টোবর আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এইচ এম সামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।

কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন বিভাগের সাবেক সচিব মোহাম্মদ রেজাউল আহসান, ওএসডিতে থাকা আলোচিত অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবীর মিলন, চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট ফখরুদ্দিন আহম্মেদ, কোম্পানি আইন বিশেষজ্ঞ আইনজীবী ব্যারিস্টার খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ।

তবে আদালতের নির্দেশ আসে যে, আগামী ছয় মাসের মধ্যে ইভ্যালির কোনো গ্রাহক বা মার্চেন্ট প্রতিষ্ঠানটিকে বা প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় গঠিত কমিটিকে টাকার জন্য চাপ দিতে পারবেন না।

ঢাকাটাইমস/২২অক্টোবর/কারই/ইএস