গণঅনশন ও বিক্ষোভে সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদ

প্রকাশ | ২৩ অক্টোবর ২০২১, ১১:১৯ | আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০২১, ১৬:১৫

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

সম্প্রতি দুর্গাপূজার সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার প্রতিবাদে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গণঅনশন, গণঅবস্থান ও বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি পালন করছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ।

শনিবার সকাল ৬টা থেকে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘর চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে সংগঠনটি। এছাড়া চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে একযোগে পালিত হচ্ছে এই কর্মসূচি। বেলা ১২টা পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে।

শাহবাগে সকাল ৭টায় এই কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করে উপস্থিত হন সাবেক তথ্যমন্ত্রী ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) একাংশের নেতা হাসানুল হক ইনু। এ সময় বলেন, ‘সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ধর্মান্ধ, জঙ্গি ও সন্ত্রাসী হামলা পরিকল্পিত ছিল। হামলাকারীরা হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগাতে চেয়েছিল। বাংলাদেশের মুসলিম সমাজ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হস্তক্ষেপে দাঙ্গা লাগানো সম্ভব হয়নি।’ কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করছেন বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নিন্দ চন্দ্র ভৌমিক।

ঢাকার সমাবেশে ‘সাম্প্রদায়িক হামলাকারী’ ও তাদের পেছনে থাকা চক্রান্তকারীদের বিশেষ ক্ষমতা আইন, সন্ত্রাস দমন আইনের আওতায় এনে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবি জানানো হয়। কর্মসূচি পালনকালে মোট ৮ দফা দাবি জানানো হয়। ঘোষণা করা হয় তিন দফা কর্মসূচিও।

‘গণঅনশন ও গণঅবস্থান’ কর্মসূচি শেষ করার আগে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ সংগঠনের পক্ষে আট দফা দাবি উত্থাপন করেন।

মনীন্দ্র কুমার নাথ সংগঠনের পক্ষে আট দফা দাবি উত্থাপন করে জানান, শারদীয় দুর্গোৎসব চলাকালে ও এর পরবর্তী সময়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় সংঘটিত সাম্প্রদায়িক সহিংসতার তদন্তে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে। সাম্প্রদায়িক হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত সকল মন্দির, বাড়িঘর পুনঃনির্মাণ, গৃহহীনদের পুনর্বাসন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান ছাড়াও আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা ও নিহতদের প্রতিটি পরিবারকে ন্যুনতম ২০ লাখ টাকা প্রদান অথবা প্রতিটি পরিবারের সদস্যদের একজনকে যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরিতে নিয়োগ দিতে হবে।

ঘটে যাওয়া এসব ঘটনার বস্তুনিষ্ঠ নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক হামলাকারী ও তাদের পেছনে থাকা চক্রান্তকারীদের অনতিবিলম্বে গ্রেপ্তার করার দাবি জানিয়ে মনীন্দ্র কুমার নাথ সংগঠনের পক্ষ থেকে বলেন, বিশেষ ক্ষমতা আইন, সন্ত্রাস দমন আইনের আওতায় এনে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দ্রুততম সময়ে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। হামলাকারীদের রোধেও প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশনা সত্ত্বেও প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষের মধ্যে যারা দায়িত্ব পালনে গাফিলতি ও অবহেলা করেছেন তাদের চিহ্নিত করে অনতিবিলম্বে দ্রুত শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক গণমাধ্যম ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদিতে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছাড়াও যারা সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিচ্ছে তাদের চিহ্নিত করে বিশেষ ক্ষমতা আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আর প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশনা সত্ত্বেও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীদের মোকাবিলায় যেসব জনপ্রতিনিধি এগিয়ে আসেননি তাদেরও চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক রাজনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

এদিকে চট্টগ্রাম নগরীর আন্দরকিল্লা মোড়ে সকাল ৬টা থেকে শুরু হওয়া কর্মসূচিতে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ ছাড়াও হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠন অংশ নিয়েছে। এই কর্মসূচিকে ঘিরে ব্যাপক শোডাউনের প্রস্তুতি নিয়েছে ইসকন। হিন্দুদের বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে ইসকনের নানা বিষয়ে বিরোধ থাকলেও বৃহত্তর স্বার্থে তারা এক কাতারে শামিল হচ্ছে।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘কুমিল্লার একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে সারাদেশে যেভাবে সাম্প্রদায়িক হামলা হয়েছে, তা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। হিন্দুরা দেশের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে বাঁচতে চায় না। তারা বাকস্বাধীনতা ও নিজেদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান নির্বিঘ্নে পালন করতে চায়। একটি চক্র দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য কুমিল্লার ঘটনা ঘটিয়েছে। সরকারকে দ্রুত এ ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারীকে আইনের আওতায় আনতে হবে।’

বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ নোয়াখালী জেলা শাখার উদ্যোগে বেগমগঞ্জের চৌমুহনী ব্যাংক রোডের শ্রী শ্রী রাধামাধব জিউর মন্দির প্রাঙ্গণে শনিবার সকাল ৬টা থেকে গণঅনশন কর্মসূচি শুরু হয়। চলবে বেলা ১২টা পর্যন্ত। বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের নোয়াখালী জেলা শাখা সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট বিনয় কিশোর রায় জানান, ১২টার পর গণঅনশন শেষে চৌমুহনীতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবেন তারা।

এছাড়া সিলেট, সিরাজগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গণঅনশন, গণঅবস্থান ও বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে।

(ঢাকাটাইমস/২৩অক্টোবর/আরকে/জেবি)