পীরগঞ্জের ঘটনায় জনতাকে উত্তেজিত করেন সৈকত ও রবিউল

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৩ অক্টোবর ২০২১, ১৯:০৪ | প্রকাশিত : ২৩ অক্টোবর ২০২১, ১৩:৪৯

রংপুরের পীরগঞ্জে একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে ভাঙচুর ও আগুন লাগানোর ঘটনায় স্থানীয় জনতাকে উত্তেজিত করে তোলার পেছনে ভূমিকা রাখেন সৈকত মণ্ডল ও রবিউল ইসলাম। সৈকত ফেসবুকে ফলোয়ার বাড়ানো এবং সামাজিক অবস্থান সুদৃঢ় করতে উস্কানিমূলক পোস্ট দেন। আর তার নির্দেশে রবিউল ইসলাম মসজিদের মাইক ব্যবহার করে ইসলাম অবমাননার অভিযোগ তুলে জনতাকে উত্তেজিত করেন। তারা দুজনই সেদিনের হামলার ঘটনায় সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন।

সম্প্রতি রংপুরের পীরগঞ্জে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার উদ্দেশ্যে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় অন্যতম হোতা সৈকত মণ্ডল ও সহযোগী রবিউল ইসলামকে টঙ্গী থেকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য পেয়েছে র‌্যাব।

শনিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।

র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, সম্প্রতি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টায় কুমিল্লা, নোয়াখালী, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, ফেনী এবং রংপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় স্বার্থান্বেষী মহলের অপতৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়া সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের লক্ষ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উস্কানিমূলক, বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির অপচেষ্টা করছেন চক্রান্তকারীরা। এই পরিপ্রেক্ষিতে র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখা ও বিভিন্ন ব্যাটালিয়নের অভিযানে প্রায় ৩০ জনকে গ্রেপ্তার করে ইতিমধ্যে আইনের আওতায় আনা হয়েছে।

কমান্ডার মঈন বলেন, গত ১৭ অক্টোবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় অবমাননাকর পোস্টকে কেন্দ্র করে রংপুরে পীরগঞ্জের বড় করিমপুর গ্রামে দুর্বৃত্তরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার উদ্দেশ্যে বেশ কয়েকটি বাড়িঘর, দোকানপাট ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। ওই ঘটনায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচারের অভিযোগে রংপুরে পীরগঞ্জ থানায় তিনটি মামলা হয়। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে র‌্যাব-১৩ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসে। তাদের তথ্যে হামলায় নেতৃত্বদান ও ঘটনা সংগঠিত করার সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে জানা যায়। ওই ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে র‌্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়।

এরই ধারাবাহিকতায়, র‌্যাব সদর সদরদপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১৩ এর একটি আভিযানিক দল শুক্রবার (২২ অক্টোবর) রাতে টঙ্গী এলাকা থেকে এই ঘটনার অন্যতম হোতা সৈকত মণ্ডল ও রবিউল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তার দুজনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের বরাতে কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অরাজকতা তৈরির ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের লক্ষ্যে হামলা-অগ্নিসংযোগ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার এবং মাইকিং করে হামলাকারীদের জড়ো করেন বলে জানান। গ্রেপ্তার সৈকত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উস্কানিমূলক, বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যাচারের মাধ্যমে স্থানীয় জনসাধারণকে উত্তেজিত করে তোলেন। তিনি হামলা ও অগ্নিসংযোগে অংশগ্রহণে জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করেন। তার নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন হামলায় সরাসরি অংশগ্রহণ করে বাড়িঘর, দোকানপাট ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেন। তিনি সহযোগী রবিউলকে মাইকিং করে লোকজন জড়ো করতে নির্দেশনা দিয়েছিলেন বলে জানান। ঘটনার পর তিনি আত্মগোপনে চলে যান।

গ্রেপ্তার সৈকত মণ্ডল রংপুরের একটি কলেজের স্নাতকে অধ্যয়নরত। তিনি বিভিন্ন সময়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন উস্কানিমূলক ও বিভ্রান্তিকর পোস্ট প্রদান ও শেয়ার করতেন।

এক প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার মঈন বলেন, এর আগে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন পরিতোষ ও উজ্জ্বল। ফেসবুকে উস্কানিমূলক মূল পোস্টটি দিয়েছিলেন পরিতোষ। পরিতোষ আর উজ্জ্বলের মধ্যে বৈরি সম্পর্ক ছিল। পরিতোষ পোস্ট দিয়ে উজ্জ্বলকে বলেন, ধর্মীয় উস্কানিমূলক পোস্ট দিলে তোর কেমন লাগে! এরপর পোস্টটি তিনি ডিলেট করলেও উজ্জ্বল তা কপি ও সেভ করে রাখেন। এরপর সেটিই উজ্জ্বল নিজের ফেসবুক পেইজ থেকে প্রচার করেন। এরপর সেই পোস্টটি পিক করেন সৈকত। সৈকতের মাধ্যমে সেটি জেনেই রবিউল মসজিদে মাইকিং করেন, হামলার নেতৃত্ব দেন এবং নিজেও অংশ নেন।

ঠিক কী উদ্দেশ্যে উস্কানিমূলক পোস্ট দিয়েছিলেন সৈকত? জানতে চাইলে কমান্ডার মঈন বলেন, তার (সৈকত) ফেসবুক পেজে ২৭০০/২৮০০ ফলোআর রয়েছে। সেটিকে তিনি কাজে লাগিয়েছেন ফলোয়ার বাড়ানোর জন্য। পাশাপাশি তার ব্যক্তিগত ইমেজ বাড়বে বলেও মনে করেছিলেন।

গ্রেপ্তার রবিউল রংপুরের পীরগঞ্জের হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় অন্যতম উস্কানিদাতা। তিনি স্থানীয় একটি মসজিদের মুয়াজ্জিন। হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার আগে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে মাইকিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন উস্কানিমূলক ও মিথ্যাচার করে গ্রামবাসীকে উত্তেজিত করে তোলেন এবং হামলায় অংশগ্রহণের জন্য জড়ো হতে বলেন। এরপর তিনি মাইকিংয়ের দায়িত্ব তার আস্থাভাজনকে প্রদান করে নিজে স্বশরীরে অংশগ্রহণ ও নির্দেশনা প্রদান করেন। তিনি জানান, গ্রেপ্তার সৈকতের নির্দেশনায় ও প্ররোচনায় তিনি মাইকিং করাসহ হামলায় অংশগ্রহণ করেন। ঘটনার পর তিনি আত্মগোপনে চলে যান।

গ্রেপ্তার দুজনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানান র‌্যাব কর্মকর্তা।

(ঢাকাটাইমস/২৩অক্টোবর/এসএস/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :