থিতু হবেন নাকি ডিঙাবেন বাধার পাহাড়?

প্রকাশ | ২৩ অক্টোবর ২০২১, ১৩:৫৮

সাজিদ রাজু

অনেককেই বলতে শুনি, এবার একটা কিছু করে ‘স্যাটেল’ হতে চাই। মানে স্থির হতে চান তারা। কিছু একটা করে আসন গেড়ে বসতে চান, ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার মতো কিছু একটা করে এই স্থির হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা মানুষের! অথচ ভবিষ্যৎ কখনোই স্থির থাকবে না!

প্রশ্ন হলো, মানুষ কি আসলেই থিতু হতে পারে কোন কিছুতে? আমাদের জীবনযাপনের পথে নানা চ্যালেঞ্জ ও বাধা বিপত্তি পেরিয়ে সত্যিই কি স্থির হবেন? নাকি সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে হয়ে উঠবেন অনন্য, উজ্জ্বল? নিশ্চল দীঘি হয়ে থাকবেন আবদ্ধ নাকি খরস্রোতা নদীর মতো ছুটে বেড়াবেন দেশ থেকে দেশে? বিপুল বেগে পাড়ি দেবেন মাঠ বন প্রান্তর নাকি ভবিষ্যতের আশায় টিম টিম করে জ্বলবেন, সিদ্ধান্ত আপনার। এজন্য ভবিষ্যৎ দেখতে পাওয়ার কোনো বিকল্প নেই। ভবিষ্যৎ কখনো স্থির থাকে না। ভবিষ্যৎ বহতা নদীর মতো। সময়ের পিঠে সওয়ার হয়ে দূরন্ত ঘোড়ার মতো ছুটে চলে ধুলা উড়িয়ে।

যারা স্বপ্ন দেখেন বড় হওয়ার, চান ভালো উদ্যোক্তা হতে কিংবা জীবনের আশা-প্রত্যাশাগুলোকে বাস্তবে রূপ দিতে চান তাদের বসে থাকার ফুরসত নেই। উদোক্তাদের জন্য তো এ এক বিশাল পরীক্ষা। প্রতিযোগিতার বাজারে প্রতিদিন পাল্লা দিয়ে যোগ হচ্ছে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ। ২০-৩০ বছরের সম্ভাব্য পরিবর্তন দেখতে পারার সক্ষমতা অর্জন করলেই কেবল ব্যবসা টিকে থাকবে। পরিবর্তনের আলোকে নিজের প্রস্তুতি সেরে নিতে পারলেই কেবল প্রতিযোগিতায় থাকা সম্ভব সামনের সারিতে।

কিন্তু ভবিষ্যতের বাণিজ্য কেমন হবে তা কীভাবে বোঝা যায়? এই ভবিষ্যতের কথা কেউ বলতে পারে না। তবে অনুমান করা যায়। অন্তত বড় পরিসরের একটি ভাবনা তৈরি করা যায়।

মানবতার ভবিষ্যৎ কেমন হবে তা ব্যাখ্যা করেছেন দার্শনিক নিক বস্ট্রম। তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও        ‘ফিউচার অব হিউম্যানিটি ইন্সটিটিউট’ এর পরিচালক। অস্তিত্বের ঝুঁকি, নৃতাত্ত্বিক নীতি, মানব বর্ধন নীতি সংশ্লিষ্ট গবেষণার জন্য তিনি বেশ খ্যাতি অর্জন করেছেন পশ্চিমা বিশ্বে। সুইডিশ-বংশোদ্ভূত এই দার্শনিক মানবতার ভবিষ্যৎ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ৪টি ধরনের কথা উল্লেখ করেছেন।

প্রথমত, তার মতে প্রাচীনকালের মানুষ ভাবতেন, ইতিহাসের সমৃদ্ধি ও ধ্বংসের পরিক্রমা ‘কখনোই শেষ হবে না’। চলতে থাকবে কালের পর কাল। তবে খুব সম্প্রতি মানুষ দুর্ভাগ্যকে এড়িয়ে যাওয়ার দুঃসাহস দেখাচ্ছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, আমরা এ বিশ্বের যে ধরনের স্থায়িত্ব চাই তা শেষ পর্যন্ত টিকে থাকার মতো অবাক করা ঘটনা এখনো হয়তো সম্ভব।

দ্বিতীয়ত, অনেক সময় আমরা আমাদের সন্দেহকে দমন করার চেষ্টা করি। এ ক্ষেত্রে কোনো কিছুর ব্যাপারে ধারনা করতে আমরা প্রচলিত প্রজ্ঞাকে কাজে লাগাই। অথচ বাকি বিশ্ব এর বিরোধিতা করে উন্নত বিশ্বের জীবনমানের বিশাল সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে যেতে চায়। এক্ষেত্রে ভবিষ্যৎকে দেখা যায় বর্তমানকালের মতোই।

সমসাময়িক কালে বিশ্বের আন্তসংযোগ ও আধুনিক মারণাস্ত্রের ধ্বংসাত্মক বিষয় বিবেচনায় নিলে, এই প্রশ্ন তোলাই যায়, এত সব পরিবর্তনের ফলে বড় ধরনের কোনো সামাজিক বিপর্যয় ঘটবে কি না। আর এ কারণেই তৃতীয় সম্ভাব্য শঙ্কার কারণ জ্বালানি। আর যদি সত্যিই এ বিপর্যয় নেমে আসে তাহলে তা থেকে রক্ষা পাওয়ার কোনো উপায় থাকবে না।

আর চতুর্থ সম্ভাব্য কারণটি কল্পনা করা আমাদের জন্য বেশ কঠিন: আরও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের দিকে যাত্রা শুরু করা। এ বিপ্লবী পথে যাত্রার সবশেষ ফলাফল নানাভাবে আসতে পারে। কিন্তু এসব ফলাফলের সবগুলোই হবে বর্তমানে আমরা যেভাবে জীবনযাপন করছি তা থেকে একেবারে ভিন্ন।

কোনটা সত্যি? নিক বস্ট্রম তার মতো করে কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার ব্যাপারে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। তবে এই চারটিই কেবল নয় বরং কতগুলো পথ চিহ্নিত করা সম্ভব হবে তা নির্দিষ্ট করে বলা সত্যিই মুশকিল। একটি কথা পরিষ্কারভাবে মনে রাখা খুব জরুরি। আমাদের ভবিষ্যৎ নিজে নিজে পরিবর্তন হয়ে যাবে না। আমাদের একক ও অনন্য হয়ে ওঠার ব্যাপারটি নির্ভর করবে আমাদের নিজেদের ‘দক্ষতা’ আর ‘উদ্ভাবনী’ ক্ষমতার উপর।

লেখক:জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, চীন আন্তর্জাতিক বেতার