অন্য ধর্মের প্রতি আঘাত করার অধিকার কারও নেই: হানিফ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৩ অক্টোবর ২০২১, ২১:০৪ | প্রকাশিত : ২৩ অক্টোবর ২০২১, ২০:৫৬

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অসাম্প্রদায়িক চেতনার যে বাংলাদেশের ভিত্তি স্থাপন করে দিয়ে গেছেন, সে দেশে অন্য ধর্মের প্রতি আঘাত করার অধিকার কারও নেই বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ।

তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় রচিত আমাদের সংবিধানের চার মূলনীতি ছিলো-ধর্মনিরপেক্ষতা মানে অসাম্প্রদায়িকতা, জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ৯ মাস যুদ্ধ করে আমরা এই সংবিধানের চার মূলনীতি রচনা করেছিলাম।

শনিবার বিকালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আলকরণ ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর, প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা তারেক সোলেমান সেলিম স্মরণে এক নাগরিক শোকসভায় তিনি এসব কথা বলেন।

কাজীর দেউড়ির ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে এ শোকসভাটি অনুষ্ঠিত হয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে হানিফ বলেন, লোকজ সংস্কৃতিতে আমাদের সামাজিক বন্ধন ছিল। সেই সামাজিক বন্ধনে অসাম্প্রদায়িকতার বিষ বপন করে দিয়েছে একটি গোষ্ঠী। অথচ বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ।

তিনি বলেন, আমরা মুসলিমরা দাবি করি ইসলাম শান্তির ধর্ম। এই শান্তির ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা তুলে ধরা হচ্ছে। মাহফিলে হুজুরেরা ধর্মের সঠিক ব্যাখ্যা না করে ভুল ব্যাখা দিচ্ছেন। কুমিল্লার ঘটনায় মূল আসামি আটক হয়েছে। তিনি একজন মুসলমান। মুসলমান হয়ে মুসলমানের কোরআন শরীফকে তিনি মন্দিরে রেখে আসলেন। আমাদের কোরআনকে তিনি অসম্মানিত করেছেন। আর আমরা সবাই ধর্মের কথা বলে সারাদেশে মন্দিরে মন্দিরে হামলা চালিয়ে দাঙ্গা শুরু করে দিয়েছি। অথচ অন্য ধর্মের প্রতি আঘাত করার অধিকার কারও নাই।’

তারেক সোলেমান সেলিম স্মরণে আওয়ামী লীগের এ কেন্দ্রীয় নেতা আরও বলেন, ‘একজন ব্যক্তি যদি পরপর চার চার বার কাউন্সিলর নির্বাচত হন। তাহলে বুঝতে আর বাকি থাকে না। যিনি কত বড় জনপ্রিয় কাউন্সিলর ছিলেন। আমি তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি ও তাঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই।’

প্রধান বক্তা একে এম আফজালুর রহমান বাবু বলেন, সেলিম ভাই আপাদমস্তক একজন সংগঠন। কঠিন সমস্যার সমাধান দিতেন এক মিনিটেই। সেলিম একজন মানবিক মানুষ। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের চারবারের নির্বাচিত কাউন্সিলর ছিলেন। চট্টগ্রামের মানুষ সেলিম ভাইকে ভুলতে পারেনি। সেলিম ভাই চট্টগ্রামের মানুষের মাঝে আজীবন বেঁচে থাকুক।সেলিম ভাইয়েরা যে নীতি আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করে গেছেন। আমরা সকলে যেন সে পথে যাই। সে প্রত্যাশা করি।

তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কখনো ধর্মনিরপক্ষতা নিয়ে আপোষ করেননি। মৌলবাদের বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’

দক্ষিণ জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান ভাই বলেন, ‘তারেক সোলেমান সেলিম কখনো রাজনীতিকে বিজনেস সেন্টার হিসেবে নেননি। রাজনীতিকে তিনি নিয়েছিলেন বিজ্ঞান হিসেবে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ হিসেবে। তারেক সোলেমান সেলিম চট্টগ্রামের মানুষের অন্তরে সারাজীবন বেঁচে থাকবেন।’

মহানগর আ.লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে আপনারা সকলে তারেক সেলেমান সেলিমের ভূমিকা পালন করুন। তারেক সোলেমানের অনুসারীরা যেনো শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হই।’

সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, এটা আমাদের সংগঠনের দুর্বলতা কি না জানি না। তারেক সোলেমান সেলিমকে তার জীবনদশায় যে মূল্যায়ন করা দরকার তা আমরা দিতে পারিনি। মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তাঁকে যারা ছোট করার চেষ্টা করেছিলেন, তারা আজ নাগরিক শোক সভার দৃশ্য দেখে বুঝতে পারছেন তিনি কত বড় মাপের নেতা ছিলেন। আমি আপনাদের বলব। যা অন্তরে ধারণ করি তা যেন আমরা মুখ দিয়ে প্রকাশ করি। স্বার্থের রাজনীতি থেকে দূরে থাকি।

এমপি মোসলেম উদ্দিন আহমেদ বলেন, তারেক সোলেমান সেলিমকে অপবাদ দিয়ে শেষ করতে পারেনি। তিনি মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছেন। তিনি কখনো মুছে যাবার নন।

শোকসভার সদস্যসচিব জামশেদুল আলম চৌধুরীর পরিচালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন নাগরিক শোকসভা কমিটির চেয়ারম্যান ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী।

এছাড়াও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক একে এম আফজালুর রহমান বাবু, মহানগর আ.লীগের (ভারপ্রাপ্ত) সভাপতি আলহাজ্ব মাহতাবউদ্দিন চৌধুরী, সাবেক মেয়র ও মহানগর আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আ.লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মোসলেম উদ্দিন আহমেদ, দক্ষিণ জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সাবেক সদস্য অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী, কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব, কাউন্সিলর আলহাজ্ব আতা উল্লাহ, কাউন্সিলর নুরুল আলম, কাউন্সিলর গিয়াস উদ্দিন, কাউন্সিলর জালাল উদ্দিন ইকবাল, কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা শহিদুল চৌধুরী রাসেল, সিটি কলেজের সাবেক ছাত্রনেতা সাদেক হোসেন পাপ্পুর প্রমুখ। আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক ছাত্রনেতা মাহফুজুর রহমান রোটন।

সভায় আবেগঘন বক্তব্য রাখেন তারেক সোলেমানপুত্র মহিম ইসলাম রাতুল। গত ১৮ জানুয়ারি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে তারেক সোলেমান সেলিম মারা যান।

(ঢাকাটাইমস/২৩অক্টোবর/ইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :