চাঁদপুরে স্বামী হত্যা মামলায় স্ত্রীর যাবজ্জীবন
চাঁদপুর জেলার শাহরাস্তি উপজেলার মেহের উত্তর ইউনিয়নের নয়নপুর গ্রামে স্বামী জামাল হোসেনকে ঘুমের ওষুধ ও বালিশ চাপা দিয়ে হত্যার দায়ে স্ত্রী ফাতেমা আক্তার (৩৪)-কে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। একই সাথে ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে তিন মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়। রবিবার বিকালে চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ বেগম ফারহানা ইয়াসমিন এই রায় দেন।
মামলার বিবরণ থেকে জানা গেছে, ২০১৬ সালে ১৪ এপ্রিল ফাতেমা আক্তারের সাথে তার স্বামী মৃত জামাল হোসেনের পারিবারিক বিষয়ে ঝগড়া বিবাদ হয়। সন্তানদের সামনে স্বামী ফাতেমাকে মারধর করায় অসম্মানবোধ করে। এরপর ক্ষিপ্ত হয়ে স্বামীকে জীবনে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে। পরদিন ১৫ এপ্রিল পরিকল্পনা অনুযায়ী রাত ১১টায় বাজার থেকে স্বামী ঘরে এলে জন্ডিসের তরল ওষুধের সাথে ৮টি ঘুমের ট্যাবলেট মিশিয়ে রাখে। ওই ওষুধ পান করে রাতে স্ত্রী ফাতেমাসহ ঘুমিয়ে পড়ে।
রাত ৩টার দিকে জামাল হোসেন অচেতন হয়ে পড়লে নাকে মুখে বালিশ চাপা দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। ঘটনাটি গোপন করার জন্য ফাতেমা পাশের অন্যঘর থেকে তার ছেলে জাহিদুল ইসলাম ফাহিম (১৫) কে ঘুম থেকে উঠিয়ে তার পিতা মৃত্যুবরণ করেছে বলে জানায়। ছেলেকে ফাতেমা বলে তার পিতার সাথে ঝগড়া বিবাদ হয়েছে দিনে, ফলে তার মৃত্যুর ঘটনায় তাদের সন্দেহ করবে।
এই জন্য মা ও ছেলে একসঙ্গে বাড়ির পাশে পুরনো গর্ত আকারে বড় করে জামালকে মাটি চাপা দেয়। সকালে ফাতেমা প্রচার করে তার স্বামী ঢাকায় চাকরির জন্য গেছে। কিন্তু বিষয়টি জামাল হোসেনের পরিবারের সন্দেহ হলে বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নিয়ে সন্ধান পায়নি। পরবর্তীতে ফাতেমাকে দিয়ে ২৮ এপ্রিল শাহরাস্তি মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করে।
এরপর ৩০ এপ্রিল দুপুরে ফাতেমা আক্তার তার স্বামীর নিকটাত্মীয় অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য আমির হোসেনের নিকট পুরো ঘটনার বিবরণ দেয়। আমির হোসেন ঘটনাটি শাহরাস্তি থানা পুলিশকে জানালে পুলিশ এসে তাদের থানায় নিয়ে যায় এবং জিজ্ঞাসাবদের এক পর্যায়ে ঘটনাস্থলে নিয়ে জামাল হোসেনের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে। এই ঘটনায় ওই দিনই আমির হোসেন বাদী হয়ে শাহরাস্তি থানায় ফাতেমা আক্তার ও তার ছেলে জাহিদুল ইসলাম ফাহিমকে আসামি করে থানায় হত্যা মামলা করেন।
শাহরাস্তি থানা পুলিশ ওই দিনই ফাতেমা আক্তার ও তার ছেলেকে আদালতে পাঠায়। গত ছয় বছর ফাতেমা চাঁদপুর জেলা কারাগারে এবং ছেলে জাহিদুল ইসলাম শিশু-কিশোর সংশোধনাগারে থেকে এখন জামিনে আছে। জাহিদুল এর মামলাটি পৃথক আদালতে চলমান।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তৎকালীন শাহরাস্তি থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সমির মজুমদার তদন্ত শেষে ২০১৭ সালের ৩১ জানুয়ারি আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।
মামলায় সরকার পক্ষের আইনজীবী অতিরিক্ত পিপি বদিউজ্জামান কিরণ বলেন, মামলাটি আদালতে ছয় বছর চলমান থাকা অবস্থায় ২০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন। মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ ও নথিপত্র পর্যালোচনা করে আসামির উপস্থিতিতে বিচারক রবিবার এই রায় দেন।
আসামি পক্ষের আইনজীবী ছিলেন সেলিম আকবর, কাজী জুম্মান ও ইয়াসিন আরাফাত ইকরাম।
(ঢাকাটাইমস/২৪অক্টোবর/এলএ)