মাদারীপুরে আ.লীগের দুর্গে নেই নৌকা প্রতীক!

মাদারীপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৫ অক্টোবর ২০২১, ১৯:০৫

তৃতীয় দফা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মাদারীপুর সদর উপজেলার সব ইউনিয়নে নৌকা প্রতীক থাকছে না। আওয়ামী লীগ অধ্যুষিত এ দুর্গে ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রার্থী নির্ধারণ করতে না পারায় প্রার্থিতা উন্মুক্ত রাখার প্রস্তাব করেছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশ ও মাদারীপুর-২ আসনের সাংসদ শাজাহান খান। তবে দলীয় প্রতীক না থাকায় দলের ভেতর কিছুটা চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সংসদীয় বোর্ড ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের যৌথসভা শেষে ২৪ অক্টোবর দুপুরে গণভবনে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে সদর উপজেলায় প্রার্থিতা উন্মুক্ত রাখার তথ্য জানানো হয়। এখানে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের দলীয় লোকজনই স্বতন্ত্র প্রতীকে প্রতিদ্বন্ধিতা করবেন। এই ১৪টি ইউনিয়নে কোন নৌকা প্রতীক থাকছে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫ অক্টোবর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশের সভাপতি সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেন সেলিম ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এজাজুর রহমান আকনের উপস্থিতিতে বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও মাদারীপুর-২ আসনের সাংসদ শাজাহান খান। আওয়ামী লীগ অধ্যুষিত এই উপজেলায় সবগুলো ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা বেশি এবং দলীয়ভাবে তাদের আলাদা করে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধিতার জন্য মনোনয়ন করা উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সম্ভব হচ্ছে না বলে আলোচনা হয়। তাই সভায় সর্বসম্মতক্রমে সদর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থিতা উম্মুক্ত রাখার সুপারিশ করা হয়। পরে সভার রেজুলেশন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পাঠানো হয়।

অন্যদিকে সদর উপজেলার বৈধ দাবিদার আরেক অংশের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইউসুফ চৌকদার ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা কামালের উপস্থিতিতে ১৯ অক্টোবর শিল্পকলা একাডেমিতে বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল্লা। সেই সভায় সর্বসম্মতিক্রমে নৌকা প্রতীকে দলীয় মনোনয়নের আবেদন করা হয়। কিন্তু রবিবার দুপুরে দলীয় সংসদীয় বোর্ড ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের যৌথসভা শেষে সদর উপজেলায় তৃতীয় দফা নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন থাকছে না বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে নির্বাচন হচ্ছে না, বিষয়টি জানার পর থেকে বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রার্থীদের মধ্যে প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়ে গেছে। প্রার্থীরা ভোটারদের কাছে যাওয়া শুরু করেছেন। বিভিন্ন এলাকাতে উঠান বৈঠকও করতে দেখা গেছে প্রার্থীদের। এরই মধ্যে প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র কিনতে শুরু করেছে। তৃণমূল আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিষয়টি দেখছেন ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে।

মাদারীপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে জানা যায়, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ অধ্যূষিত এলাকা। এই উপজেলা শতকরা ৯০ ভাগ জনগণ আওয়ামী লীগ সমর্থিত। তৃণমূল পর্যায়ে বিশেষ করে ইউনিয়ন পর্যায়ের রাজনীতিতেও একাধিক যোগ্য প্রার্থী রয়েছেন, যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। কেউ ইউনিয়ন পর্যায়ের কমিটিতে আবার কেউ কেউ উপজেলা পর্যায়ের কমিটিতে রয়েছেন।

শাজাহান খানপন্থি একাংশের নেতাদের দাবি মতে, ইউনিয়ন পর্যায় থেকে দলীয় মনোনয়ন দিতে গেলে একাধিক যোগ্য প্রার্থীদের মধ্যে বেছে নিতে সংশয় সৃষ্টি হয়। তাছাড়া পরস্পরের মধ্যে মনোমালিন্য ও দূরত্ব সৃষ্টি হয়। এই মনোমালিন্য আর দূরত্ব রোধে সদরের ১৪টি ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোনো দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। দলীয় সমর্থনে একাধিক প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। অর্থাৎ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত সব প্রার্থীরাই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের দাবি, এর মাধ্যমে সাধারণ জনগণের মধ্যে ভোট প্রদানের উৎসাহ তৈরি হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে সাধারণ ভোটাররা স্বতঃস্ফূর্ত রয়েছেন। নিজেদের পছন্দের প্রার্থীদের ভোটদানের সুযোগ তৈরি হয়েছে।

সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশের সভাপতি সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেন সেলিম বলেন, ‘সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সুপারিশে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে উপজেলা আওয়ামী লীগ প্রার্থীতা উন্মুক্ত রেখেছে। এখানে দলীয় একক কোনো সমর্থন দেওয়া হয়নি। কারণ প্রার্থীদের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। একক প্রার্থী দিলে অন্তর্দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। এখন ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতে পারবে। আমাদের আর কোন সমস্যা নেই।’

তবে মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল্লা জানান, ‘নেত্রীর সিদ্ধান্তই আমরা মেনে চলি। তিনি যে নির্দেশনা দেবেন, সেটাই আমরা পালন করব। তারপরেও জেলা আওয়ামী লীগ থেকে প্রতিটি ইউনিয়নের দলীয়ভাবে নিবেদিত কর্মীদের সমর্থন দেব। যাতে ত্যাগী আওয়ামী লীগাররা জয়ী হতে পারে।’

মাদারীপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান জানান, তৃতীয় ধাপে সদর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ২ নভেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দানের শেষ তারিখ। যাচাই-বাছাই হবে ৪ নভেম্বর, ১১ নভেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের তারিখ এবং ২৮ নভেম্বর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এ উপজেলায় ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন ২ লাখ ২১ হাজার ৭৮৩ জন ভোটার। আমাদের সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই নেয়া হয়েছে।’

(ঢাকাটাইমস/২৫অক্টোবর/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :