কামরাঙ্গীরচরের আতঙ্ক ‘আনু বাহিনী’, অতিষ্ঠ স্থানীয়রা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৫ অক্টোবর ২০২১, ১৯:১২
আনু বাহিনীর প্রধান আনোয়ার হোসেন (ফাইল ছবি)

বিভিন্ন সন্ত্রাসীর নাম ভাঙিয়ে রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় চাঁদাবাজি করছে ‘আনু বাহিনী’। দশ-বারজনের চক্রটি জমি দখল ছাড়াও বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও নির্মাণাধীন ভবন মালিকদের টার্গেট করে চাঁদাবাজি করছে। চাঁদা না পেলে ভুক্তভোগীদের হুমকি ও মারধরের অভিযোগেও রয়েছে।

এসব ঘটনায় বিভিন্ন সময় কামরাঙ্গীরচর, লালবাগ, কোতোয়ালি ও হাজারীবাগ থানায় একাধিক মামলাও হয়েছে। এছাড়া বাহিনীপ্রধান আনোয়ার হোসেন ওরফে আনুর বিরুদ্ধে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় একটি মামলা তদন্তাধীন।

পুলিশ ও স্থানীয়রা বলছে, চাঁদাবাজির মামলা ছাড়াও আনুর বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ডজনখানেক জিডি রয়েছে। একাধিকবার গ্রেপ্তার হলে জেলখানা থেকে বেরিয়ে আবারো অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন। সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার আশরাফ আলী আজম ও তার ভাইয়ের ওপর হামলা ও গুলি করেছিল আনু বাহিনী। তাছাড়া চাঁদা না পেয়ে স্থানীয় আলমগীর হোসেন নামের এক ব্যবসায়ীকে ককটেল ছুড়ে আহত করেছিল এই গ্রুপটি। এই ঘটনায় থানায় মামলা করেন ওই ব্যবসায়ী। বর্তমানে মামলাটি তদন্তাধীন।

মামলা তুলে নিতে ওই ব্যবসায়ীকে হুমকি দেয় আনু বাহিনী। এই ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন ব্যবসায়ী আলমগীর।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয়রা জানিয়েছে, কামরাঙ্গীরচর এলাকায় দীর্ঘদিন আগে আনুর দাদা, বাবা ও চাচা মিলে প্রায় আধা শতাংশ জমি বিক্রি করেন। কিন্তু আনু বেশ কিছু দিন ধরে দফায় দফায় ওই জায়গায় গড়ে ওঠা বাড়ির মালিকদের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত চাঁদা নিচ্ছেন। সম্প্রতি আনু পরিকল্পিতভাবে দলবল নিয়ে রাতের অন্ধকারে মা-স্ত্রীকে কৌশলে কামরাঙ্গীরচরের স্থানীয় ডা. ওয়াহিদুজ্জামানের বাড়িতে জোর করে ঢুকিয়ে তার বাড়ি দখল নেন। এছাড়া ওই বাড়ির সাইনবোর্ড ও বৈদ্যুতিক মিটার খুলে নিয়ে যান। খবর পেয়ে কামরাঙ্গীরচর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এসময় স্থানীয় লোকজন ও পুলিশের উপস্থিতিতে বাড়িটি দখলমুক্ত করা হয়। এ ঘটনায় তার (আনুর) বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে।

জানা গেছে, কামরাঙ্গীরচর এলাকায় চাঁদাবাজ হিসেবে আনুকে সবাই চেনে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে কেউ নতুন বাড়ি করতে গেলেও তাকে চাঁদা দিতে হয়। এলাকায় আনু ও তার সহযোগীরা বেপরোয়া। কামরাঙ্গীরচরের ম্যাচ ফ্যাক্টরি, ব্যাটারিঘাট, বড়গ্রাম, রূপনগর এবং কামরাঙ্গীরচর সরকারি হাসপাতাল ও কামরাঙ্গীরচর নতুন বিদ্যুৎ অফিস এলাকায় প্রায় ১০ একর সরকারি খাসজমি বেদখল হয়ে গেছে। জেলা প্রশাসক ও ভূমি জরিপ অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এসব সরকারি খাস জমির ভুয়া মালিকানা তৈরি করে শতাধিক মানুষের কাছ থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে আনু বাহিনী।

স্থানীয় থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সাধারণ মানুষের পাশাপাশি পুলিশকেও আক্রমণ করতে ছাড়েননি আনু। এই ঘটনায় তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল। পরবর্তী সময়ে জেলখানা থেকে বেরিয়ে আবারও চাঁদাবাজিতে জড়িয়েছেন। এসব ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ডজনখানেক সাধারণ ডায়েরি-জিডি হয়েছে। তার চক্রে ১০/১২ জন রয়েছে। যারা চাঁদাবাজির পাশাপাশি জমি দখলে জড়িত। এছাড়া কেউ নতুন বাড়ি করতে গেলে তাকে চাঁদা দিতে হয়।

আরও জানা গেছে, চাঁদার দাবিতে হুমকি দেওয়ায় ব্যবসায়ী মুফতি কামারুজ্জমান ও অপর আরেক ব্যবসায়ী তার বিরুদ্ধে মামলা করেন।

এদিকে মিজানুর রহমান নামে এক ব্যক্তি থানার অভিযোগপত্রে লিখেছেন, তিনি কামরাঙ্গীরচরে নতুন বাড়ি তৈরি করছিলেন। এসময় আনু তার কাছে চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দিলে তাকে হত্যা করা হবে হুমকিও দেয়। এই ঘটনায় তিনি থানায় অভিযোগ দেন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৬নং কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আনোয়ার হোসেন আনু একজন সন্ত্রাসী। এমন কোনো অপকর্ম নাই, যা সে করেনি। তার বাহিনীতে কাজ করে জালাল দেওয়ান, আলী আহমদ, আমিনুল আলী। এই বাহিনী পশ্চিম আশ্রাফাবাদ এলাকায় প্রায় ২০টি বাড়িওয়ালাকে দীর্ঘদিন ধরে জিম্মি করে রেখেছে। এছাড়া আনুর বিরুদ্ধে এলাকার মানুষের শত অভিযোগ আছে।’

কামরাঙ্গীরচর থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আনোয়ার হোসেন আনুর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগের পাহাড় আছে। পুলিশকেও আক্রমণ করার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। আমরা তাকে কয়েকবার গ্রেপ্তারও করেছি। কিন্তু জামিনে বেরিয়ে আবারও অপকর্ম করে। আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। দ্রুত তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এসব বিষয়ে অভিযুক্তের মোবাইল বন্ধ থানায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

(ঢাকাটাইমস/২৫অক্টোবর/এসএস/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :