আদি বুড়িগঙ্গা উদ্ধারে আরও ২৮ স্থাপনা উচ্ছেদ

প্রকাশ | ২৫ অক্টোবর ২০২১, ১৯:১২ | আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২১, ১৯:১৮

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

দ্বিতীয় দিনের মতো আদি বুড়িগঙ্গার জায়গা দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে জেলা প্রশাসন ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। অভিযানে সব মিলিয়ে ২৮টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে এক একর জায়গা।

সোমবার সকাল ১০টা থেকে কামরাঙ্গীরচরের কালুনগর মৌজার মাহাদীনগরে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে বিআইডব্লিউটিএ। অভিযানের নেতৃত্বে দেন বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক এবং ঢাকা নদীবন্দর কর্মকর্তা গুলজার আলী। অভিযানে বিআইডব্লিউটিএর সঙ্গে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও অংশ নেন।

বিআইডব্লিউটিএর দেওয়া তথ্য মতে, আজ সর্বমোট ২৮টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এর মধ্যে পাকা স্থাপনা ২০টি। তিন তলা বাড়ি একটি, দোতলা বাড়ি একটি, একতলা বাড়ি চারটি, ১২টি দোকান, একটি পানির ট্যাংক, পাকা টয়লেট একটি। এছাড়াও টিনের ঘর একটি, পাকা দেয়াল চারটি, ভরাট অপসারণ তিনটি। সব মিলিয়ে আজকের অভিযানে উদ্ধারকৃত ভূমির পরিমাণ এক একর।

এদিকে এলাকাবাসীর অভিযোগ, অভিযানে প্রভাবশালীদের বড় বড় ভবন বাদ দেওয়া হচ্ছে। ম্যাটাডোর কোম্পানি ও পান্না ব্যাটারি হাউজকে অভিযানে ছাড় দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তাদের।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক এবং ঢাকা নদীবন্দর কর্মকর্তা গুলজার আলী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ভুক্তভোগীরা যাদের কথা বলছেন সেই প্রতিষ্ঠান দুটি রয়েছে কামরাঙ্গীরচর মৌজায়। আমাদের কালুনগর মৌজায় ১৩টি অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। আমরা দুই দিনে এই স্থাপনা উচ্ছেদ করবো। পরবর্তী সময়ে আমরা যতদূর সম্ভব খাল খননের জন্য আগামীতে আবারও উচ্ছেদ অভিযান শুরু করবো। তখন ছোট-বড় সেটা আমাদের বিবেচনায় থাকবে না।’

ঢাকা নদীবন্দর কর্মকর্তা বলেন, ‘আপনারা এর আগেও দেখেছেন, জেলা প্রশাসন ও বিআইডব্লিউটিএ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছে সেখানে অনেক বড় প্রভাবশালীদের স্থাপনাও ছিল, সবই নদীর স্বার্থে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এখানেও যদি তেমন কিছু থাকে আমরা সেটাও গুঁড়িয়ে দেব এবং সেটা উদ্ধার করবো। হাইকোর্ট থেকে নির্দেশনা দিয়ে যেগুলো চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছে আমরা অবশ্যই সেগুলো উচ্ছেদ করবো।’

গুলজার আলী বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা আদি বুড়িগঙ্গার পুরো খালটা উদ্ধার করা। আজকে আমাদের এখনো আরও কিছু কাজ বাকি রয়েছে। এখনো এখানে যে অভিযানটি বাকি রয়েছে আশা করছি এক থেকে দেড় একর জায়গা উদ্ধার হবে। খালটা খনন করলে এলাকাবাসীরই উপকার বেশি হবে। কারণ স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এলে দুই পাশের যে লোকালয় গড়ে উঠেছে এদের পানি, বর্জ্য সবকিছু নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভালো হবে।’

দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে বেদখল আদি বুড়িগঙ্গা। নদীর জায়গা দখল করে গড়ে উঠে বহুতল ভবন। নির্মাণ করা হয় আবাসিক স্থাপনা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আদি বুড়িগঙ্গা উদ্ধারে এবার উচ্ছেদ অভিযানে নেমেছে বিআইডব্লিউটিএ। রবিবার প্রথম দিনের অভিযানে নদীর দুই একর জায়গা উদ্ধার করা হয়।

এর আগে ২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারি বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালুনদী এবং শীতলক্ষ্যা ঢাকার এই চার নদী উদ্ধারে অভিযানে নামে বিআইডব্লিউটিএ। বছরব্যাপী অভিযানে সাড়ে সাত হাজারের বেশি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। উচ্ছেদকৃত জায়গায় ওয়াকওয়ে, বৃক্ষরোপণসহ বেশ কিছু উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হয়। এরইমধ্যে তুরাগ নদের তীরভূমিতে সেই ওয়াকওয়ে দৃশ্যমান হয়েছে। আগামী মাসের শুরুর দিকে বুড়িগঙ্গা নদীর কামরাঙ্গীর চর অংশ থেকেও ওয়াকওয়ে নির্মাণ কাজ শুরু হচ্ছে।

আদি বুড়িগঙ্গা নিয়ে বড় ধরনের উন্নয়ন প্রকল্প নিতে চায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। চলতি অর্থবছরের শুরুতে আদি বুড়িগঙ্গা উদ্ধারে ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় নগর কর্তৃপক্ষ। ব্যবসানির্ভর কামরাঙ্গীরচরের চিত্র পাল্টে দিতে বড় প্রকল্প নিতে চায় ডিএসসিসি।

(ঢাকাটাইমস/২৫অক্টোবর/আরকে/জেবি)