‘ওসির বিরুদ্ধে ঘুষের অভিযোগের জেরে ধর্ষণের মামলা’

বগুড়া প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৫ অক্টোবর ২০২১, ২১:২২ | প্রকাশিত : ২৫ অক্টোবর ২০২১, ২১:০৪

কোনো কারণ ছাড়াই নূর আলম নামে এক যুবককে থানায় নিয়ে মারপিট করে ৫০ হাজার টাকা আদায় এবং আরও ২০ হাজার টাকা দেয়ার শর্তে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে বগুড়ার দুপচাঁচিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান আলীর বিরুদ্ধে। সোমবার নুর আলমের স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা বগুড়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ তোলেন। তবে থানার ওসি হাসান আলী বলছেন, এসব অভিযোগ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন।

সংবাদ সম্মেলনে রাজিয়া সুলতানা অভিযোগ করেন, এ বিষয়টি জানিয়ে পুলিশের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিলে ওসি ক্ষিপ্ত হয়ে দুটি মামলা করিয়েছেন নুর আলম, তার ভাই ও চাচার বিরুদ্ধে। এর একটি ভাঙচুর ও লুটপাটের, অন্যটি ধর্ষণের। ধর্ষণ মামলায় আসামি করা হয়েছে একই পরিবারের তিন সহোদর ভাই ও বাবা-ছেলেকে। ভাঙচুর ও লুটপাটের মামলায়ও আসামি করা হয়েছে তাদেরকেই। এই মামলায় তিন ভাই জেল হাজতে আছেন। অন্যরা পালিয়ে বেড়চ্ছেন।

রাজিয়া সুলতানা অভিযোগ করে বলেন, তার স্বামী নুর আলম একজন দরিদ্র মোটর মেকানিক। দুপচাঁচিয়া সদরে বাসস্ট্যান্ডে বসে কাজ করেন। তার সামান্য আয় দিয়ে সংসার চলে। গত ২৯ আগস্ট দুপচাঁচিয়া থানার মোসাদ্দেক নামে এক এসআই এসে নুর আলমকে থানায় ওসির কাছে নিয়ে যান। সেখানে নুর আলমকে কোনো কারণ ছাড়াই ওসি হাসান আলী গালিগালাজ ও মারধর করে এবং ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন।

নির্যাতন সইতে না পেরে নুর আলম তার ভাই ফরিদের মাধ্যমে ওসিকে ৫০ হাজার টাকা দেন এবং আরও ২০ হাজার টাকা কয়েকদিন পরে দেয়ার শর্তে ওসির হাত থেকে মুক্ত হন। কয়েকদিন পর ওসি তার এসআইদের মাধ্যমে বাকি ২০ হাজার টাকা দিতে তাগাদা দিতে থাকেন। একপর্যায়ে অতিষ্ঠ নুর আলম প্রতিকার চেয়ে ২৪ সেপ্টেম্বর পুলিশের আইজি, ডিআইজি ও পুলিশ সুপারের নিকট লিখিত অভিযোগ দেন।

এ খবর পেয়ে ওসি নুর আলমকে অভিযোগ তুলে নিতে বলেন। নয়তো মাদকসহ নানা ধরনের মামলা দিয়ে জীবন শেষ করে দিবেন বলে হুমকি দেন। নুর আলম অভিযোগ তুলে না নেয়ায় প্রথমে ১১ অক্টোবর দুপচাঁচিয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মিনি ট্রাক মালিক সমিতির অফিস ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাঙচুর এবং লুটপাটের একটি মামলা করান নুর আলম ও তার ভাইদের বিরুদ্ধে। মামলার বাদী করা হয় মিনি ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলুকে। মামলায় ১০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতসহ ১৬ জনকে আসামি করা হয়।

এই মামলায় ১৯ অক্টোবর জামিন নিতে গেলে আদালত নুর আলম ও তার অন্য দুই ভাই ফরিদ উদ্দিন, নুরুল ইসলাম বাবুসহ পাঁচজনের জামিন নামঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠান আদালত।

এদিকে একই দিন (১৯ অক্টোবর) ওসি আরেকটি ধর্ষণ মামলা করান নুর আলমদের বিরুদ্ধে। এই মামলার বাদী করা হয় দুপচাঁচিয়ার সালমা বেগম নামে এক নারীকে। ধর্ষণ মামলায় আসামি করা হয় নুর আলম, তার দুই ভাই ফরিদ উদ্দিন ও নুরুল ইসলাম বাবু এবং নুর আলমের চাচা বেলাল হোসেন ও বেলাল হোসেনের ছেলে রুবেলসহ আটজনকে।

ধর্ষণ মামলায় ঘটনাস্থল দেখানো হয় বগুড়া সদরের চারমাথা এলাকায় একটি হোটেল কক্ষে। এই মামলায় গ্রেপ্তারের ভয়ে অন্য পাঁচজন আসামি বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

সংবাদ সম্মেলনে রাজিয়া আরও বলেন, ১৯ অক্টোবর আমার স্বামী ও দুই দেবর এবং ভাসুর জামিন নিতে আদালতে যান। তাদের জামিন বাতিল হওয়ায় জেল হাজতে থাকাবস্থায় ওই দিনেই কীভাবে ধর্ষণ করলো তা বোধগম্য নয়। এতেই বোঝা যাচ্ছে ওসির আক্রোশের শিকার হয়েছি আমরা।

এ বিষয়ে দুপচাঁচিয়া থানার ওসি হাসান আলী বলেন, তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। তিনি দুপচাঁচিয়ায় গিয়ে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগকারীদের সম্পর্কে খোঁজ খবর নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

দুপচাচিয়া-আদমদীঘি সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার নাজরান রউফ জানান, অভিযোগ পাওয়ার পরই পুলিশ সুপার মহোদয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা তদন্ত করছি। খুব দ্রুত এর রিপোর্ট দেয়া হবে।

(ঢাকাটাইমস/২৫অক্টোবর/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :