পটুয়াখালীতে সাবেক বিএনপি নেতাকে নৌকা প্রতীক দেয়ায় ক্ষোভ

প্রকাশ | ২৫ অক্টোবর ২০২১, ২২:১৯

পটুয়াখালী প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

আব্দুল আজিজ হাওলাদার ৫৪ বছর ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার ৪নং দেউলী সুবিদখালী ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান তিনি। তৃতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এই ইউনিয়নে।

নৌকা প্রতীকে মনোনয়নের জন্য চারজনের একটি তালিকা কেন্দ্রে পাঠিয়েছিল উপজেলা আওয়ামী লীগ। আব্দুল আজিজ হাওলাদারের নাম ছিল সেই তালিকার ১ নম্বরে। কিন্তু আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন পেলেন রাজাকারপুত্র সাবেক বিএনপি নেতা আনোয়ার হোসেন খান।

সূত্রে জানা গেছে, মাত্র চার মাস আগে বিএনপি থেকে আনোয়ার হোসেন খান আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন । দলে যোগ দিয়েই পেয়ে গেছেন মির্জাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির পদ। গত ২২ অক্টোবর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক স্বাক্ষরিত কাগজে তাকে ৪নং দেউলী সুবিদখালী ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন দেয়ার বিষয়টি জানানো হয়।

এদিকে, মুক্তিযুদ্ধেরবিরোধিতা করা পরিবারের সদস্যকে মনোনয়ন দেয়ায় এলাকার ত্যাগী ও দুঃসময়ের নেতা-কর্মীদের মনে চরম ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে।

এ বিষয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, জেলা আওয়ামী লীগ কমিটির অনুমোদন দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে তাদের কিছুই করার নেই। আর নৌকা প্রতীক পাওয়ার ব্যাপারে স্থানীয় আ.লীগ নেতাদের মন্তব্য কেন্দ্র সিদ্ধান্ত দিয়েছে। তাই তারা অনেকটা বাধ্য হয়েই সিদ্ধান্ত মেনে নিচ্ছেন।

শান্তি কমিটির সদস্যের সন্তান ও বিএনপি নেতার মনোনয়ন বাতিল চেয়ে শনিবার (২৩ অক্টোবর) আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বরাবরে আবেদন করেছেন ৪নং দেউলী সুবিদখালী ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল আজিজ হাওলাদার। আবেদনে তিনি জানান, নৌকা মনোনয়ন পাওয়া আনোয়ার হোসেন খানের পিতা মৃত. জেন্নাত আলী খান ১৯৭১ সালে শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন। তাদের সমগ্র পরিবার বিগত সময়ে বিএনপির রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিল। যাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে, তিনি কখনো আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন না। তিনি ১৯৯৭ সাল থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত মির্জাগঞ্জ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। এরপর ২০০৩ সালে থেকে চলতি বছর পর্যন্ত জেলা বিএনপির সম্মানিত সদস্য হিসেবে ছিলেন।

আনোয়ার হোসেন খানের চাচা অন্নাত আলী খান ১৯৭১ সালে শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন। তার চাচাতো ভাই আবুল হাসেম খান ছিলেন মির্জাগঞ্জ উপজেলা জাগোদলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। এছাড়া তার বড় বোনের ছেলে খান মো. আবু বকর সিদ্দিকী। যিনি বিগত দুই মেয়াদে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

পটুয়াখালী-১ আসনের সাংসদ ও সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শাহজাহান মিয়া বলেন, আমি ২৮ বছর ধরে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলাম। আনোয়ার হোসেন খানের পরিবার আওয়ামী লীগের নয়। এর আগে তিনি আওয়ামী লীগ করেছেন, এমন তথ্যও আমার জানা নেই। কীভাবে আওয়ামী লীগার হয়েছেন, সেটাও আমি জানি না। তিনি নৌকা প্রতীক পেলে কিছু বলার নাই।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন জুয়েল বলেন, আনোয়ার হোসেন খান আগে বিএনপি করতেন। চার-পাঁচ মাস আগে কমিটি অনুমোদন হয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগ সেই কমিটি অনুমোদন দিয়েছে। সেই অনুমোদনে তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। তার পরিবারের কয়েকজন শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন, এ নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের আগের সাধারণ সম্পাদক একটা রেজুলেশন দিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, নৌকা প্রতীকে মনোননের জন্য কেন্দ্রে পাঠানো রেজুলেশনের এক নম্বরে নাম ছিল আব্দুল আজিজ হাওলাদারের। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি।

অভিযোগের বিষয়ে আনোয়ার হোসেন খান বলেন, আমার বাবাকে স্বাধীনতা পরবর্তীতে রিলিফ কমিটির চেয়ারম্যান বানানো হয়েছে। বঙ্গবন্ধু আসার পরও আমার বাবা লঙ্গরখানায় নিজ খরচে মানুষকে খাইয়েছেন। ১৯৮৬ সালে ইউনিয়নে তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর নব্বইয়ের আন্দোলনের পর আমার ভাইয়ের ছেলে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছে। ১৯৯৭ সালে আমি আওয়ামী লীগের কমিটিতে ছিলাম। এর আগ থেকেই আমি আওয়ামী লীগে ছিলাম। পরে একটা আহ্বায়ক কমিটি হয়েছে, সেটাতেও আমি ৯ নম্বর সদস্য ছিলাম। ২০১৯ সালে আমি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হয়েছি। আমি আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য। আমার পরিবারের সদস্যরা ছাত্রলীগে, আওয়ামী লীগে বিভিন্ন সময়ে দায়িত্ব পালন করেছেন।

মির্জাগঞ্জ উপজেলার ৪নং দেউলী সুবিদখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল আজিজ হাওলাদার বলেন, আমি ১৯৬৮ সাল থেকে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে দলের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছি। ২০১৬ সালে আমাকে নৌকা প্রতীক দেয়া হয়েছে। দল ও চেয়ারম্যানের পদে থেকে আমি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেছি। ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য তৃণমূল থেকে কেন্দ্রে পাঠানো তালিকায় ১ নম্বরে আমারা নাম ছিল।

তিনি বলেন, আমি ৫৪ বছর ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছি। অথচ চার মাস আগে বিএনপি থেকে আ.লীগে যোগ দেয়া ব্যক্তিকে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। আমার নৌকা প্রতীকের দরকার নেই। নেত্রী নিজে লিখে আমাকে দল থেকে অব্যাহতি দিলেও কিছু বলব না। তারপরও বিএনপি নেতা, রাজাকার পরিবারের সদস্যকে যাতে নৌকা না দেয়া হয়।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইউনুছ আলী সর্দার বলেন, আমি ১৬ বছর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। তিনি এর আগে কোনোদিনই আ.লীগ করেন নাই। কিছুদিন হলো আমাদের প্রোগ্রামে জড়িত হয়েছে। কিভাবে দলে পদ দিয়েছে- তা জানি না। কাউকে পদ দেয়া হলে তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার থাকা দরকার। এর আগে তিনি বিএনপি, জাতীয় পার্টির সাথে জড়িত ছিলেন। এইবার আওয়ামী লীগে জড়িত হয়েছেন।

(ঢাকাটাইমস/২৫অক্টোবর/এলএ)