আখাউড়ায় সময় মেনে অফিস করেন না সরকারি কর্মকর্তারা

প্রকাশ | ২৬ অক্টোবর ২০২১, ০০:২৮ | আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০২১, ০০:৩০

হান্নান খাদেম, আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)

উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিস তালাবদ্ধ। সময় সোমবার সকাল ৯টা ১০ মিনিট। একটু পরেই একজন লোক এসে অফিস খোলেন। তিনি নিজেকে অফিসের অডিটর পরিচয় দিয়ে বলেন একটু দেরি হয়ে গেছে। অফিসের আর কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারি তখনও আসেননি। 

সকাল ৯টা ২০ মিনিটে কৃষি কর্মকর্তার অফিসের দরজায় তালা দেখা যায়। অফিস পিয়ন মোহাম্মদ আলী সরকার বলেন, স্যার ট্রেনিংয়ে আছেন। সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে উপজেলা মৎস্য অফিস গিয়ে দেখা যায় একটি কক্ষে মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রেজাউল করিম বসে আছেন। উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জ্যোতি কনা দাস তখনও অফিসে আসেননি। মোবাইল ফোনে সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জ্যোতি কণা দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, নাস্তা খাচ্ছি। নাস্তা খেয়েই চলে আসব। তাছাড়া শরীরটা ভালা না। 

সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। এসময় দরজায় লেখা ফিল্ড সুপারভাইভার মো. জুনাঈদের ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘রাস্তায় আছি, আসতেছি’। 

এসব দৃশ্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার অধিকাংশ সরকারি অফিসের। এখানে কর্মরত সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সরকার নির্ধারিত সময় মেনে অফিসে আসেন না। কেউ কেউ আবার অফিস ছুটির নির্ধারিত সময়ের আগেই অফিস ত্যাগ করে চলে যান। 

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসটি উপজেলা পরিষদের তৃতীয় তলায়। সকাল ৯টা ২০টা মিনিটে গিয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নুরজাহান বেগমকে অফিসে বসে থাকতে দেখা যায়। তবে উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার লুৎফুর রহমানের কক্ষের চেয়ার ফাঁকা।। 

সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা তাপস কুমার চক্রবর্তী অফিসে আসেননি। অফিসের এক কর্মচারী জানান, তিনি কসবা উপজেলায় গেছেন। আজকে (সোমবার) আসবেন না।  

এসবের মধ্যে ব্যতিক্রমও আছে। উপজেলা সমবায় অফিসের অফিস সহায়ক হানিফ খাদেম সকাল ৯টার কিছু আগেই অফিস খোলে টেবিল- চেয়ার পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করতে দেখা যায়। তিনি বলেন, সকাল সকাল অফিসে চলে আসি। 

সকাল পোনে ১০টা পর্যন্ত সমবায় কর্মকর্তা দুবরাজ রবি দাস অফিসে আসেননি। তিনিও মোবাইল ফোনে জানান ফিল্ডে আছেন। 

উপজেলা চত্বরের বাইরে একটি ভবনে পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তার অফিস। সকাল সোয়া ৯টায় গিয়ে তার অফিস তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তার সাবিনা ইয়াসমিন তখনও আসেননি। একজন কর্মচারী বলেন ‘স্যার কিছুক্ষণের মধ্যে চলে আসবেন।’ 

সকাল ১০টায় গিয়ে দেখা উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার অফিস খোলা। তবে তখনও হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আবু ইউছুফ নুরুল্লাহ অফিসে আসেননি। মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি রাগের সুরে বলেন, ‘সব সময় যে অফিসে থাকতে হবে এমন তো নয়। বাইরেও তো কাজ থাকতে পারে।’ পরে তাকে ৯টা থেকে ৯টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত অফিসে বসে থাকার সরকারি নির্দেশনার কথা স্মরণ করিয়ে দিলে, তিনি একটু নরম হয়ে বলেন, ‘জেলা অফিস হয়ে এসেছি, তাই দেরি হয়ে গেছে।’

সকাল পোনে ১০টা পর্যন্ত উপজেলা প্রকৌশলীর অফিসে গিয়ে দেখা যায় উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ ও সার্ভেয়ার জহিরুল ইসলাম তখনও অফিসে আসেননি। এসময় অফিসের ইলেকট্রিশিয়ান আবুল হোসেন বলেন, ‘স্যার এখনও আসে নাই। কিছুক্ষণের মধ্যেই আসবেন।’ 

সার্ভেয়ার জহিরুল ইসলাম মোবাইল ফোনে বলেন, সাইড পরিদর্শনে আজমপুর আছি। 

আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সকাল ৯টা থেকে ৯টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত অফিস কক্ষে থাকা বাধ্যতামূলক।

তবে সরেজমিনে দেখা গেছে, অধিকাংশ অফিসে নির্ধারিত সময়ে কর্মকর্তারা আসেন না। ৯টায় অফিসে আসার বাধ্যবাধকতা থাকলেও  বেশির ভাগই সাড়ে ৯টা-১০টার দিকে আসেন। এ সুযোগ নিয়ে অধস্তন কর্মচারীরাও নির্ধারিত সময়ে অফিসে আসছেন না।

এসব বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুমানা আক্তার বলেন, উপজেলা পরিষদের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সরকার নির্ধারিত সময় মেনে অফিস করার নির্দেশ দেওয়া আছে। কেউ এই নির্দেশনা অমান্য করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মাসিক সমন্বয় সভায় এ ব্যপারে আবারও তাগিদ দেওয়া হবে। 

(ঢাকাটাইমস/২৬অক্টোবর/কেএম)