মাইক্রোওয়েভ ওভেনে রান্নায় সতর্কতা

প্রকাশ | ২৮ অক্টোবর ২০২১, ১০:০৮

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

খাবার গরম করা কিংবা কোনো কিছু বেক করার জন্য অনেকেরই পছন্দ মাইক্রোওয়েভ ওভেন। এতে রান্না সহজ হলেও পুষ্টিগুণ ক্ষুন্ন হয়। কিন্তু এতে রান্নায় সতকর্তা অবলম্বন করা জরুরি। না হলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) দাবি, মাইক্রোওভেনে রান্নার ক্ষেত্রে মাইক্রোওভেনের রেডিয়েশনই বিপজ্জনক, তা নয়। তবে অন্যান্য বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা বেশি। এই মাধ্যমে রান্না করার ফলে খাবারের পুষ্টিগুণ কতটা কমছে, প্লাস্টিকের পাত্রে উচ্চ তাপমাত্রায় খাবার গরম করার ফলে তা শরীরে গিয়ে কী ক্ষতি করছে-এ বিষয়গুলি নিয়ে যথেষ্ট চিন্তা রয়েছে।

বিশেষত শুকনো খাবার মাইক্রোওভেনে গরম করলে তাতেই বেশি পরিমাণে কার্সিনোজেনিক উপাদান ‘অ্যাক্রেলামাইড’ উৎপন্ন হয়। বিশেষত, দানাশস্য জাতীয় খাবার শুকনো গরম করলে তাতেই এই উপাদান উৎপন্ন হয়। যেমন, ভাত, বিভিন্ন শুকনো ডাল, রুটি, ডালিয়া, চিঁড়ে ইত্যাদি উচ্চমাত্রায় গরম করলে ক্ষতি। এমনকী, উচ্চ তাপমাত্রায় ২-৩ মিনিট খাবার গরম করলেও তা থেকে এই ক্ষতিকারক উপাদান তৈরি হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের বেল্টসভিল হিউম্যান নিউট্রিশন রিসার্চ সেন্টারের গবেষকের দাবি, সবজি, বিশেষত তরকারি বা রান্না করা সবজি মাইক্রোওভেনে গরম করলে, সবজিতে উপস্থিত উপকারী উপাদান ‘ফ্লোভোনয়েড’-এর মাত্রা কমতে থাকে, প্রায় বিনষ্ট হয়ে যায়। সবজির এই পুষ্টিগুণ হৃদপিণ্ড ভাল রাখতে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। মাইক্রোওভেনে গরম করে খেলে খাবারের এই গুণ থেকে আমরা বঞ্চিত হই। এমনকী, মাইক্রোওভেনে জলে সিদ্ধ করলেও সবজির পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়।

তবে ফ্যাটি খাবার যেমন, দুধ, ডিম, মাখন-ঘি যুক্ত খাবার মাইক্রোওভেনে গরম করলে এই খাবারে উপস্থিত গুড ফ্যাটগুলি নষ্ট হয় রেডিয়েশনের প্রভাবে।

অনেক সময় দেখা যায় মাইক্রোওভেনে গরম করলেও পুরো খাবার ভিতর পর্যন্ত গরম হয় না। বিশেষত, মাংস (রেডমিট), মিষ্টি, কোনও ভাজা খাবার গরমের ক্ষেত্রে এমন দেখা যায়। এতে করে খাবারের মধ্যে অনেক মাইক্রোঅর্গাজমের বৃদ্ধি ঘটে ও ক্ষতিকারক মাইক্রো টক্সিন তৈরি করে। যা শরীরে গিয়ে নানা রোগের বৃদ্ধি ঘটাতে পারে। ডিএনএ-র ড্যামেজও করতে পারে।

আরও একটি বিপজ্জনক ব্যাপার, রেস্তোরাঁ থেকে বিভিন্ন খাবার কিংবা বিরিয়ানি কিনে এনে প্লাস্টিকের কন্টেনারে রেখেই তা মাইক্রোওভেনে গরম করেন অনেকেরই। কিংবা প্লাস্টিকের পাত্রেও গরম করেন, এতে প্লাস্টিকে উপস্থিত বিসফেনল এ খাবারে মিশে শরীর যায়।

ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষকরা প্রায় ৪০০ রকমের প্লাস্টিক, যেগুলো মাইক্রোওভেনে গরম করার যোগ্য বলে দাবি করে, সেগুলি নিয়ে পরীক্ষা করে দেখেছে, তাতেও গরম করলে খাবারে প্লাস্টিকের খারাপ উপাদান মিশছে। বিসফেনল এ, বি শরীরে গিয়ে হরমোন্যাল নানা সমস্যা তৈরি করে, হজমক্ষমতা নষ্ট করে, বন্ধ্যাত্ব ও অ্যাজমার সমস্যা ডেকে আনে।

বিপদ এড়াবেন কীভাবে?

সবসময় কাচের পাত্রে খাবার গরম করুন। শস্যজাতীয় খাবার মাইক্রোওভেনে ইষৎ উষ্ণ গরম করবেন। এই ধরনের খাবার মাইক্রোওভেনে প্রচণ্ড গরম করলে তার পুষ্টিগুণ একেবারেই নষ্ট হয়ে যায়। বিনস, গাজর, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রোকলি, শাক জাতীয় জিনিস মাইক্রোওভেনে গরম না করাই ভাল।

তৈলাক্ত বা চর্বিজাতীয় খাবার গ্যাসে গরম করুন। যে কোনও মাংসের ঝোল মাইক্রোওভেনে গরম না করাই ভাল। অনেক দিনের ফ্রিজে রেখে দেওয়া খাবার সব সময়ই গ্যাসে গরম করা ভাল। কাঁচা সবজি, চাল, ডাল ইত্যাদি সরাসরি মাইক্রোওভেনে দিয়ে রান্না কখনও করবেন না। বরং চটজলদি গরম করার ক্ষেত্রে মাইক্রোওভেন ব্যবহার করা কম বিপজ্জনক।

(ঢাকাটাইমস/২৮অক্টোবর/এজেড)