ইউপি নির্বাচন: প্রতীক বরাদ্দের দিনেই ধামরাইয়ে গুলি-সংহিসতা

সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৮ অক্টোবর ২০২১, ১৭:৪৯

ঢাকার ধামরাইয়ে প্রতীক বরাদ্দের প্রথম দিনেই চার ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে সহিংসতার অভিযোগ বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের। সরকারদলীয় মনোনীত প্রার্থীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে গুলি ছোঁড়া, মারধর ও পোস্টার ছেঁড়াসহ নানা অভিযোগ তুলেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা।

বুধবার প্রতীক বরাদ্দের পরপরই বিকালে গুলি ছোঁড়ার ঘটনা ঘটে রোয়াইল ইউনিয়নে। বালিয়া ইউনিয়নে দুই পক্ষের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে একজনের হাত ভেঙে যায়। এ ছাড়া সন্ধ্যায় মাগরিব নামাজের পর সোমভাগ ইউনিয়নে স্থানীয় এক মসজিদের সামনে মারধরের শিকার হন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীসহ চারজন। রাতে গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নে পোস্টার লাগাতে গিয়ে মারধরের শিকার হয়েছেন আরেকজন।

এসব ঘটনায় রিটার্নিং কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানায় লিখিত অভিযোগ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।

রোয়াইল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল কালাম সামসুদ্দিন মিন্টু জানান, বুধবার বিকালে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থীর কয়েকজন মোটরসাইকেল নিয়ে তার অফিসে হামলা চালায়। এ সময় পিস্তল দিয়ে একটি ফাঁকা গুলি ছুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে আধাঘণ্টা পর চলে যান তারা।

মিন্টু বলেন, ওই ইউনিয়নের খড়ারচর মাঠে ১০০-১৫০টি মোটরসাইকেলে দুই-তিনজন করে আসছে। তাদের প্রত্যেকের হাতে একটা কইরা লাঠি আর নৌকার প্রতীক লাগানো। তারা মূলত চেয়েছিল আমরা প্রতিবাদ করি। আর প্রতিবাদ করলেই বড় ধরনের সংঘর্ষ হতো। এ সময় আমরা অফিসের ভেতরেই বসা ছিলাম। আমি ওসি সাহেব ও রিটার্নিং অফিসারকে জানিয়েছি। তারা বলছেন, লিখিত অভিযোগ দিতে।

এ বিষয়ে রোয়াইল ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজিম উদ্দিন খান বলেন, ‘বিষয়টা আমি জানিও না। আমার বিশ্বাস- আমার যারা সমর্থক তারা এই ধরনের কাজ করবে না। আমার শতভাগ আস্থা আছে নিজের মানুষের প্রতি। ওই প্রার্থী আগেও একবার বলছে, একটা মিছিল গিয়ে তার বাড়ির গেট, দেয়াল ভাঙা হয়েছে। পরে আমি সেই বাড়ির ছবি তুলে এমপি মহোদয়কে দেখাই, সেখানে কিছু হয়নি। সে এমন মিথ্যা অভিযোগ করতেই থাকে।’

এদিকে সোমভাগ ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী আওলাদ হোসেন বলেন, বানেশ্বর পশ্চিমপাড়া এলাকায় সমর্থকদের নিয়ে মাগরিব নামাজ আদায় করে মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় নৌকার প্রার্থী আজাহার চেয়ারম্যানের সমর্থকরা সেখান দিয়ে মিছিল নিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় মিছিল থেকে আমাদের উদ্দেশে স্লেজিং করতে থাকে আজাহারের লোকজন। বিষয়টি ভিডিও করে রাখতে গেলে আমার এক সমর্থকের ফোন ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে আমাকে, ছোট ভাই বাবুকে, সাইফুল ও সুরুজসহ তিন-চারজনকে মারধর করা হয়। পরে তারা ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রাথমিক চিকিৎসা নেন।

তবে নৌকা মনোনীত প্রার্থী আজাহার আলী পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, ‘একটা মারামারির ঘটনা ঘটছে। এতে আমার নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর করেছে আওলাদ হোসেনের লোকজন। সেই বিষয়ে আমি নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিতে উপজেলা পরিষদে এসেছি।’

অন্যদিকে বালিয়া ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘বিকালে একটি ভ্যানে মাইক নিয়ে আমার চারজন কর্মী প্রচারকাজ চালাতে বালিয়া ইউনিয়নের কামারপাড়ার দিকে যাচ্ছিলো। পথিমধ্যে সামনে থেকে আসা প্রায় ৪০-৫০টা মোটরসাইকেলের লোকজন তাদের ওপর হামলা চালায়। তারা সবাই নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মুজিবুর রহমানের কর্মী। তারা রড ও লাঠিসোটা নিয়ে আমার চার কর্মীকেই বেধড়ক মারধর করেছে।’

‘পরে আহত শরিফুলসহ চারজনকেই মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। একজনের অবস্থা মুমূর্ষু। আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাচন অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি।’

অভিযোগের বিষয়ে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মুজিবুর রহমান বলেন, ‘ঘটনাটি আমার জানা নাই। তবে শুনেছি পোলাপান মারামারি করছে, আমি জানি না। অভিযোগের বিষয়টি আপনার কাছেই শুনলাম।’

গাংগুটিয়া ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রহমান বলেন, ‘সন্ধ্যার দিকে আমার কর্মী জাকির হোসেন গান্ধুলিয়া গ্রামে পোস্টার লাগাতে গিয়েছিল। এসময় আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুল কাদের মোল্লার ভাতিজা আবুল কাশেম কাশি তাকে বাধা দেয়। সে প্রতিবাদ করলে কাশি তাকে চড়-থাপ্পড় মারে। এ ঘটনায় আমি থানায় লিখিত অভিযোগ দেব। ’

অভিযোগের বিষয়ে ওই ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুল কাদের মোল্লার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ব্যস্ততার কথা বলে ফোন রেখে দেন তিনি।

ঢাকা জেলা সিনিয়র রিটার্নিং অফিসার মনির হোসেন খান বলেন, ‘এখনো কোনো অভিযোগ পাইনি। এসব বিষয়ে উপজেলা রিটার্নিং অফিসার আছে, নির্বাচনের দায়িত্বই তাদের। রিটার্নিং বরাবর আবেদন করলে তারা ব্যবস্থা নেবেন।’

এবিষয়ে ধামরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘এসব ঘটনায় থানায় কোনো অভিযোগ আসেনি। লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

(ঢাকাটাইমস/২৮অক্টোবর/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :