নরসিংদীর মেয়র লোকমান হত্যা: ১০ বছর ধরে থমকে আছে বিচার

নরসিংদী প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০১ নভেম্বর ২০২১, ২২:১৩

নরসিংদীর সাবেক জনপ্রিয় পৌর মেয়র লোকমান হোসেনের দশম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে। সোমবার তার সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান পরিবার, জেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যরা। এ ছাড়াও মাসব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে জনবন্ধু লোকমান হোসেন ফাউন্ডেশন। এছাড়া সোমবার পৌর শহরের ৯টি ওয়ার্ডের ৭৫টি স্থানে দোয়া ও গণভোজ অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নরসিংদী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল মতিন ভূঁইয়া, নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জি এম তালেব, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক পীরজাদা মোহাম্মদ আলী, নরসিংদীর সাবেক পৌর মেয়র ও নরসিংদী শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান কামরুল, নরসিংদী পৌর মেয়র ও শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন বাচ্চু, নরসিংদী ইন্ডিপেনডেন্ট কলেজের অধ্যক্ষ ড. মশিউর রহমান মৃধা, নরসিংদী পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও শহির শ্রমিক লীগের সভাপতি নূর মোহাম্মদ খন্দকার পারভেজ, জেলা যুবলীগের সভাপতি বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামী ও সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান শামীম নেওয়াজ প্রমুখ।

দোয়া মাহফিলে বক্তারা বলেন, মেয়র লোকমান হোসেন হত্যার ১০ বছর পার হলো। ২০১১ সালের ১ নভেম্বর দলীয় কার্যালয়ে গুলিতে নিহত হন তিনি। চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার বিচারকাজ এখনও একরকম থমকে আছে। আসামিদের সবাই জামিনে। আধুনিক নরসিংদীর রূপকার ছিলেন পৌর মেয়র লোকমান হোসেন। এই জনপ্রিয়তাই তার জন্য কাল হয়ে দেখা দিয়েছিল।

হত্যার ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই কামরুজ্জামান বাদী হয়ে তৎকালীন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদের ছোট ভাই সালাহউদ্দিন আহমেদ ওরফে বাচ্চুকে প্রধান আসামি করে ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তৎকালীন জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ মণ্ডল প্রায় আট মাস তদন্ত শেষে ২০১২ সালের ২৪ জুন সালাহউদ্দিনসহ এজাহারভুক্ত ১১ আসামিকে বাদ দিয়ে মোট ১২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন।

পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে ২০১২ সালের ২৪ জুলাই নরসিংদীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে নারাজি দেন মামলার বাদী। আদালত ওই বছরের ২৫ জুলাই নারাজি আবেদন খারিজ করে অভিযোগপত্র বহাল রাখেন। এরপর একই বছর ২৮ আগস্ট নারাজি খারিজের বিরুদ্ধে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আপিল করেন বাদী। পরে ২ সেপ্টেম্বর আদালত সেই আবেদন গ্রহণ করে ৪ নভেম্বর শুনানি শেষে আবার নারাজি আবেদন খারিজ করেন।

এরপর উচ্চ আদালতে যান বাদী। পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্র বাতিল করে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়ে আদালতে বিচার কার্যক্রম স্থগিত রাখতে রিট পিটিশন করেন বাদী। আদালত আবেদন আমলে নিয়ে নিম্ন আদালতের বিচার কার্যক্রম স্থগিত করেন। এরই মধ্যে জামিনে ছাড়া পাওয়া আসামিরা সুপ্রিম কোটের আপিল বিভাগে মামলার কার্যক্রম স্থগিত রাখতে একটি রিট পিটিশন দাখিল করেন।

এর ধারাবাহিকতায় দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে শুনানির অপেক্ষায় থাকার পর আদালত ২০১৯ সালের ১৪ জানুয়ারি আসামিদের করা রিট পিটিশনটি নিষ্পত্তি করে বাদীর নারাজি আবেদন গ্রহণ করতে এবং বাদী ও সাক্ষীদের জবানবন্দি গ্রহণ করে মামলাটি পুনঃতদন্তের নির্দেশ দেন।

২০১৯ সালের ২৫ জুন দুপুরে নরসিংদী জজ আদালতের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. রকিবুল ইসলাম শুধু বাদী কামরুজ্জামানের জবানবন্দি গ্রহণ করে তদন্ত শেষ করে দেন। পরে বাদী জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রিভিশন আবেদন করেন। পরবর্তী সময়ে করোনা মহামারির কারণে আদালতের কার্যক্রমে কিছুটা স্থবিরতা চলে আসে। বর্তমানে তা শুনানির অপেক্ষায় আছে। সম্প্রতি অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি আবদুল মতিন সরকার মারা গেছেন।

বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. আসাদ আলী বলেন, ‘উচ্চ আদালতের এক আদেশে আসামিদের করা রিট পিটিশন নিষ্পত্তি করে বাদীর দায়ের করা নারাজি আবেদন গ্রহণ করতে নিম্ন আদালতকে নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে নিম্ন আদালত শুধু বাদীর জবানবন্দি গ্রহণের মাধ্যমে মামলার পুনঃতদন্ত শেষ করে দেন। তাই আমরা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রিভিশন আবেদন করেছি।

মামলার বাদী ও শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক মেয়র মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রটি সঠিক ছিল না। সেখানে অভিযুক্ত ১৪ আসামির মধ্যে ১১ আসামিকেই বাদ দেওয়া হয়েছিল। যত দিন পর্যন্ত প্রকৃত আসামিদের বিচারের আওতায় না আনা হবে, তত দিন আমরা আইনি লড়াই চালিয়ে যাব।’ সত্যের জয় একদিন হবেই ইনশাআল্লাহ।

(ঢাকাটাইমস/১নভেম্বর/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :