খুলনায় আমন চাষে ব্যাপক ফলন

শেখ ফেরদৌস রহমান, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৯ নভেম্বর ২০২১, ১২:০৬

খুলনা উপকূলীয় অঞ্চলে বটিয়াঘাটা, দাকোপ, এলাকায় প্রথমবারের মতো (ব্রি) আমন ধান চাষে ব্যাপক ফলন হয়েছে। কম খরচে বেশি ফলন উৎপাদনে স্থানীয় কৃষকেরা আনন্দিত। মূলত জুন থেকে জুলাই মাসের মধ্যে এই ধান বপন করতে হয়। উপকূলীয় অঞ্চলের মাটির লবাণাক্ত নিচু জলবদ্ধতা জমিতে উপযোগী এই (ব্রি) আমন ধান চাষে এর আগে কখনও চাষ করা হয়নি।

এছাড়া প্রতি বিঘা জমিতে এই ধান চাষ শুরু থেকে উৎপাদন করতে অন্যান ধানের তুলনায় খুবই কম খরচে (ব্রি) আমন ধান উৎপাদন করা যায়। এতে করে এসব কৃষক যেমন লাভবান হচ্ছেন তেমনি অন্যান ধান চাষিদেরও (ব্রি) আমন ধান চাষে আগ্রহ বাড়ছে।

সরোজমিনে দেখা যায় দাকোপ পানখালী ইউনিয়নের পুরো আবাদ জমিতে এই এই ধান চাষ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে স্থানীয় (ব্রি) আমন ধান চাষি বিশ্বজিৎ মন্ডল বলেন, সরকারিভাবে ও স্থানীয় একটি এনজিও আমাকে এই ধান চাষ করার জন্য অনুরোধ করেন। প্রথমে একটু দ্বিমত করলেও পরে কৃষি কর্মকর্তা ও এনজিও কর্মীদের কথা মতো আমার প্রায় দুই বিঘা আবাদি জমির উপর এই (ব্রি) আমন ৮৭ ধান চাষ শুরু করি।

তবে প্রতিবছর স্থানীয় যেসব ধান বপন করতাম আর যে ফলন উৎপাদন হতো তার থেকে এই (ব্রি) আমন ধান চাষ করে অনেক বেশি ফলন হয়েছে। এছাড়া এই ধানগুলোর কাণ্ড অনেক বেশি শক্ত হয়। এতে করে ধানের দানা বৃষ্টি বা বাতাশে ঝরে যায় না।

স্থানীয় অন্যান্য ধান চাষ করতে বিঘা প্রতি প্রায় ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। বিক্রি হয় ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকার মতো। আর এই (ব্রি) ৮৭, আমন ধান চাষ করে বিঘা প্রতি সর্বোচ্চ খরচ হয় মাত্র আট থেকে নয় হাজার টাকার মতো। আর বিক্রি করা যাবে প্রায় ৩০ হাজার টাকার মতো। এছাড়া এই ধান চাষ করা খুবই সহজ। বিঘা প্রতি মাত্র ছয় কেজি ধানের বিজ লাগে।

প্রথমে ধান ছোপ দিয়ে তিন দিন সকাল-বিকাল রোদ্রে শুকানোর পর আবার সন্ধ্যায় ধান ভিজিয়ে রাখতে হয়। তিন দিন পর ওই ধান আবার জমিতে ফেলতে হয়। পরবর্তীতে এক বিঘা জমিতে তিন থেকে সাড়ে তিন মন ছোট ছোট পাতো, ধানের চারা তৈরি হয়।

বিশ্বজিৎ মন্ডল বলেন, ‘ধানের চারা আমরা সুতা দিয়ে মেপে সঠিক লাইনে জমিতে বপন করি। এছাড়া মাঝে মাঝে পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বালাইনাশক ব্যবহার করতাম। ধান চাষ করার প্রথম টিএসপি, এমপি, জিপসাম, জিংক সাফলেট ছিটিয়ে মাটিতে মিশিয়ে দেই। পাশাপাশি ইউরিয়া সার তিন কিস্তিতে ২৫ দিন পর, ৪৫ দিন পর, ৬৫ দিন পর সার প্রয়োগ করি। জমির মধ্যে আগাছাগুলো পরিষ্কার রাখি।’

‘তবে সব মিলিয়ে আমি অনেক খুশি যে এই (ব্রি) ৮৭, আমন ধান চাষ করে ভালো ফলন হয়েছে। এ বিষয়ে দাকোপ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, এই (ব্রি) ৮৭ আমনসহ বেশ কয়েকটি জাতের ধান চাষ করলে অন্যান্য স্থানীয় ধানের থেকে ভালো ফলন হয়। এই ধানের জাত রয়েছে (ব্রি) আমন ৮৭, ব্রি ৭৬, বি আর ১০, বি আর ২৩ ধান।

এই ধানের বৈশিষ্ট ১৯০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা। এর কাণ্ডের গোড়া বাঁশের চেয়ে ও শক্ত বাতাশে বা পানির শ্রোতে হেলে পড়া বা ভেসে যায় না। ধানের রং হালকা বাদামি, ধানটির দানা মাঝারি। পাশাপাশি পুষ্ট দানার সংখ্যা বেশি থাকায় ঝরে পড়ে না সহজে।

এই ধানের জীবন্ত মেয়াদকাল ১৫২ দিন থেকে ১৫৬ দিন। এই ধান কাটার সময় অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে নভেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত। ধানটির ভাত রান্নার পর মাঝারি মোটা ও ভাত সাদা ঝরঝরে হয়, যা দেখতেও চমৎকার লাগে। ১০০টি পুষ্ট দানার পরিমাপ ২৬ গ্রামের মতো হয়ে থাকে। পাশাপাশি এই ধানের ভালো ফলন উৎপাদন হওয়াতে স্থানীয় চাষিদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।

(ঢাকাটাইমস/৯নভেম্বর/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :