বিএডিসির খাল খননে উপকৃত হবেন তিন হাজার কৃষক

শায়লা পারভীন, তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ)
 | প্রকাশিত : ১১ নভেম্বর ২০২১, ০০:৫৩

সিরাজগঞ্জে প্রভাবশালীরা খাল দখল করে ১৮টি পুকুর খনন করে মাছ চাষ করায়, রায়গঞ্জ ও তাড়াশ উপজেলার প্রায় তিন হাজার বিঘা জমি জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হওয়ায়, বছরের অধিকাংশ সময় থাকত পানিতে ডুবে। তিন ফসলি জমি পরিণত হয় এক ফসলে। খালটি পুনঃখননের দাবিতে এলাকার কৃষক বছরের পর বছর মানববন্ধনসহ আন্দোলন করে আসছিলেন।

কৃষকের এ দুরবস্থা নিরসনে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) পানাসি প্রকল্পের আওতায় খালটি পুনঃখনন শুরু করায় সরাসরি উপকৃত হবেন এ এলাকার কয়েক হাজার কৃষক।

সূত্র জানায়, ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে বিএডিসির পাবনা-নাটোর-সিরাজগঞ্জ জেলায় ভূ-উপরিস্থ পানির মাধ্যমে সেচ প্রকল্পের অর্থায়নে, রায়গঞ্জের ধুবিল ইউনিয়নের ভরাট ও দখল হয়ে যাওয়া চৌধুরী ঘুঘাট খালটি ধুবিল থেকে ঝুরঝুরি ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় ৮.৫ কিলোমিটার সার্ভে করা হয়। উদ্যোগ নেয়া হয় পুনঃখননের।

বিএডিসি ও স্থানীয় সূত্র জানায়, খালটি ছিল এককালের প্রবাহমান খরস্রোতা করতোয়া নদী। কালের পরিক্রমায় তা পরিণত হয় মরা নদীতে। এরপরে শুরু হয় দখল ও দূষণ। হারিয়ে যায় নদীর অস্তিত্ব। পরিণত হয় সরু খালে। খালটি দখল ও ভরাট হয়ে যাওয়ায় রায়গঞ্জ ও তাড়াশ উপজেলার শত শত হেক্টর জমি জলবদ্ধতায় তলিয়ে যায়। ফসল উৎপাদন করতে না পারায় নিঃস্ব হয়ে পড়েন কয়েক হাজার কৃষক। এ কারণে খালটি উদ্ধারসহ পুনঃখননের দাবিতে আন্দোলনে নামেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক। তাদের দাবি, উজানের পানি এ খাল দিয়ে মূল চলনবিলে গিয়ে মিশে। কিন্তু খালটি দখল থাকায় পানির প্রবাহবন্ধ হয়ে গিয়ে শুরু হয়েছে জলাবদ্ধতা।

কৃষকের এ দাবিতে এগিয়ে আসে বিএডিসি কর্তৃপক্ষ। ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে রায়গঞ্জে উপজেলার অংশে তারা ৮.৫ কিলোমিটার খাল খনন শুরু করে। ইতোমধ্যে এ প্রকল্পের ৭৫ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। খালটি পুনঃখনন সম্পন্ন হলে প্রায় ৩৫০ হেক্টর অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আসবে। এক ফসলি জমি তিন ফসলি জমিতে রূপান্তরিত হবে এবং জলাবদ্ধতা দূর হবে। এতে করে প্রায় ১৭৫০ মে:টন অতিরিক্ত ফসল উৎপাদন হবে। কৃষি সংশ্লিষ্ট কাজে প্রায় তিন হাজার কৃষক লাভবান হবেন।

এ প্রসঙ্গে আমশড়া গ্রামের কৃষক আরিফ, আব্দুস সোবাহান ও আব্দুস সামাদ বলেন, খালটি খনন সম্পন্ন হলে তাদের দীর্ঘ দিনের প্রত্যাশা পূরণ হবে। জলাবদ্ধতা দূর হলে জমিতে তিন ফসল উৎপাদন সম্ভব হবে।

খাল খনন ও জলাবদ্ধতা দূরীকরণ নিয়ে আন্দোলনে নেতৃত্বে দেয়া নেতা মীর শহিদুল ইসলাম শহিদ বলেন, রায়গঞ্জ উপজেলা অংশে খাল পুনঃখনন করা হলেও, তাড়াশ উপজেলা অংশে আরো আট কিলোমিটার পুনঃখননের আওতায় আনলে, তবেই এ অঞ্চলের জলাবদ্ধতার সমস্যা পুরোপুরি দূর হবে।

সিরাজগঞ্জের বিএডিসির নির্বাহী প্রকৌশলী মাজুদ আলম বলেন, খালটি দখল ও ভরাট হয়ে যাওয়ায় বিরাট অংশজুড়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হওয়ায় হাজার হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হন।

খালটি পুনঃখনন করতে গিয়ে প্রভাবশালীদের ১৮ টি পুকুর উচ্ছেদ করতে হয়েছে। খননের কাজ সম্পন্ন হলে একদিকে যেমন জলাবদ্ধতা দূর হবে,তেমনি এক ফসলি জমিগুলোতে তিন ফসল উৎপাদন হবে। যা জাতীয় উৎপাদনে অতিরিক্ত ১৭৫০ মে:টন ফসল নতুন করে যোগ হবে।

রায়গঞ্জ-তাড়াশ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. আব্দুল আজিজ বলেন, রায়গঞ্জ উপজেলা অংশে ইতোমধ্যে কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তাড়াশ অংশের কাজও সম্পন্ন করা হবে, প্রয়োজনে জমি অধিগ্রহণ করে হলেও কাজ সম্পন্ন করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/১১নভেম্বর/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :