নুহাশ পল্লীতে শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় হুমায়ূন আহমেদের জন্মবার্ষিকী উদযাপন

আবুল হাসান, গাজীপুর
| আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২১, ১৮:২১ | প্রকাশিত : ১৩ নভেম্বর ২০২১, ১৮:১৩

শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় গাজীপুরের নুহাশ পল্লীতে উদযাপন করা হলো জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ৭৩তম জম্মবার্ষিকী। দিনভর ফুল দিয়ে গভীর শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় ভক্তরা স্মরণ করেন জনপ্রিয় এ লেখককে।

হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন উপলক্ষে শনিবার গাজীপুরের নুহাশ পল্লীতে কেক কাটা, মোমবাতি প্রজ্জ্বলন, কবর জেয়ারতসহ নেয়া হয় নানা কর্মসূচি। আনন্দ ও বিষাদ মিশেল এই দিনে জনপ্রিয় ও ভিন্নমাত্রার লেখককে নিয়ে ভুল চর্চা নয়, শুদ্ধতম চর্চা ও গবেষণার আহবান জানিয়েছেন হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন।

আজ সকাল থেকে শীতের হালকা কুয়াশা মাড়িয়ে এবং গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি উপক্ষো করে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসেন নন্দিত লেখক হুমায়ূন আহমেদের ভক্তরা। সাইকেল, মোটরসাইকেল ও বাসে চড়ে হলুদ পাঞ্জাবি ও নীল শাড়ি পরা হিমু পরিবারের সদস্যরাও আসছেন। কবরে ফুল দিয়ে গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন সাংবাদিক, লেখক, সাহিত্যিকসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ। ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন তারা।

এদিন হুমায়ূনপত্নী মেহের আফরোজ শাওন তার দুই পুত্র সন্তান নিষাদ ও নিনিদকে সঙ্গে নিয়ে নুহাশ পল্লীতে আসেন। বেলা ১১টার দিকে মেহের আফরোজ শাওন তার দুই পুত্র সন্তান নিয়ে হুমায়ূন আহমেদের কবরে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন। এসময় তারা সেখানে প্রয়াত এই লেখকের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেন।

এসময় হুমায়ূন আহমেদের অবিস্মরণীয় লেখা বই, নাটক, সিনেমা নিয়ে ভক্তরা জানান তাদের অনুভূতি। ভাললাগা ও ভালবাসার প্রেরণা থেকেই তারা এখানে দূর-দূরান্ত থেকে এসেছেন বলে জানান।

তারা বলেন, হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন সৃষ্টিশীল মানুষ। তার লেখা নাটক সিনেমায় গ্রামীণ জীবন ও মানুষের কথা উঠে এসেছে। বর্তমানে নাটক সিনেমায় এগুলো তেমন দেখা যায় না, বাণিজ্যিক চিন্তাভাবনাই বেশি থাকে।

যানজট ও ভোগান্তি ছাপিয়ে অনেক প্রকাশক, শিল্পীও ছুটে এসেছেন নুহাশ পল্লীতে। ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তারাও। প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদের শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয় জানিয়ে তারা বলেন, এখনো হুমায়ূন আহমেদের বই পাঠকসেরা।

এ বিষয়ে কাকলী প্রকাশনীর স্বত্ত্বাধিকারী এ কে নাসির আহমেদ সেলিম বলেন, পৃথিবীর নিয়ম অনুযায়ী আমাদের রবীন্দ্র নাথ, নজরুল যেমন আরেকজন আসবে না; তেমনভাবে হুমায়ূন আহমেদও আরেকজন আসবে না। শতাব্দী পর হয়তো তার শূন্যতা পূরণ হবে, নতুন কেউ আসবে। তারপরও তার ছোট ভাই জাফর ইকবাল লিখছেন, তবে তা শুধু শিশুদের জন্য। সব বিষয়ে লেখার মতো লেখকের বড্ড অভাব।

তিনি বলেন, আমার প্রকাশনী থেকে হুমায়ূন আহমেদের ৪০টি বই বেরিয়েছে। সব বই বেশ জনপ্রিয়, তবে কোথাও কেউ নেই বইটি বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।

কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে হুমায়ূন আহমেদের বাসভবনের সামনে তার ৭৩তম জম্মদিনের কেক কাটা হয়।

এর আগে রাতে ১০৭৩টি মোমবাতি জ্বালিয়ে লেখককে স্মরণ করেন নুহাশ পল্লীর কর্মীরা। কেক কাটা শেষে সাংবাদিকদের মেহের আফরোজ শাওন বলেন, হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে অনেক গবেষণা, চর্চা হচ্ছে। এই চর্চাটি বাড়ুক, সবাই হুমায়ূন আহমেদ সম্পর্কে জানুক। কিন্তু তাকে নিয়ে যেন ভুল চর্চা না হয় সেটি আমার প্রত্যাশা।

ভক্তদের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হিমু পরিবহনে চড়ে আসেন হলুদ পাঞ্জাবি পরা হিমুরা। এছাড়া নুহাশ পল্লীর কর্মকর্তা, কর্মচারীরা কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এছাড়া দিবসটি পালনের লক্ষ্যে শিল্পকর্ম প্রদর্শন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ দিনব্যাপী নানা আয়োজন করা হয়েছে।

১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন নন্দিত কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ। তার বাবা ফয়েজুর রহমান ও মা আয়েশা ফয়েজ। ২০১২ সালে ১৯ জুলাই মরণ ব্যধি ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে তিনি নিউইয়র্কের একটি হাসপাতালে মারা যান। বাংলা সাহিত্যের এ বরপুত্র স্মৃতি আর লেখনীর মাধ্যমে তার জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হচ্ছেন। তিনি অছেন এবং থাকবেন তার ধ্রুপদী সাহিত্যের মাধ্যমে এমনটাই আশা তার ভক্ত আর অনুরাগীদের।

(ঢাকাটাইমস/১৩নভেম্বর/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :