আজ বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস

ডায়াবেটিসে চোখ-কিডনি ও অন্যান্য অঙ্গের ক্ষতি হয়

অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ
| আপডেট : ১৪ নভেম্বর ২০২১, ১৩:৪৮ | প্রকাশিত : ১৪ নভেম্বর ২০২১, ১৩:১০

আজ ১৪ নভেম্বর বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস। বিশ্ব জুড়ে ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতি বছর এ দিবস পালন করা হয়। বিশ্ব জুড়ে ডায়াবেটিস রোগ ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ায় বিশ্ব ডায়াবেটিস ফেডারেশন (আইডিএফ) ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১৯৯১ সালে ১৪ নভেম্বরকে ডায়াবেটিস দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এ দিন বিজ্ঞানী ফ্রেডরিক বেনটিং জন্ম নেন এবং তিনি বিজ্ঞানী চার্লস বেস্টের সঙ্গে একত্রে ইনসুলিন আবিষ্কার করেন।

ডায়াবেটিস এখন আর অপরিচিত কোনো রোগ নয়। একেবারেই অতি পরিচিত একটি রোগ। দিনে দিনে এর প্রকোপ বেড়েই চলেছে। সেই সাথে বাড়ছে ডায়াবেটিস জনিত জটিলতা এবং মৃত্যুঝুঁকিও। অথচ একটু সচেতন হলেই এ রোগ হওয়া থেকে এবং ডায়াবেটিস হলেও এ রোগের জটিলতা সহজেই রুখে দেয়া সম্ভব।

ডায়াবেটিস হলে শরীরের বিভিন্ন অংশে গ্লুকোজ ব্যবহার কমে যাওয়ার জন্য রক্তে গ্লকোজের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং ফলে প্রস্রাবের সাথে গ্লুকোজ বের হয়। ঘন ঘন পানির পিপাসা পায়, বেশি বেশি প্রস্রাব হয় ও শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়।

অসংক্রামক রোগের মধ্যে ডায়াবেটিস অন্যতম। ডায়াবেটিস জটিলতার কারণে মানুষের হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, স্নায়ুরোগ, গর্ভকালীন জটিলতা ও কিডনি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। অনেক সময় শরীরের নিম্নাঙ্গ কেটেও ফেলতে হতে পারে।

দীর্ঘস্থায়ী ডায়াবেটিসের জটিলতায় অনেক মানুষ প্রতি বছর অকাল মৃত্যুতে নিপতিত হচ্ছেন। এসব ছাড়াও ডায়াবেটিসের কারণে চোখের ওপর অনেক প্রভাব সৃষ্টি হতে পারে। এখন চোখের ওপর ডায়াবেটিসের প্রভাব নিয়ে আমরা আলোচনা করব।

চোখের ওপর ডায়াবেটিসের প্রভাব ও চোখের বিভিন্ন পরিবর্তন কত দিন ধরে ডায়াবেটিস আছে তার ওপর নির্ভর করে। অপর্যাপ্ত ডায়াবেটিস কন্ট্রোলের কারণেও কখনো কখনো চোখের পরিবর্তন হয়। ডায়াবেটিস রেটিনোপ্যাথি চোখের অন্যতম প্রধান সমস্যা। চোখের দৃষ্টিশক্তির ওপরও ডায়াবেটিসের প্রভাব আছে। চোখের লেন্সে পুষ্টিহীনতা ও রাসায়নিক পরিবর্তনের কারণে লেন্সের আকার বৃদ্ধি পায়। প্রতিসরাংক বারি ফ্রাকটিভইন ডেঙ্গ পরিবর্তনের ফলে হ্রস্বদৃষ্টি বামাইয়োপিয়া হয় এবং কাছে দেখতে অসুবিধা হয়।

ডায়াবেটিসের কারণে চোখে যেসব সমস্যা হয়: ডায়াবেটিসজনিত ছানি- এটা দুই ধরনের হয়।

১. বয়স্ক এবং ডায়াবেটিস রোগীদের ছানি তাড়াতাড়ি হয়।

২. জুভেনাইল ডায়াবেটিস রোগীদের ছানি অল্প বয়সেই হয়।

কনজাংটিভার পরিবর্তন- শিরাগুলো প্রসারিত হয় এবং শিরার শেষ ভাগের ক্যাপিলারি লম্বা হয়। ধমনী শিরার আনুপাতিক হার ১:৭ হয়।

আইরিশের পরিবর্তন- এখানে পানি জমে ও আইরিশ ফুলে যায় এবং পিগমেন্ট এপিথেলিয়াম নষ্ট হয়। আইরিসের প্রদাহ হয়, নতুন রক্তনালী তৈরি হয় এবং চোখের ভিতর রক্ত জমে ও নিওভাসকুলার গ্লুকোমা হয়। ভিট্রিয়াস ও রেটিনাতে রক্তক্ষরণ হয় ও নতুন রক্তনালী তৈরি হয়। স্নায়ু বৈকল্য, ট্যারা চোখ ও দৃষ্টিশক্তির ক্ষতি হয়।

ডায়াবেটিক রোগীদের গ্লুকোমা থাকতে পারে। এক বস্তুকে দুটি দেখে। ডায়াবেটিক রোগীদের অনেকেরই ধারণা যে তাদের চোখের চিকিৎসা শুধু ডায়াবেটিস হাসপাতালেই সম্ভব। এই ভেবে তারা সবাই ডায়াবেটিস হাসপাতালে ভিড় জমায় এবং নানা বিড়ম্বনার শিকার হয়। কিন্তু ডায়াবেটিক রোগীদের এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডায়াবেটিক রোগীদের ছানিসহ সব রোগের চিকিৎসা সফলভাবে নির্বিঘ্নে করা হয়। এসব হাসপাতালে ডায়াবেটিসসহ চোখের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন এবং অন্যান্য সব বিষয়ের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন। তারা ডায়াবেটিক রোগীদের প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসা করে থাকেন।

ডায়াবেটিস প্রতিরোধে প্রয়োজন শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, শাকসব্জি ও ফলমূল বেশি খাওয়া, নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করা, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়মিত মাপা এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ করা। তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকা, চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত ওষুধ পরিবর্তন বা সেবন বন্ধ না করা।

ডায়াবেটিস শর্করাজাতীয় খাদ্যের বিপাক প্রক্রিয়াজাত জটিলতাজনিত রোগ। ইনসুলিন একটি অগ্ন্যাশয় নিঃসৃত হরমোনের অভাবজনিত কারণে ডায়াবেটিস রোগ হয় এবং অনেক সময় ইনসুলিনের প্রতিদ্বন্দ্বী এ rowth Hormo বেশি থাকলে ডায়াবেটিস হয়ে থাকে।

এদেশের শতকরা ৯০ ভাগ রোগী টাইপ দুই প্রকারের। কিডনীতে নেফ্রপ্যাথি ও চোখে রেটিনোপ্যাথী হয়। ডায়াবেটিস হলে চোখে আর যেসব সমস্যা হতে পারে তা হলো চোখের অভ্যন্তরে রক্তক্ষরণ, চোখের পাতায় গোটা ওঠা, আইরিসে নতুন রক্তনালি হওয়া, চোখের ঘন ঘন চশমা পরিবর্তন, চোখে ছানি পড়া, ঘোলা বা কম দেখা, চোখের ম্যাকুলায় পানি জমা, ব্লাড সুগার কমলে হাই পারমেট্রো পিয়া ও ব্লাড সুগার বাড়লে মায়োপিয়া বা দূরে দেখতে অসুবিধা হয়। চোখের মাংসপেশীসমূহ অবশ হতে পারে যদি ডায়াবেটিস কন্ট্রোল না করা হয়।

এগুলো ছাড়াও রাতকানা, চোখ ওঠা, কর্নিয়ায় অবশ ভাব হওয়া ও ঘা হওয়া স্কোরার প্রদাহ ও রেটিনা ছিঁড়ে যাওয়া ও ডায়াবেটিসের সঙ্গে চোখের সম্পৃক্ততাও মারাত্মক ক্ষতিকর দিক যাতে যে কেউ অন্ধ হয়ে যেতে পারে। নিয়মিত চক্ষু পরীক্ষা করলে অন্ধত্ব থেকে বাঁচা সম্ভব।

সুতরাং ডায়াবেটিসের কারণে চোখের জটিল রোগ ও অন্যান্য অঙ্গের ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা থেকে মুক্তি পেতে সব রোগীকে সতর্ক হতে হবে ও নিয়মিত চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।

লেখক: উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :