কৃতীমান গবেষক, সাহিত্যসমালোচক, অনুবাদক এবং ভাষাসৈনিক মোবাশ্বের আলী

এম. কে. জাকারিয়া
 | প্রকাশিত : ১৪ নভেম্বর ২০২১, ১৬:৪৯

একুশে পদকপ্রাপ্ত এবং বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত কুমিল্লার কৃতী সন্তান অধ্যাপক মোবাশ্বের আলীর মৃত্যুবার্ষিকী ছিল ৯ নভেম্বর।জানাচ্ছি বিনম্র শ্রদ্ধা অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে।

পেশাগত সম্পৃক্ততা নির্বিশেষে ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তাকে যদি তাঁর অভ্যন্তরীণ সম্ভাবনা পরিমাপ করার জন্য নির্ভরযোগ্য মাপকাঠি হিসেবে নেওয়া হয়, তবে সর্বোপরি অধ্যাপক মোবাশ্বের আলী এমন একজন হবেন যিনি নিজের যোগ্যতায় জনপ্রিয় ছিলেন।

সারা জীবন তিনি ভাষা ও সাহিত্যের ক্ষেত্র পাড়ি দিতেন। মূলত একজন শিক্ষাবিদ, পেশায় একজন শিক্ষক মোবাশ্বের আলী ঈর্ষণীয় স্বাতন্ত্র্যের সাথে ভাষা ও সাহিত্যের অনেক শাখায় দক্ষতা অর্জন করেছিলেন।

বহুমুখী সাহিত্যিক হওয়ার পাশাপাশি তিনি একজন বিশিষ্ট লেখক এবং আত্মদর্শী গবেষক ছিলেন।

প্রফেসর কবির চৌধুরী মন্তব্য করেন যে, তার রচনাগুলো বাংলা সাহিত্যে একটি নতুন মাত্রা যোগ করে সমাজ তথা জাতির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করতে। মোবাশ্বের আলীর পৈতৃক বাড়ি কুমিল্লা শহরের বাগিচাগাঁওয়ে। তিনি ১ জানুয়ারি, ১৯৩১ সালে একটি সম্ভ্রান্ত, শিক্ষিত এবং উচ্চ আলোকিত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। আলীগড় মুসলিম কলেজের আইনে স্নাতক (পরে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়) মোবাশ্বের আলীর পিতা প্রয়াত নওয়াজেশ আলী ছিলেন প্রথম বি. এল. বৃহত্তর কুমিল্লা জেলার।

তার দাদা প্রয়াত বজলুল হকও ছিলেন প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বৃহত্তর কুমিল্লা জেলার প্রথম স্নাতক। ব্রিটিশ শাসনামলে তিনি ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।

ভাষা আন্দোলনের ঐতিহাসিক বছরে মোবাশ্বের আলী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।

শিক্ষকতা পেশা বেছে নিয়ে যোগদান করেন তিনি নেত্রকোনা কলেজ, ময়মনসিংহে ১৯৫৩ সালে। ১৯৫৪ সালে তিনি যশোরের এম. এম. কলেজে স্থানান্তরিত হন। সেখানে তিনি ছিলেন চার বছর ।

এরপর তিনি যোগদান করেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে । সেখানে তিনি ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত শিক্ষকতা করেন এবং পরে তিনি বি. এল. বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, খুলনায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসাবে ট্রান্সফার হন এবং ১৯৮০ সালে চট্টগ্রামের এতিহ্যবাহী সরকারি কলেজ হাজী মুহম্মদ মহসিন কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং ১৯৮৭ সালে অবসর গ্রহণের আগ পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন তিনি সেখানে।

বাংলা সাহিত্যে মোবাশ্বের আলীর ব্যক্তিগত অবদান ১৯৫৮ সালে শুরু হয় যখন রাশিয়ার নোবেল পুরস্কার বিজয়ী বরিস পাস্তারনাকের ওপর তার আলোকিত প্রবন্ধটি একটি বাংলা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়- সমকাল প্রখ্যাত কবি ও সাহিত্যিক সিকান্দার আবু জাফর দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ও সম্পাদিত।

প্রফেসর মোবাশ্বের আলী বাংলার সমান্তরালে গ্রীক, ল্যাটিন ও ইংরেজি সাহিত্যের প্রতি গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেন। বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক মনসুর মুসা বলেন, অধ্যাপক মোবাশ্বের আলী বাংলা গবেষণাকে সমৃদ্ধ করতে কঠোর পরিশ্রম করেছেন এবং জাতির জন্য অবদান তাঁর মৃত্যুর পরেও স্মরণ করা হবে।

তিনি চলচ্চিত্র পুরস্কার জুরি বোর্ডের সদস্যও ছিলেন। প্রফেসর মোবাশ্বের আলী অনেক পুরস্কারের গর্বিত প্রাপক ছিলেন।

বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৭৪), একুশে পদক (১৯৯২), মধুসূদন একাডেমি পুরস্কার (১৯৯৩), বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ পুরস্কার (১৯৯৩), মানবসম্পদ উন্নয়নে শ্রেষ্ঠত্বের জন্য র্যা পোর্ট পুরস্কারসহ (২০০৪) অনেক পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি। মৃত্যুর পর তাঁর অবদানের জন্য তিনি ভারত থেকে এমটিসি গ্লোবাল অ্যাওয়ার্ডও পেয়েছিলেন। আমরা আশা করবো প্রফেসর মোবাশ্বের আলীকে মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হোক। কুমিল্লায় তার নামে একটি সড়কের অন্তত নামকরণ করা হোক এবং তার যে কবরস্থান মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে আছে সেটিকে স্থায়ী করা হোক।

লেখক

নির্বাহী পরিচালক (বিপণন) পিপলস ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড

ও সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :