ওয়েবিল বন্ধ হয়নি আজও, ভাড়া নিয়ে তর্কাতর্কি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৫ নভেম্বর ২০২১, ১৪:২১ | প্রকাশিত : ১৫ নভেম্বর ২০২১, ১৪:২০

সিটিং সার্ভিস বা ওয়েবিলের নামে কোনো গণপরিবহন চলবে না বলে বাস মালিকদের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হলেও আজও তা বন্ধ হয়নি। রবিবার থেকে ওয়েবিল বন্ধের কথা বলা হলেও দ্বিতীয় দিনেও রাজধানীর সিটিং সার্ভিস গাড়িগুলোতে চলছে ওয়েবিল কার্যক্রম। নেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। ফলে ভাড়া নিয়ে গাড়িতে গাড়িতে যাত্রীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ড করতে দেখা গেছে যাত্রীদের।

সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন ওয়েবিল চেকিং পয়েন্ট ঘুরে এমনটাই দেখা গেছে। তবে ভিন্ন ভিন্ন কথা বলছে বিভিন্ন পরিবহনের ওয়েবিল চেকার এবং গাড়ির স্টাফেরা। চেকারের ভাষ্যমতে মালিকপক্ষের যাত্রীদের হিসাব রাখতে চলছে ওয়েবিল। তবে ওয়েবিল অনুযায়ী বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে না বলে দাবি করেন। এদিকে গাড়ির যাত্রীরা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা বলছেন চেক প্রতি ভাড়া বেশি নেওয়া হচ্ছে। পরিবহন স্টাফ বলছেন চেক প্রতি ৩ টাকা ভাড়া বাড়িয়েছে মালিক পক্ষ।

রাজধানীর কলেজগেট এলাকায় এম এম লাভলী পরিবহনের ওয়েবিল চেকার বলেন, ‘এখন তো সব গাড়ি সরকার লোকাল করে দিছে। আর ওয়েবিল সিস্টেম নাই। এখন প্রতিটা গাড়ি লোকাল ভাড়াই নিতেছে। কিন্তু এখন ওয়েবিলে যে হিসাবটা হচ্ছে তা মালিককে যাত্রীর হিসাব পাওয়ার লাইগা। এই ওয়েবিলটা না থাকলে মালিক যাত্রীদের হিসাব পাবে না। যাত্রীরা গাড়িতে উঠে কিলোমিটার হিসাবে ১০ টাকা ভাড়া আসলে ১০ টাকাই দিবে। আগের মতো কোন সিটিং ভাড়া নেওয়া হচ্ছে না। এই হিসাবটা না থাকলে গাড়ির সব টাকাতো ড্রাইভার হেলপাররাই খায়া ফালাইবে।’

লাব্বাইক পরিবহনের ওয়েবিল চেকার বলেন, ‘হিসাব অনুযায়ী যাত্রীদের ভাড়া বাড়েনি। যেমন ধরেন আমিন বাজার থেকে বাংলামোটর ১৫ টাকা ভাড়া ছিল। তেলের দাম বাড়ানোর পরেও ভাড়া বাড়াইনি। তারপরেও যদি পাবলিক ভাড়া নিয়ে এইরকম ঝামেলা করে তাহলে মালিকরা দেবে গাড়ি বন্ধ করে। কারণ মালিকের না পোষালে মালিক গাড়ি চালাবে কিল্যাইগা। আর ওয়েবিল বন্ধ করে দিয়েছে। ওয়েবিল দেইখা মালিকের হিসাব নিতে হবে না। হিসাবের জন্য মালিকের একটা ওয়েবিল কাগজ লাগবেই।’

নীলাচল পরিবহনের ওয়েবিল চেকার বলেন, ‘ভাই আমাদের পেটেতো লাথি দেওয়ার দরকার নেই ভাই। আমরা মাসে প্রায় ১০ হাজার টাকা বেতনে কাজ করি। কোম্পানি থেকে বলে আমাদের ওয়েবিলে লিখে দিতে আমরা লিখে দেই। কোম্পানি যে ভাড়া ঠিক করে দেয় গাড়িতে সেই ভাড়াই নেওয়া হয়। এমন না যে পাবলিকের কাছ থেকে কিছু ভাড়া বেশি নিলে আমাদের পকেটে ঢোকে। সরকার যে ভাড়া ঠিক করে দিয়েছে তাই নিচ্ছে গাড়িতে। শুধু চেক হচ্ছে যাত্রীর হিসাব রাখার জন্য।’

সবার ভাষ্য একই যে মালিকপক্ষ থেকে ওয়েবিল বন্ধের কোন নির্দেষ আসে নাই। যাত্রীদের হিসাব মেলানোর জন্যই ওয়েবিল এখনও চালু রেখেছে মালিকরা। তবে ওয়েবিল অনুযায়ী ভাড়া নেওয়া হচ্ছে না। সকল গাড়ি লোকাল হিসেবে চলছে এবং কিলোমিটার হিসেবে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।

এদিকে ওয়েবিল বন্ধের দ্বিতীয় দিনেও অনেক গাড়িতে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়াকে কেন্দ্র করে যাত্রীদের সঙ্গে তর্কে জড়াতে দেখা গেছে গাড়ির স্টাফদের। যাত্রীদের অভিযোগ গাড়িতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।

এম এম লাভলী পরিবহনের যাত্রী নাহিদ হাসান বলেন, ‘কলেজগেট থেকে উঠেছি যাবো ফার্মগেট। ভাড়া নিয়েছিল ২০ টাকা। পরে ঝামেলা করায় ১৫ টাকা রেখেছে ৫ টাকা ফেরত দিয়েছে। এখনতো গাড়িতে কোন সিটিং নাই। তবুও এত বেশি ভাড়া নিচ্ছে। কিলোমিটার হিসেব করলে এতটুকু রাস্তা ১০ টাকাও ভাড়া আসবে না।

অন্য এক যাত্রী বলেন, সিটিং সার্ভিস থেকে লোকাল করে দিয়ে এখন এদের লাভ হয়েছে। এখন ভাড়াতো বেশি রাখছেই সেই সাথে যাত্রীও তুলছে ইচ্ছামতো। এখন এদের লাভের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে গেছে।

পাশে থাকা আরেক যাত্রী বলেন,‘আগেতো ভাড়া নিত সিটিং হিসেবে। সিটিং হিসেবে ভাড়া নিত ১৫ টাকা কিন্তু এখন তো কিলোমিটার হিসেবে। সেই হিসেবেতো ভাড়া আসে ১৫ টাকারও কম। সে ক্ষেত্রেতো তো আমরা আগের ভাড়ার থেকে বেশি ভাড়া দেবো না। আমরা এখন ভাড়া দেবো কিলো হিসেবে। কিন্তু এরা আগের সিটিং ভাড়ার সঙ্গে নতুন করে ভাড়া যোগ করে বৃদ্ধি করে ভাড়া নিচ্ছে। বলছে চেক প্রতি ভাড়া বাড়ানো হয়েছে ৩ টাকা।’

এ ব্যাপারে এম এম লাভলী পরিবহনের চালকের সহকারীর সঙ্গে কথা বললে তিনি কোন সুনির্দিষ্ট উত্তর দিতে পারেননি। তিনি বলেন, প্রতি চেকে তিন টাকা করে ভাড়া বাড়িয়েছে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব এনায়েত উল্ল্যাহ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আপাতত সিটিং সার্ভিস ও গেটলক সার্ভিস বন্ধে কাজ করছি। এরপর ওয়েবিল বন্ধে কাজ শুরু হবে। যারা বাড়তি ভাড়া আদায় করছে, বিআরটিএর মোবাইল কোর্ট তাদের জরিমানা করছে, ডাম্পিং করছে।’

কবে নাগাদ ওয়েবিল বন্ধ হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেটা এখনো বলতে পারছি না।’ ওয়েবিলের সঙ্গে ভাড়ার কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানান এই পরিবহন নেতা।

পরিবহন মালিকরা ওয়েবিল টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে কি না জানতে চাইলে এনায়েত উল্ল্যাহ বলেন, ‘না, আমরা টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করব কেন?’ এরপর ব্যস্ততা দেখিয়ে কল কেটে দেন তিনি।

(ঢাকাটাইমস/১৫নভেম্বর/কেআর/এমআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :