গাইবান্ধা জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ঘিরে অবৈধ স্থাপনা

জাভেদ হোসেন, গাইবান্ধা
 | প্রকাশিত : ১৭ নভেম্বর ২০২১, ১৮:১৯

দূর থেকে দেখলে মনে হবে এটা কোনো কোম্পানি কিংবা ব্যক্তিগত কমপ্লেক্স। শপিংমলও মনে হতে পারে। মূলত এটি গাইবান্ধা জেলার মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স। ভবনের মূল ফটকে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের সাইনবোর্ড কিংবা কোনো নাম লেখা নেই। আশে পাশে ঘিরে আছে অবৈধ স্থাপনা। তাই দেখে বোঝার উপায় নেই যে, এটা কোনো জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স!

কমপ্লেক্সের সামনে ভবনের মূল ফটকে বিভিন্ন কোম্পানির সাইনবোর্ডে সাঁটানো। নীতিমালা অনুযায়ী ভবনের দোকানগুলো মুক্তিযোদ্ধা কিংবা মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ভাড়া দেওয়ার কথা থাকলেও তা মানা হয়নি। ভাড়া দেওয়া হয়েছে ব্যক্তিগত অফিস, সেলুন, সাংবাদিক ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মুক্তিযোদ্ধা বলেন, এই প্রতিষ্ঠানটি আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পদ। আমরা চাই আমাদের সন্তানেরা এই প্রতিষ্ঠানের দোকানগুলো ভাড়া নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করুক। কিন্তু তা করা হয়নি। নিচতলার কক্ষগুলো দোকান হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানদের মধ্যে ভাড়া দেওয়ার কথা থাকলেও নিয়ম অমান্য করে তা দেওয়া হয়েছে বহিরাগতদের। এতে সহজ সরল মুক্তিযোদ্ধা বা তাদের সন্তানরা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সাধারণ সম্পাদক শেখ রোহিত হাসান রিন্টু বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝেও সহজ সরল কিংবা অসহায় মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে। জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে যাদের নামে দোকান বরাদ্দ দেয়া আছে তারাও মুক্তিযোদ্ধা। আমি তাদের সন্তানতুল্য, তাই তাদের কাছে আমার দাবি তারা যেন বহিরাগতদের কাছ থেকে দোকানগুলো নিয়ে অসহায় মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের ব্যবসা করার সুযোগ করে দেয়।’

‘আর সাইনবোর্ডের বিষয়টি জেলা প্রশাসক দ্রুত ব্যবস্থা নেবে, এটা আমি আশা করবো। কারণ, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের মূল ফটকে অন্য প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড থাকবে, এটি যেমন আমার প্রত্যশা নয়, তেমনি এটি একেবারে বেমামান। বহিরাগতদের দোকান ভাড়া দেওয়া, তাদের প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড যত্রতত্র লাগানোসহ বিবিধ বিষয় নিয়ে আমাদের একটি স্মারকলিপি অল্প কিছুদিনের মধ্যেই জেলা প্রশাসকের বরাবর দেওয়ার কথা রয়েছে।’

প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা এম.এ মান্নান মিয়ার সন্তান জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সহ-সভাপতি মাহামুদুল ইসলাম মানিক বলেন, ‘এটি আমারও জিজ্ঞাসা এটি মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স কি না। একটি মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের মূল ফটকে সাইনবোর্ড থাকবে অন্য প্রতিষ্ঠানের, তা আমি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে মানতে পারি না। মূল ফটকের সামনের সব সাইনবোর্ড সরিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের সাইনবোর্ডটি যেন লাগানো হয়। আর সামনের অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদের জন্য জেলা প্রসাশকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’

জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সভাপতি ইস্তিকুর রহমান বলেন, ‘বহিরাগতদের দোকান ভাড়া দেওয়া ও কমপ্লেক্সের মূল ফটকসহ এলোমেলেভাবে সাইনবোর্ড লাগিয়ে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের সৌন্দর্য নষ্ট ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমরা দ্রুত একটি জরুরিসভা করে সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।’

এ বিষয়ে সদর উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আলী আকবার এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘সাইনর্বোডের বিষয় এতোদিন আমি খেয়াল করিনি। আপনার মাধ্যমে অবগত হলাম। তবে অবৈধ দোকানগুলো যা কমপ্লেক্সের সামনে অবস্থিত আগামীকাল দুটো বিষয়ই আমি জেলা প্রশাসককে জানাবো।’

এ ব্যাপারে জেলার মুক্তিযোদ্ধার ডেপুটি কমান্ডার ওয়াসিকার মোহাম্মদ ইকবাল ফোনে জানান, ‘মুক্তিযোদ্ধা ভবনের দোকানঘরগুলো মূলত মুক্তিযোদ্ধারাই নিয়েছেন এবং তারা যে কাউকে এই দোকান ঘর ভাড়া দিতে পারেন। তবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানরা এই ঘরগুলো ভাড়া পেতে পারে।’

সাইনবোর্ডের বিষয়ে ইকবাল বলেন, ‘আগে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের মূল ফটকে সাইনর্বোড ছিল, সেটি নষ্ট হয়ে ভেঙে পড়ে গেছে। পরবর্তীতে সেই সাইনবোর্ডটি আর লাগানো হয়নি। দোকান ঘর ভাড়া দেয়ার সময় আমরা প্রত্যেক ভাড়াটিয়াকে বলেছি, মুক্তিযোদ্ধা ভবনের মূল ফটকে কোনো দোকান বা অফিসের সাইনবোর্ড যেন না লাগানো হয়। কিন্তু বাধা অমান্য করে রাতের আধারে তারা নিজ নিজ দোকান বা অফিসের সাইনবোর্ড ভবনের মূল ফটকে লাগিয়ে দিয়েছেন।’

‘এছাড়া ঘর ভাড়া নেয়ার সময় বিদ্যুৎ বিল দেয়ার কথা থাকলেও তারা বিল দেন না। অবৈধ স্থাপনাগুলো সড়ক বিভাগের দেখার কথা থাকলেও তারা তা দেখেন না।’ কমপ্লেক্সের সৃষ্ট সামগ্রিক জটিলতা নিয়ে তিনি দ্রুত জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলেও জানান।

(ঢাকাটাইমস/১৭নভেম্বর/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :