এসএসসি পরীক্ষার্থী দুজনসহ টিকটক করা তিন বোন কোথায় গেল?

প্রকাশ | ১৯ নভেম্বর ২০২১, ১৬:২০ | আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২১, ১৬:৩৮

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

এসএসসি পরীক্ষার্থী দুই বোন এরইমধ্যে একটি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। সামনে রয়েছে আরও দুটি পরীক্ষা। তাদের বড় বোন এইচএসসি শিক্ষার্থী। রাজধানীর খিলগাঁওয়ে এক খালার বাসায় দুই বোন আর বড় বোন আদাবর এলাকায় আরেক খালার বাসায় থাকতেন।

এসএসসি পরীক্ষার্থী দুজনের কেন্দ্র ধানমণ্ডি পড়ায় তারা আদাবরে খালার বাসায় থেকে পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। সেখানে আগে থেকে থাকা বড় বোনসহ তিনজনই গত বৃহস্পতিবার থেকে নিখোঁজ।

অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তিন বোনকে না পেয়ে আদাবর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন তাদের খালা। তার ভাষ্য, করোনায় ঘরবন্দি থাকার সময় তার বোনের তিন মেয়ে টিকটকে আসক্ত হয়ে পড়ে।

রাজধানীর মিরপুরের টিকটক করা তিন কিশোরীর নিখোঁজ এবং নানা নাটকীয় পরিস্থিতির পর তাদের উদ্ধারের রেশ না কাটতেই তিনবোনের নিখোঁজের ঘটনা ঘটল।

শুক্রবার আদাবর থানায় খালার করা জিডিতে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে তারা একসঙ্গে আদাবরের শেখের টেক এলাকার বাসা থেকে বের হয়ে যায়। এরপর আর বাসায় ফেরেনি তারা। বের হওয়ার সময় তারা কাপড়চোপড় ও পরীক্ষার প্রবেশপত্র সঙ্গে নিয়ে গেছে।

নিখোঁজ তিন বোনের মা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০১৩ সালে মারা যাওয়ার পর থেকে তারা দুই খালার বাসায় বসবাস করত। তাদের বাবা অন্যত্র বিয়ে করে সংসার পেতেছেন। মেয়েদের সঙ্গে খুব একটা যোগাযোগও নেই বলে জানা গেছে।

এদিকে সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ বলছে, বাসাটির ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ থেকে তিন বোনের নিখোঁজ হওয়ার তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে তাদের সন্ধান এখনো মেলেনি।

জিডির তথ্য নিশ্চিত করে আদাবর থানা উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল মোমিন বলেন, থানায় জিডি করার পর পুলিশ ওই বাসায় গিয়ে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ চেক করেছে।

ফুটেজ পর্যালোচনা করে পুলিশ বলছে, বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা ৪ মিনিটে প্রথমে ছোট বোন, এরপর মেজ বোন এবং সব শেষে বড় বোন ব্যাগ হাতে নিয়ে বের হতে দেখা গেছে।

নিখোঁজ তিন বোনের খালা বলেন, আমার বড় বোন ২০১৩ সালে মারা যাওয়ার পর মেয়ে তিনটি আমার এবং আরেক বোনের বাসায় থাকত। গত ১৫ নভেম্বর আদাবরের বাসা থেকে দুই বোন প্রথম পরীক্ষায় অংশ নেয়। আগামী ২২ নভেম্বর তাদের পরবর্তী পরীক্ষা আছে। কিন্তু তার আগেই কাউকে না বলেই তারা বাসা থেকে বের হয়ে গেছে।

তিনি আরো বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে তাদের বাসায় রেখে মেয়েকে নিয়ে বের হয়ে যাই। রাস্তায় হঠাৎ মনে পড়ে, একটি ফাইল ছেড়ে এসেছি। মেয়েকে নিয়ে বাসায় ফিরে দেখি, দরজায় তালা লাগানো। সামনে থাকা ঝুড়িতে চাবি রাখা। এরপর দরজা খুলে দেখি তিন বোনের কেউই নেই। তাদের কাপড়চোপড়, বইপত্রসহ আসবাবপত্র কিছুই নেই।

তিন বোনের টিকটকে আসক্ত হওয়ার বিষয়টি জানিয়ে তাদের খালা বলেন, করোনার সময় তিন বোন টিকটক করত। বোধহয় টিকটকে আসক্ত হয়ে পড়েছিল। এর মাধ্যমেই কারও প্ররোচনায় তারা বাসা থেকে বের হয়ে যেতে পারে। যাওয়ার সময় তারা বই-খাতা, পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ড, রেজিস্ট্রেশন কার্ডহ সবকিছু নিয়ে গেছে। পরে দুপুরে গিয়ে ঘটনা খুলে বলে আদাবর থানায় একটি জিডি করেছি।

বোনের তিন মেয়েকে লালন-পালন করার পর এমনভাবে নিখোঁজ হওয়ায় আক্ষেপ করে তিনি বলেন, নিজের ছেলে মেয়ে, সংসার আছে তারপরও অনেক কষ্টে ওদের বড় করেছি। তাদের চাওয়া-পাওয়ায় কোনো ঘাটতি রাখিনি। এখন যেখানেই গিয়ে থাকুক, তারা যেন নিরাপদে ফিরে আসে এটাই আমাদের চাওয়া।

নিখোঁজ তিন বোনের বাবা যশোরে শিক্ষকতা করেন এমনটা জানিয়ে তাদের খালা বলেন, অনেকদিন ধরে আমাদের সঙ্গে তিন মেয়ের বাবার যোগাযোগ নেই। তিন মেয়ের সঙ্গেও তেমন যোগাযোগ ছিল না। তবে গোপনে যোগাযোগ থাকলেও থাকতে পারে।

(ঢাকাটাইমস/১৯নভেম্বর/বিইউ/ডিএম)