যশোরে বাবার কাছে যান তিন বোন, অবস্থান শনাক্ত করে র‍্যাব

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৯ নভেম্বর ২০২১, ২১:১১ | প্রকাশিত : ১৯ নভেম্বর ২০২১, ২০:৪৯

রাজধানীর আদাবরের খালার বাসা থেকে কাউকে কিছু না বলে যশোরে বাবার কাছে গিয়েছিলেন নিখোঁজ হওয়া ওই তিন বোন। ঘটনার পর ওই তিন বোনের খালার করা জিডির পর র‍্যাবের ছায়া তদন্তে এ তথ্য উঠে আসে।

শুক্রবার সন্ধ্যায় র‍্যাব-২ এর পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

র‍্যাব-২ জানায়, বৃহস্পতিবার রাজধানীর আদাবর এলাকার একটি বাসা থেকে দুইজন এসএসসি পরীক্ষার্থীসহ তিন বোন রোকেয়া (১৮), জয়নব আরা (১৭) এবং খাদিজা আরা (১৬) নিখোঁজ হন। এ বিষয়ে ভুক্তভোগীর খালা সাজেদা নওরীন বৃহস্পতিবার রাতে আদাবর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি দায়ের করেন। সাজেদা নওরীন ধারণা করেন, তার তিন ভাগ্নি টিকটকে আশক্ত ছিল বিধায় কারও প্ররোচণায় বাসা হতে বের হয়ে যেতে পারে। বিষয়টি র‌্যাব-২ জানতে পারে এবং গণমাধ্যমেও ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়। এরপর নিখোঁজদের উদ্ধারে গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করে র‍্যাব-২।

ওই তিন কিশোরীকে উদ্ধারে বিভিন্ন ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে র‌্যাব জানতে পারে, তাদের অবস্থান যশোরে। বিষয়টি উদ্ধেগজনক হওয়ায় র‌্যাব-২ এর তদন্ত কার্যক্রম সর্বোচ্চ বেগবান করা হয়।

র‍্যাব-২ জানায়, র‍্যাবের গোয়েন্দা তৎপরতায় জানা যায় ওই তিন বোন তাদের পৈত্রিক নিবাস যশোরে বাবার সঙ্গে আছেন। র‌্যাব-২ তাদের সঙ্গে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ভিডিও কল করে তাদের অবস্থানের বিষয়টি নিশ্চিত হয়।

২০১৩ সালে ওই তিন বোনের মা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার পর থেকে তাদের খালার সঙ্গে বসবাস করছিলেন। বৃহস্পতিবার তারা তাদের খালাকে না জানিয়ে অসুস্থ বাবাকে দেখতে বাবার বাড়ি যশোর যান। ফলে তাদের খালা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে আদাবর থানায় একটি সাধারণ ডাইরি করেন। এ ঘটনার পরবর্তীতে আর কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছে পুলিশের এলিট ফোর্স র‌্যাব।

এর আগে বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টার দিকে আদারবের শেখেরটেক থেকে নিখোঁজের পর আদাবর থানায় জিডি করেন তাদের খালা। জিডিতে তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে তারা একসঙ্গে আদাবরের শেখের টেক এলাকার বাসা থেকে বের হয়ে যায়। এরপর আর বাসায় ফেরেনি তারা। বের হওয়ার সময় তারা কাপড়চোপড় ও পরীক্ষার প্রবেশপত্র সঙ্গে নিয়ে গেছেন।

নিখোঁজ তিন বোনের মা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০১৩ সালে মারা যাওয়ার পর থেকে তারা দুই খালার বাসায় বসবাস করতেন। তাদের বাবা অন্যত্র বিয়ে করে সংসার পেতেছেন। মেয়েদের সঙ্গে খুব একটা যোগাযোগও নেই বলে জানা গেছে।

নিখোঁজ তিন বোনের খালা বলেন, আমার বড় বোন ২০১৩ সালে মারা যাওয়ার পর মেয়ে তিনটি আমার এবং আরেক বোনের বাসায় থাকত। গত ১৫ নভেম্বর আদাবরের বাসা থেকে দুই বোন প্রথম পরীক্ষায় অংশ নেয়। আগামী ২২ নভেম্বর তাদের পরবর্তী পরীক্ষা আছে। কিন্তু তার আগেই কাউকে না বলেই তারা বাসা থেকে বের হয়ে গেছে।

‘বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে তাদের বাসায় রেখে মেয়েকে নিয়ে বের হয়ে যাই। রাস্তায় হঠাৎ মনে পড়ে, একটি ফাইল ছেড়ে এসেছি। মেয়েকে নিয়ে বাসায় ফিরে দেখি, দরজায় তালা লাগানো। সামনে থাকা ঝুড়িতে চাবি রাখা। এরপর দরজা খুলে দেখি তিন বোনের কেউই নেই। তাদের কাপড়চোপড়, বইপত্রসহ আসবাবপত্র কিছুই নেই।’

তিন বোনের টিকটকে আসক্ত হওয়ার বিষয়টি জানিয়ে তাদের খালা বলেন, ‘করোনার সময় তিন বোন টিকটক করত। বোধহয় টিকটকে আসক্ত হয়ে পড়েছিল। এর মাধ্যমেই কারও প্ররোচনায় তারা বাসা থেকে বের হয়ে যেতে পারে। যাওয়ার সময় তারা বই-খাতা, পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ড, রেজিস্ট্রেশন কার্ডহ সবকিছু নিয়ে গেছে। পরে দুপুরে গিয়ে ঘটনা খুলে বলে আদাবর থানায় একটি জিডি করেছি।’

বোনের তিন মেয়েকে লালন-পালন করার পর এমনভাবে নিখোঁজ হওয়ায় আক্ষেপ করে তিনি বলেন, নিজের ছেলে মেয়ে, সংসার আছে তারপরও অনেক কষ্টে ওদের বড় করেছি। তাদের চাওয়া-পাওয়ায় কোনো ঘাটতি রাখিনি। এখন যেখানেই গিয়ে থাকুক, তারা যেন নিরাপদে ফিরে আসে এটাই আমাদের চাওয়া।

নিখোঁজ তিন বোনের বাবা যশোরে শিক্ষকতা করেন এমনটা জানিয়ে তাদের খালা বলেন, অনেকদিন ধরে আমাদের সঙ্গে তিন মেয়ের বাবার যোগাযোগ নেই। তিন মেয়ের সঙ্গেও তেমন যোগাযোগ ছিল না। তবে গোপনে যোগাযোগ থাকলেও থাকতে পারে।

(ঢাকাটাইমস/১৯সেপ্টেম্বর/কারই/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :