সিগন্যালেই জীবন-জীবিকা পুতুলদের
পুতুল। বয়স ছয়-সাত বছর। স্কুলে যাওয়ার বয়স হলেও সে ভাগ্য হয়নি তার। দরিদ্র পরিবারে জন্ম বলে বাবা-মায়ের পাশাপাশি নিজের কাঁধে তুলে নিতে হয়েছে সংসারের ঘানি। রাজধানীর পান্থপথ সিগন্যালে লুসনি বিক্রি করে মায়াবি চেহারার পুতুল।
রান্না ঘরে গরম হাড়ি-পাতিল ধরতে সাধারণত পুরনো কাপড় ব্যবহার করেন ঘরণীরা। তবে কেউ কেউ এক্ষেত্রেও কিছুটা শৌখিন। সেই সৌখিনতার জায়গাটা দখল করেছে লুসনি। সেই জিনিস যখন কম দামে এবং ছোট্ট পুতুলদের হাতে পাওয়া যায় তখন প্রয়োজন না থাকলেও অনেকেই কিনে নিচ্ছেন।
ঢাকা শহরে এক যন্ত্রণার নাম ট্রাফিক সিগন্যাল। চলন্ত গাড়ি থমকে যেতেই বিরক্তির জন্ম নেয় যাত্রীদের মনে। সে সময় এই ট্রাফিক সিগন্যাল পয়েন্টই হয়ে ওঠে পুতুলদের মতো অনেকের জীবন-জীবিকার মাধ্যম।
ছোট্ট পুতুল জানায়, তার বিক্রি করা লুসনির চাহিদা অনেক। অনেকের প্রয়োজন না থাকায় লুসনি না কিনে ১০-২০ টাকা গুজে দিয়ে যান পুতুলের হাতে।
পুতুল বলে, ‘কেনে তো। আমি যাই, ডাকি। অনেকেই কেনে।’
আবার অনেকেই ডাক কানে তোলেন না বলেও জানায় এই ক্ষুদে হকার। পুতুলের ভাষায়, ‘বড় লোকেগো ডাকি। হ্যারা (তারা) গাড়ির জানলা (জানালা) খোলে না।’
প্রতিদিন কত টাকা বিক্রি হয়, কত লাভ হয়, সে বিষয়ে কোনো কিছুই জানে না পুতুল। সে শুধু জানে, মায়ের কাছ থেকে লুসনি নিয়ে সেগুলো বিক্রি করা এবং বিক্রির টাকা মায়ের হাতে টাকা তুলে দেওয়া।
পুতুলের চেয়ে বয়সে বড় হলেও একই পেশায় নিয়োজিত বাদল। ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার এলাকায় বাদাম বিক্রি করে সে। থাকে কারওয়ানবাজার রেললাইন বস্তিতে। ট্রাফিক সিগন্যালে আটকে থাকা গাড়িতে বসা যাত্রীদের কাছে বাদাম বিক্রি করে বাদল।
বাদলের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চারজনের সংসারের উপার্জনের অন্যতম সম্বল সে। বৃদ্ধ বাবা এখন আর কাজ করতে পারেন না। মা অন্যের বাসা বাড়িতে কাজ করেন। বাদল ও তার ছোট ভাই আছে হকারের পেশায়।
বাদল বলে, ‘বাদাম কারুন বাজার (কারওয়ানবাজার) থেকে কিনা নিজেরা ভাজি। তারপর প্যাকেট কইরা বেচি। দিনে চার-পাঁচশো টাকা থাকে।’
বাদল ও পুতুলদের মতো ঢাকার সিগন্যাল পয়েন্টে কেউ বাদাম, কেউ শসা, পানি, দাঁত মাজার ব্রাশ, কেউবা তোয়ালে বিক্রি করে। সিগনাল পড়লে যাত্রীরা বিরক্ত হলেও তারা হয় খুশি। কারণ, যত বড় সিগন্যাল তত বেশি তাদের উপার্জন।
(ঢাকাটাইমস/২১নভেম্বর/কারই/জেবি)