ডিজিটাল সাক্ষ্য, প্রেক্ষিত বাংলাদেশের সাক্ষ্য আইন

প্রকাশ | ২১ নভেম্বর ২০২১, ১৪:৪১

জিয়া হাবীব আহসান

প্রারম্ভিক কথা

আমাদের প্রচলিত সাক্ষ্য আইনটি দেড় শ বছরের পুরোনো আইন, ডিজিটাল সাক্ষ্যে এনালগ আইন। ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ উপনিবেশকালে ১৮৭২ সালে প্রণীত সাক্ষ্য আইন প্রণয়ন করা হয়। পরবর্তীতে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সামান্য পরিবর্তনের মাধ্যমে উপরোক্ত সাক্ষ্য আইন এ দেশেও চলতে থাকে। দেওয়ানি ও ফৌজদারি উভয় আইনি ব্যবস্থায় পদ্ধতিগত আইন হিসেবে সাক্ষ্য আইন প্রচলিত আছে।

সাম্প্রতিক কয়েক দশকব্যাপী চলমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগান্তকারী উন্নয়ন ও উৎকর্ষ আইন ও বিচার প্রক্রিয়ায় প্রভাব সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে বিভিন্ন ঘটনার ভিডিও ও অডিও রেকর্ডিং,  ইলেকট্রনিক মেইল, সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন কমেন্টস, ডিজিটাল সিগনেচার, মোবাইল ফোনের কল/টেক্সট রেকর্ড, এটিএম ট্রান্সসেকশন লগ, ওয়ার্ড প্রসেসিং ডকুমেন্ট, ইন্টারনেট ব্রাউজার হিস্টরি, গ্লোবাল পসিশনিং সিস্টেম ট্র্যাক, কম্পিউটার ব্যাকআপ প্রভৃতি ডিজিটাল ফর্মে প্রযুক্তিগত বিষয় সম্পর্কে সাক্ষ্য আইনে কোনো কিছু সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ না থাকায় তৎসমূহ সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণে বিচারক ও আইনজীবীকে গলদঘর্ম হতে হয়। এতে করে অনেক ক্ষেত্রেই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। 

সম্প্রতি চাঞ্চল্যকর কয়েকটি হত্যাকাণ্ড ও অপরাধকাণ্ড সংঘটনের জলজ্যান্ত দৃশ্যের ইলেকট্রনিক মাধ্যমে ধারণ করা ভিডিও রেকর্ড ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে  প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে। দুয়েকটির আবার অপরাধ সংঘটনের প্রচেষ্টা, অভিপ্রায়ের অডিও রেকর্ডও একইভাবে প্রকাশ ও প্রচার হয়েছে। চাঞ্চল্যকর বিশ্বজিৎ হত্যা, শিশু রাজন হত্যা, গাইবান্ধার সাবেক সাংসদ মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যা, বরগুনার রিফাত হত্যা এবং সর্বশেষ রাজধানীর বাড্ডায় গুজবের শিকার রেনু হত্যা ইত্যাদি মামলার ঘটনায় ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজই প্রমাণ করে কারা খুনি। এছাড়াও বর্তমানে প্রচুর অপরাধ ঘটছে ইন্টারনেট, মোবাইল ফোন ও কম্পিউটার প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে। যেগুলোর সাক্ষ্যপ্রমাণ রয়ে যাচ্ছে সেই ইন্টারনেট ও সংশ্লিষ্ট ডিভাইসগুলোতেই। যেমন কোনো ব্যক্তিকে হত্যার হুমকি বা চাঁদার জন্য ভীতি প্রদর্শন আমাদের দণ্ডবিধির অধীনে গুরুতর অপরাধ। এখন কোনো ব্যক্তি যদি এই অপরাধগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে, ই-মেইল বা মোবাইলের মাধ্যমে ঘটিয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে মামলা করতে হলে সাক্ষ্যপ্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করতে হবে সংশ্লিষ্ট কোনো স্ক্রিনশট কিংবা মোবাইলের অডিও রেকর্ড। আবার কখনো কখনো সংঘটিত অপরাধের প্রমাণ কেবল অডিও-ভিডিও কিংবা ছবি ছাড়াও অন্য কোনো মাধ্যমে থেকে যেতে পারে। এসব ক্ষেত্রে ডিজিটাল এভিডেন্সের ওপরে নির্ভর করে সুষ্ঠু ও ন্যায় বিচার। কেননা এরকম বহু ক্ষেত্রই তৈরি হতে পারে, যেখানে ডিজিটাল এভিডেন্স ছাড়া আর কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ হাজির করাই সম্ভব নয়।

এছাড়াও স্থাবর সম্পত্তি বা অর্থ সংক্রান্ত দেওয়ানি মামলায় অনেক ডিজিটাল/ইলেকট্রনিক এভিডেন্স থাকলেও সুস্পষ্ট আইনি ব্যাখ্যা বা গ্রহণ করার কোনো প্রক্রিয়া না থাকায় অনেক দেওয়ানি মামলায় সুষ্ঠু ও ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার দুরূহ হয়ে পড়ে। প্রচলিত আইনে ভিডিও ও অডিও রেকর্ড এবং ই-মেইল টেক্সটসহ বিভিন্ন ডিজিটাল/ইলেকট্রনিক এভিডেন্স গ্রহণযোগ্য হলেও দেওয়ানি বিচার প্রক্রিয়ায় আরো গতিশীলতা আনয়ন করা সম্ভবপর হবে। আইনে ডিজিটাল/ইলেকট্রনিক এভিডেন্সের সরাসরি গ্রহণযোগ্যতা না থাকায় বর্তমানে সময়ের ট্রেডমার্ক, কপিরাইটস, ট্রেড সিক্রেট ও পেটেন্ট রাইটসসহ বিভিন্ন ইনটেলেকচুয়াল প্রোপ্রার্টি সংক্রান্তে মামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ও সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে বিচার প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্টদের অনেক বেগ পেতে হয়। এতে করে সুষ্ঠু ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। আইনে ডিজিটাল/ইলেকট্রনিক সাক্ষ্যের গ্রহণযোগ্যতা

সাক্ষ্য আইনে ডিজিটাল সাক্ষ্যগ্রহণের সুযোগ না থাকায় সাধারণ আইনে করা মামলাগুলোর প্রয়োগ হয় না । তবে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন, সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল ও আইসিটি আইন তথা ¯েপশাল ট্রাইব্যুনালসমূহে ডিজিটাল এভিডেন্স গ্রহণ, জেনারেল ক্লজেস অ্যাক্টের ৩ (১৬) ধারা এবং পেনাল কোডের ২৯ ধারায় ডিজিটাল সাক্ষ্য আমলে নেওয়ার সুযোগ আছে। তদন্তকারী কর্মকর্তাকে মামলার প্রয়োজনে নথিতে যেকোনো সাক্ষ্য সংযুক্ত করার ক্ষমতার কথা উল্লেখ আছে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৫ এবং ১৬১ ধারায়। এছাড়াও ডিজিটাল এভিডেন্স আমলে নেওয়ার উচ্চ আদালতেরও অনেক নজির ও  নির্দেশনা আছে।

সাক্ষ্য আইনে ইলেকট্রনিক/ডিজিটাল সাক্ষ্য সংক্রান্তে কোনো বিধান থাকলেও ৩৭ ডি.এল.আর ২৭৫ পৃষ্ঠায় বর্ণিত বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ মিসেস খালেদা আক্তার বনাম রাষ্ট্র  মামলায় ভিডিও ক্যাসেট ডকুমেন্টারি এভিডেন্স হিসেবে গ্রহণযোগ্য বলেছেন। জাস্টিস এ টি এম আফজাল এবং আমিন-উর-রহমান পর্যবেক্ষণ করেন যে, যদি কোনো টেপ রেকর্ডকে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়, তাহলে কোনো ভিডিও রেকর্ড সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করতে কোনো প্রকার আপত্তি যুক্তিযুক্ত নয় । শুধুমাত্র সাক্ষ্য আইনের অস্পষ্টতার অজুহাতে কোনো ক্রশিয়াল এভিডেন্সকে অগ্রহণযোগ্য বলে আখ্যায়িত করা যাবে না। তারও আগে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এ.আই.আর ১৯৬৪ এস সি ৭২ পৃষ্ঠায়, এ.আই.আর ১৯৬৮ এস সি ১৪৭  পৃষ্ঠায় এবং পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট পি.এল.ডি ১৯৭৬ এস সি ৫৭ পৃষ্ঠায় টেপ রেকর্ডকে ডকুমেন্টারি এভিডেন্স হিসেবে গ্রহণযোগ্য বলেছেন। 

তথাপিও মূল সাক্ষ্য আইনে ইলেকট্রনিক এভিডেন্সের কোনো সংজ্ঞাগত বা পদ্ধতিগত ব্যাখ্যা না থাকায় সাধারণ আইনের বিচারকালে অনেক জটিলতার সম্মুখীন হতে হয়। আশার কথা এই যে, ইলেকট্রনিক এভিডেন্সের গুরুত্ব অনুধাবন করে, আইন প্রণেতাগণ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আইন ২০০২, আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইন ২০০২, পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২, মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ২০১২, মূল্য সংযোজন কর আইন ১৯৯১, ইলেকট্রনিক এভিডেন্সকে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন, যা এ বিষয়ে সুস্পষ্ট বিধানের অনুপস্থিতি আমাদের সাক্ষ্য আইনের সাথে সংগতিপূর্ণ নয়। তথ্য প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষের এই সময়ে দৈনন্দিন জীবন-যাপনে ইলেকট্রনিকের ব্যাপক ব্যবহারের ফলে বিচারিক ব্যবস্থায় ইলেকট্রনিক এভিডেন্সের সংজ্ঞাগত ও পদ্ধতিগত বিষয় সংযুক্ত করে সাক্ষ্য আইন (সাক্ষ্য, ১৮৭২) সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।

 

আইনে গ্রহণযোগ্য সাক্ষ্যের ব্যাখ্যা

বাংলাদেশে প্রচলিত সাক্ষ্য আইন ১৮৭২-এর ৩ নং ধারায় প্রধানত দুই রকম সাক্ষ্য বা এভিডেন্সের কথা বলা হয়েছে। যথাক্রমে মৌখিক সাক্ষ্য ও দালিলিক সাক্ষ্য। মৌখিক সাক্ষ্য হলো সাক্ষী আদালতে উপস্থিত হয়ে যা কিছু বর্ণনা করেন বা মুখে বয়ান করেন। আর দালিলিক বা  ডকুমেন্টারি সাক্ষ্য হলো আদালতের নিরীক্ষণের জন্য যেসব ডকুমেন্ট, দলিলাদি, নথিপত্র উপস্থাপন করেন। প্রশ্ন হলো ডিজিটাল এভিডেন্স কি সাক্ষ্য আইনে বর্ণিত দালিলিক বা ডকুমেন্টারি সাক্ষ্য হিসেবে গণ্য হবে? আপাতদৃষ্টিতে ডিজিটাল এভিডেন্স সাক্ষ্য আইনের ৩নং ধারা অনুযায়ী গ্রহণযোগ্য নয়। প্রতিবেশী ভারতে সাক্ষ্য আইনের ৩(১) নং উপধারা সংযোজন করায় ডিজিটাল/ইলেকট্রনিক সাক্ষ্যকে গ্রহণযোগ্য সাক্ষ্য হিসেবে গণ্য করা হয়।

অবশ্যই না হওয়ারই কথা, ১৮৭২ সালে স্যার জেমস ফিটজজেমস স্টিফেন সাহেবরা যখন ড্রাফট করেছিলেন তখন এসব ইলেকট্রনিক অডিও বা ভিডিও বা অডিও ভিজুয়াল রেকর্ড যে আগামীতে কখনো আসতে পারে তা কল্পনা করার মতো বাস্তবতা ছিল না। তাই বলে তাঁরা একেবারে অদূরদর্শী ছিলেন সে কথাও বলা যাবে না । সাক্ষ্য আইন মোতাবেক ডকুমেন্ট বা দলিল বলতে স্মারক হিসেবে ধরে রাখার জন্য কোনো অক্ষর, সংখ্যা ও চিহ্ন যা কোনো বিশেষ অবস্থার ইঙ্গিত করে বা বুঝায়। আইনের ৩নং ধারায় বর্ণিত ৫টি ইলাসট্রেশনের কোনো লেখা, প্রিন্টের মাধ্যমে কোনো ছবি, মানচিত্র বা ব্যঙ্গচিত্রকে দলিল হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। কিন্তু কোনো ইলেকট্রনিক অডিও বা ভিডিও বা অডিও ভিজুয়াল রেকর্ডকে সুস্পষ্টভাবে দলিল হিসেবে বলা হয়নি ।

দালিলিক আর মৌখিক সাক্ষ্যের বাইরে আরেক ধরনের সাক্ষ্যও বিচারকাজে হরহামেশাই ব্যবহার হয়, যেটাকে বলা হয় বস্তুগত বা বাস্তব সাক্ষ্য (Material or ceal Evidence)। আমাদের আদালত অঙ্গনে যা আলামত নামে সমধিক পরিচিত। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৫ ধারার বিধান অনুযায়ী তদন্ত কর্মকর্তা অপরাধ সংশ্লিষ্ট যে কোনো আলামত জব্দ করতে পারেন, করেনও এবং এসব আলামতের নির্দিষ্ট কোনো প্রকার নেই, এখানে আলামত বলতে ভিডিও ফুটেজ বা কোনো অডিও রেকর্ডও হতে পারে। ১৮৭২ সালের এভিডেন্স এ্যাক্টের ধারা ৬০-এর ২নং শর্তাংশের বিধান ও ক্রিমিনাল রুলস এন্ড অর্ডারের ১৬১ বিধি অনুযায়ী আদালতে বিচারের সময় আলামত প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করা হয়। ফলে ডিজিটাল এভিডেন্সকে দালিলিক সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ না করার কোনো যুক্তি নেই ।

দালিলিক সাক্ষ্য আদালতে উপস্থাপনের ক্ষেত্রে প্রশ্ন আসে, সাক্ষ্যটি প্রাথমিক (প্রাইমারি) নাকি  দ্বৈতয়িক (সেকেন্ডারি) সাক্ষ্য। আদালতে প্রাথমিক সাক্ষ্যই উপস্থাপনের নিয়ম। তবে কিছু কিছু ব্যতিক্রমধর্মী ক্ষেত্রে দ্বৈতয়িক সাক্ষ্যও গ্রহণ করা হয়। এ ব্যাপারে যে বিস্তারিত নিয়মকানুন বর্ণিত আছে সাক্ষ্য আইনের ৬২ ও ৬৩ ধারায়, সেগুলো ডিজিটাল আলামতের কথা মাথায় রেখে প্রণীত হয়নি। ফলে ডিজিটাল আলামতের কোনটি প্রাথমিক সাক্ষ্য আর কোনটি দ্বৈতীয়িক সাক্ষ্য সে ব্যাপারে আদালত দ্বিধাদ্বন্দ্বের ভেতর পড়ে যায়। একটি ডিজিটাল এভিডেন্সকে আদালতে কোন প্রক্রিয়ায় উপস্থাপন করতে হবে এবং এটি আসল নাকি নকল সেটি কীভাবে যাচাই করা হবে এখন পর্যন্ত কোনো আইনে এসব ব্যাপারে বিস্তারিত কার্যবিধি না থাকায় আইনে ডিজিটাল আলামতের স্বীকৃতি থাকলেও আদালতগুলো এ ধরনের সাক্ষ্য গ্রহণে বিব্রতবোধ করে থাকে। ডিজিটাল ডকুমেন্টকে সাক্ষ্য হিসেবে স্বীকৃতি না দিলে কোনো ব্যক্তির কললিস্ট বা কথোপকথনের কোনো মূল্য থাকে না। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নতি ও বিকাশ এবং বিভিন্ন অপরাধে এর ব্যবহারের পরও বাংলাদেশের সাক্ষ্য আইনটি এখনো সংশোধন বা যুগোপযোগী করা হয়নি। সাক্ষ্য আইনের সংশোধন বা যুগোপযোগী করা এখন সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে ।  

 

আইনে গ্রহণযোগ্য সাক্ষ্যের ব্যাখ্যা

এখনকার ডিজিটাল যুগে ইলেকট্রনিক প্রযুক্তিতে এই নকলবাজি ও জালিয়াতির অনেক সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে আমাদের দেশে প্রযুক্তিগত জালিয়াতি ও নকলবাজির সুযোগ ও প্রবণতা অনেক প্রশস্ত ও ব্যাপক। তাই ইলেকট্রনিক সাক্ষ্য-সাবুদ গ্রহণ করার পদ্ধতি, আসলটা না থাকলে কী ধরনের কপি কীভাবে গ্রহণযোগ্য হবে, আসল-নকলের ফারাক বোঝার কী উপায় হবে এসব বিষয় আইনে সুনির্দিষ্ট থাকা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন উন্নত দেশে ডিজিটাল ফরেনসিকের ব্যবস্থা রয়েছে। যারা বিভিন্ন দেওয়ানি ও ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় উপস্থাপিত বা দাখিলকৃত বিভিন্ন ডিজিটাল এভিডেন্স বিশেষ করে ভিডিও রেকর্ড, অডিও রেকর্ড প্রভৃতি প্রযুক্তির মাধ্যমে যাচাই-বাছাইপূর্বক এর সত্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত করে থাকে। আমাদের দেশেও ডিজিটাল এভিডেন্স সংক্রান্তে আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রেও অনুরূপভাবে ডিজিটাল এভিডেন্সের গ্রহণযোগ্যতা ও সত্যতা নিশ্চিত হওয়ার নিমিত্তে ডিজিটাল ফরেনসিকের মাধ্যমে সার্টিফিকেট দাখিল করার বিধান রাখা সমীচীন হবে। অধিকন্তু, ডিজিটাল এভিডেন্স সংক্রান্তে মূল আইনের বিধান সংযুক্ত করার সাথে সাথে তৎসংক্রান্তে রুল ও বিধি প্রণয়ন করা অত্যন্ত জরুরি মর্মে প্রতীয়মান হয়।

উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের সাক্ষ্য আইনকে সংশোধনপূর্বক যুগোপযোগী করা জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

লেখক: অ্যাডভোকেট, কলামিস্ট, মানবাধিকার ও সুশাসনকর্মী