সাদুল্যাপুর চরের সীমানা নির্ধারণ না হওয়ায় ৫০০ পরিবারের ভোগান্তি

শওকত আলী, চাঁদপুর
 | প্রকাশিত : ২৪ নভেম্বর ২০২১, ১৭:১৮

চাঁদপুরের সাদুল্যাপুর চরে বহু বছর যাবত সীমানা নির্ধারণ না হওয়ায় প্রায় ৫০০ পরিবার নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত হয়ে আসছেন বছরের পর বছর। চাঁদপুর সদর উপজেলার চান্দ্রা, হানারচর ইউনিয়ন ও হাইমচর উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের সম্পত্তিতে মেঘনা নদীতে জেগে উঠেছে সাদুল্যাপুর চর।

তিন ইউনিয়নের প্রায় ৫০০ পরিবার এই চরে বসবাস করে। কিন্তু সীমানা নির্ধারণ না হওয়ার কারণে তারা সরকারের ডিজিটাল সেবাসহ নাগরিক অনেক সেবা থেকেই বঞ্চিত হয়ে চলছে।

নির্বাচন কেন্দ্রিক কিংবা কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিলে খোঁজ হয় চরের এসব লোকদের। বাকি সময় তারা সরকারি ভাতা ও সহযোগিতা সঠিকভাবে পায় না। চরের এসব লোকদের যেকোন একটি ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত করে নাগরিক সুবিধার আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন তারা।

সম্প্রতি সাদুল্যাপুর চরে গিয়ে দেখা গেছে, বসবাসকারী লোকদের নানা সমস্যার চিত্র। বহু বছর চরে বসবাস করার কারণে মায়া ছেড়ে অন্য জায়গায় যেতে পারছেন না। আবার অনেকের ইচ্ছা থাকলেও সামর্থ নেই। বসবাসকারী লোকজন কৃষি ও মৎস্য আহরণ করেই জীবন জীবীকা নির্বাহ করে। বিদ্যুৎ নেই, শিশুদের জন্য ভাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই এবং স্যানিটেশন ব্যবস্থাও খুবই দুর্বল। চিকিৎসার জন্য আসতে হয় চাঁদপুর জেলা শহরে।

সাদুল্যাপুর চরের বাসিন্দা মৃত সোনা মিয়া বেপারীর ছেলে তাজুল ইসলাম বেপারি বলেন, চর জেগে উঠার পর থেকে আমরা প্রায় ৫০০ পরিবার এখানে বসবাস করে যাচ্ছি। চান্দ্রা, হানারচর ও গাজীপুর তিন ইউনিয়নের লোকজন আমাদেরকে ভোটার বলে দাবি করে। এসব টানা হেচড়ার কারণে আমরা সুবিধা বঞ্চিত হয়েই চলছি। যেকোন একটি ইউনিয়নে আমাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করলে এবং সীমানা নির্ধারণ করে দিলে অসহায় পরিবারগুলো সরকারি সুযোগ সুবিধা পাবে। এতে এখানকার মানুষগুলো ভালোভাবে বাঁচতে পারবে।

চরের বাসিন্দা রেজ্জাক হাওলাদার ও হাবিব মৃধা বলেন, আমরা সীমানা নির্ধারণ ছাড়া আর কতদিন অবহেলিত থাকব। দুর্যোগ দেখা দিলে চান্দ্রা ও হানাচর ইউনিয়ন থেকে কিছুটা সাহায্য সহযোগিতা করে আমাদের। তাও আবার এখানে বসবাসরত সবাই পায় না। কিন্তু নির্দিষ্ট একটি ইউনিয়নে থাকলে সঠিকভাবে ভোট দিতে পারব এবং সরকারি সব সুবিধা পাব।

একই এলাকার বাসিন্দা মৃত ইদ্রিস মিয়ার ছেলে মো. সোহাগ বলেন, আমাদের জন্মস্থান এ চরে। আমরা কোনো ইউনিয়নের ভোটার এখন পর্যন্ত সঠিকভাবে জানি না। আমাদের সীমানা নির্ধারণ করে সব সুযোগ সুবিধার আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।

হাইমচর উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের ইউনিয়নের একটি অংশ সদুল্যাপুর চরের পাশে আছে। কিন্ত ওই চরে হানারচর ও চান্দ্রা ইউনিয়নের লোকজন বেশি থাকে। সাদুল্যাপুর চরের পাশে আমাদের বাজাপ্তি চরে প্রায় শতাধিক পরিবার বসবাস করে।

চান্দ্রা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মুজিব কবিরাজ বলেন, সাদুল্যাপুর চরে আমাদের ইউনিয়নের অল্প কয়েক পরিবার থাকে। তাদেরকে আমরা সরকারি সুযোগ সুবিধা দেয়ার চেষ্টা করি। এই চরে আরও অনেক লোক বসবাস করে। কিন্তু তারা কোন ইউনিয়নের লোক সঠিকভাবে বলতে পারব না।

হানারচর ইউনিয়নের প্রবীণ ইউপি সদস্য কালু চৌকিদার বলেন, আমাদের ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা মেঘনায় বিলীন হয়ে গেছে। এ কারণে বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডের লোক এখন সাদুল্যাপুর চরে বসবাস করে। কিন্তু অন্যান্য ইউনিয়নের লোকজন একইসঙ্গে চরে থাকার কারণে এখন পর্যন্ত কোনো সীমানা নির্ধারণ হয়নি।

এই ইউপি সদস্য বলেন, আমরা চাই সরকারের পক্ষ থেকে চরের লোকজনের সীমানা নির্ধারণ ও ভোটার তালিকা সঠিকভাবে করা হোক। তাহলে এসব লোকজন তাদের ভোটাধিকার ও নাগরিক সুবিধা সঠিকভাবে পাবে এবং তারা যে এ এলাকার বাসিন্দা তা বলতে পারবে।

(ঢাকাটাইমস/২৪নভেম্বর/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :