নাঈমকে ধাক্কা দেওয়া ট্রাকটি অবৈধভাবে নেন হারুন, করতেন তেল চুরি

প্রকাশ | ২৬ নভেম্বর ২০২১, ০২:০৬ | আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০২১, ০২:৫১

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
সিটি করপোরেশনের একটি ময়লার ট্রাক (ফাইল ছবি) ও শিক্ষার্থীকে ধাক্কা দেওয়া ট্রাকের মূল চালক হারুন মিয়া।

রাজধানীর গুলিস্তানে নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে যে ময়লার ট্রাকের ধাক্কায় সেটি চালক হিসেবে অবৈধপন্থায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) থেকে বরাদ্দ নিয়েছিলেন হারুন মিয়া। তার অনিয়মের এখানেই শেষ নয়, বরাদ্দ নেওয়ার পর সেটি তিনি অন্য পরিচ্ছতাকর্মী দিয়ে চালাতেন। এছাড়াও গাড়ির তেল চুরির কারসাজিতেও তিনি জড়িত। শিক্ষার্থী নাঈম হাসানের মৃত্যুর পর আটক পরিচ্ছতাকর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদে হারুনের অনিয়মের নানা তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

এদিকে গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে রয়েছেন হারুন। তাকে ধরতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক দল মাঠে কাজ করছে।

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, হারুন মিয়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) বিশেষ ট্রাক পরিচ্ছন্নতাকর্মী। কিন্তু তিনি এই ট্রাকটি মোটা অংকের টাকা দিয়ে নিজের নামে বরাদ্দ নেন। এতেই হয়ে ওঠেন ডিএসসিসির ময়লার গাড়ি চালক।

সূত্র ঢাকাটাইমসকে জানিয়েছে, হারুনের নিজের ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। অবৈধভাবে তিন লাখ টাকায় তিন মাসের জন্য ময়লার গাড়ি বরাদ্দ নেন তিনি। গত দেড় বছর ধরে তিনি ডিএসসিসির ময়লার গাড়ি চালানোর দায়িত্বে রয়েছেন। তিন লাখ টাকায় বরাদ্দ নিলেও তার আয় হতো দ্বিগুণ টাকা। এছাড়াও গাড়ির তেল চুরির কারসাজিও করতেন।  

ডিএসসিসির একাধিক সূত্র জানায়, ময়লার গাড়ির জন্য প্রতিদিন বরাদ্দকৃত ১১ লিটার তেলের মধ্যে ৬ লিটার চুরি করে বিক্রি করে দেওয়া হতো। এভাবে হারুন প্রতিমাসে ১৮০ লিটার তেল চুরি করে বিক্রি করে দিতেন। এতে তার আয় কয়েকগুণ বেড়ে যায়।

নিহত নাঈম হাসান।বুধবার বেলা ১১টা ২০ মিনিটে গুলিস্তান বঙ্গবন্ধু স্কয়ার গোলচত্বরের দক্ষিণ পাশে নটরডেম কলেজের মানবিক বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র নাঈম হাসান রাস্তা পার হওয়ার সময় পূর্ব দিক থেকে আসা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের একটি ট্রাক (রেজি: নম্বর ঢাকা মেট্রো-শ ১১-১২৪৪) চালক রাসেল খান বেপরোয়া গতিতে ময়লা নিয়ে নাঈমকে সজোরে ধাক্কা দিলে তিনি রাস্তায় পরে যান। এতে নাঈমের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জখম হয়। তখন স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) নেয়। বেলা পৌনে ১২টার দিকে সেখানেই তার মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনার পর পালিয়ে যাওয়ার সময় টহল পুলিশ ও পথচারীরা ট্রাকের চালক (পরিচ্ছন্নতাকর্মী) রাসেল, গাড়ির ভেতরে থাকা পরিচ্ছন্নতাকর্মী গোলাম রব্বানী ও বেলালকে আওয়ামী লীগের অফিসের পূর্ব প্রান্ত থেকে আটক করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের বাবা শাহ আলম দেওয়ান বাদী হয়ে মামলা করেন।

ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) আব্দুল আহাদ বলেন, গাড়িটি চালাচ্ছিলেন রাসেল খান। তিনি প্রকৃতপক্ষে ওই গাড়ির চালক নন। আমরা গাড়ির কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে ও গ্রেপ্তার রাসেলকে জিজ্ঞাসাবাদে জেনেছি, গাড়িটির মূল চালক হারুন।

তিনি বলেন, গাড়িটি চালানোর কথা হারুনের, কিন্তু তিনি না চালিয়ে রাসেলকে দিয়ে চালাচ্ছিলেন। ইতিমধ্যে হারুনকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। দ্রুতই আমরা তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। হারুনকে গ্রেপ্তারের পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে কেন তিনি রাসেলকে দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছিলেন।

এদিকে সহকর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় রাজধানীর মতিঝিল, গুলিস্থান, ফার্মগেট ও উত্তরায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। পরে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে তারা সড়ক থেকে ওঠেন।

এদিকে, বৃহস্পতিবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের জানান, অবৈধভাবে গাড়ি বরাদ্দ নিয়ে তা চালানোয় পরিচ্ছন্নতাকর্মী হারুন মিয়া ও এ কাজে সহযোগিতা করায় পরিচ্ছন্নতাকর্মী আব্দুর রাজ্জাককে কর্মচ্যুত করা হয়েছে।

তিনি জানান, বরাদ্দ গাড়ি নিজে না চালিয়ে নিয়মবহির্ভূতভাবে অন্যকে চালাতে দেওয়ায় করপোরেশনের গাড়িচালক (ভারী) মো. ইরান মিয়ার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু ও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/২৬নভেম্বর/এসএস/ইএস)