সাগর পাড়ের গায়েন ‘মাসুম’

কক্সবাজার থেকে ফিরে কাজী রফিক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৬ নভেম্বর ২০২১, ২০:৩৩

পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র মাসুম। সকালে স্কুলে যায়, পড়াশোনা করে। দিনের আলো নিভে যেতেই আসে সৈকতে। পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তাদের মাথা মালিশ করে দেওয়ার জন্য। বিনিময়ে নেয় কিছু টাকা। সন্ধ্যা থেকে রাত ১২টা-১টা পর্যন্ত চলে মাসুমের এই কর্মযজ্ঞ। মাথা মালিশ করে দেওয়ার সময় গলা ছেড়ে গান ধরে এই কিশোর। যা মুগ্ধ করে পর্যটকদের। মাসুমের মায়াবী গলা আকর্ষণ করে সবাইকে।

বৃহস্পতিবার রাতে কক্সবাজারের সুগন্ধা সৈকতে দেখা মেলে মাসুমের। এক পর্যটকের মাথা মালিশ করে দিতে দিতে মাসুম শোনালো দুইটি গান। ‘মধু হই হই বিষ হাওয়াইলা’ এবং ‘তোমার ঘরে বাস করে কারা ও মন জানো না’ এই দুটি জনপ্রিয় গান শোনায় এই কিশোর।

মাসুমের গান শুনে সাগর পাড়ে আসা মানুষ জড়ো হয়ে যান। মাসুমের মায়াবী কণ্ঠের গান মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শোনেন পর্যটকরা।

গান শেষে ঢাকা টাইমসের সঙ্গে আলাপ হয় মাসুমের। শিশুটি জানায়, আগে এই সৈকতে পান বিক্রি করত সে। এরপর শুরু করে খেলনা বিক্রি। এখন দুটোই ছেড়ে দিয়েছে। বেশি আয়ের পথ হিসেবে বেছে নিয়েছে পর্যটকদের মাথা মালিশ করার কাজ।

মাসুমের জানায়, দিনের বেলা পড়াশোনা আর খেলাধুলা করে সে। সন্ধ্যায় আসে সৈকতে। পর্যটকদের মাথা মালিশ করে রাত ১২টা পর্যন্ত। কখনো কখনো থাকে রাত একটা অবধিও। এই সময়ে প্রতিদিন তার আয় হয় পাঁচ থেকে ছয়শো টাকা পর্যন্ত।

শিশু মাসুমের বাবা নেই। মা আছেন। মা অন্যের বাড়িতে রান্নার কাজ করেন। মাসুনের দুইজন বড় বোন আছে। যাদের বিয়ে হয়েছে। বোনদের জন্য যৌতুক দিতে হয়। আর সেই যৌতুকের টাকার ব্যবস্থা করতে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে যাচ্ছে মাসুম ও তার মা।

ছোটো হলেও অনেক আগে থেকেই জীবন বুঝতে শেখা মাসুমের ভবিষ্যত নিয়ে ভাবনাও আছে। বড় হয়ে জাতিসংঘের বিশেষ সংস্থা আন্তর্জাতিক শিশু তহবিল-ইউনিসেফে চাকরি করতে চায় সে। মাসুম বলে, ‘আমার এক প্রতিবেশী আছে, সে ইউনিসেফে চাকরি করেন। ৩৮ হাজার টাকা বেতন পায়।’ এরকম একটি চাকরির ব্যবস্থা হলে আর্থিক টানাপোড়েনের কষ্টের জীবন থেকে হয়ত মাসুম বেঁচে যাবে।

সৈকতে পর্যটকদের কাছে গিয়ে গিয়ে মাথা মালিশের জন্য আবদার করা মাসুমের মনে কষ্ট আছে। দশ জনের কাছে গেলে একজন হয়ত তার হাতে মাথা মালিশ করাতে রাজি হয়। কিশোর বয়সে উপনীত হওয়ার আগেই যে শিশু সংসারের বোঝা বইছে, তার আয়েও ভাগ বসাচ্ছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের একটি চক্র। মাসুম জানায়, প্রতিদিন ২০ টাকা হারে দিতে হয় ওই চক্রকে। এ টাকা দিতে না হলে মাসুমের মাসে বেঁচে যেত অন্তত ছয়শো টাকা।

ঢাকাটাইমস/২৬নভেম্বর/কারই/ইএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :