রোগ নিরাময়ে জিরার জাদুকরী গুণ

প্রকাশ | ২৭ নভেম্বর ২০২১, ০৯:৪৬ | আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২১, ১১:২৩

স্বাস্থ্য ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

প্রাচীনকাল রান্নার স্বাদ ও ঘ্রাণ বাড়াতে জিরা ব্যবহার করা হয়ে আসছে। জিরা শুধু মশলা নয়, বহু রকমের বিশেষ ঔষধি গুণ সম্পন্ন। এটি শুধু খাবারের স্বাদ বাড়ায় তা নয়, শরীরের নানা সমস্যা সমাধানে জিরার জুড়িমেলা ভার। আপনার হজম ক্ষমতার উন্নতির পাশাপাশি নানা রকমের পেটের রোগ সারাতে প্রাকৃতিক উপাদানটি বিশেষ ভূমিকা নেয়। অ্যাজমার প্রকোপ কমাতে এবং ত্বক ও চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেও কাজে আসে।

 

তবে এই জিরার যে দারুণ সব পুষ্টিগুণ আছে সেটা আমরা অনেকেই জানি না। একশ গ্রাম জিরায় ৩৭৫ ক্যালোরি থাকে। এছাড়া এতে ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, সোডিয়াম, পটাশিয়ামসহ বেশি কিছু ভিটামিনও থাকে। জিরার রয়েছে অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা। সুগন্ধি এই মশলাটি আমাদের নানা অসুখ-বিসুখ থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করে।

 

জিরার অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিইনফ্লামেটরি উপাদানের জন্য এটি অ্যাজমা ও ঠাণ্ডা প্রতিরোধে সাহায্য করে। জিরা সংক্রমণ কমায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। অ্যাজমা ও ঠাণ্ডায় উপকার পেতে এক গ্লাস পানিতে এক টেবিল চামচ জিরা ও কিছু আদা কুচি দিন। পানিটি ভালোমতো ফুটিয়ে নিন। দিনে তিনবার পান করুন।

 

জিরাতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে আয়রন। আয়রন শক্তির মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে, শরীরে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি মাধ্যমে সেলুলার স্তরে অক্সিজেনের পরিমান বৃদ্ধি করে।

 

গ্যাসের সমস্যার সবথেকে ভালো সমাধান লুকিয়ে জিরেতে। পেটে ব্যথা কমাতেও জিরা ভেজানো পানি অব্যর্থ।

 

হজম ক্ষমতার উন্নতিতে জিরার কোনও বিকল্প হয় না। যারা হজম সমস্যায় ভুগছেন, তারা দিনে কম করে ৩ বার জিরা দিয়ে বানানো চা পান করুন।

 

গর্ভবতী নারীর শরীর ঠিক রাখতে জিরা বেশ উপকারী। এই সময় হবু মায়েদের কনস্টিপেশন এবং হজমের সমস্যা হয়ে থাকে। জিরা এই সমস্যা কমাতে দারুন উপকারে লাগে।

 

গর্ভাবস্থা সম্পর্কিত আরও সব লক্ষণ কমাতেও বিশেষ ভূমিকা নেয়। সেই কারণেই তো হবু মায়েদের প্রতিদিন ১ গ্লাস গরম দুধে হাফ চামচ জিরা এবং ১ চামচ মধু মিশিয়ে খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।

 

যাদের রাতের বেলা ভাল করে ঘুম আসে না, তারা প্রতিদিন ঘুমনোর আগে ১ চামচ চটকানো কলার সঙ্গে হাফ চামচ জিরা পাউডার মিশিয়ে খাওয়া শুরু করুন। ওষুধটি খেলে ঘুমের আর কোনও সমস্যা হবে না। মস্তিষ্কে মেলাটোনিন নামক এক ধরনের হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। যা ঘুম আসার ক্ষেত্রে দারুণ ভাবে সাহায্য করে।

 

জিরার পানিতে রয়েছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল , অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি প্রপাটিজ যা ঠান্ডা লাগা বা জ্বরের প্রকোপ কমায়। আসলে প্রকৃতিক উপাদানটি শরীরে প্রবেশ করা মাত্রইবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয়।

 

ভাইরাল ফিভার এবং ওই সংক্রান্ত নানাবিধ কষ্ট কমে যায়। জ্বর কমাতে ১ চামচ জিরা এবং অল্প পরিমাণ আদা, ১ গ্লাস পানিতে মিশিয়ে নিন প্রথমে। জলটা ফুটিয়ে নিয়ে ছেঁকে নিন। আর পান করুন। দেখবেন কষ্ট কমে যাবে।

 

কোষ্টকাঠিন্যের মতো রোগসারাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। পাইলসের কষ্ট কমাতেও জিরা দারুণভাবে সাহায্য করে।এক্ষেত্রে ১ চামচ জিরা ভেজে নিয়ে গুঁড়া করে নিন। তারপর পাউডার ১ গ্লাস পানিতে মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন উপকার মিলবে।

 

সকালে ঘুম থেকে উঠে খেতে পারেন জিরা ভেজানো পানি। রাতে দুই টেবিল চামচ জিরা একগ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রেখে পর দিন সেই পানি সকালে খালি পেটে খেয়ে নিন। জিরা পানিতে আয়রনের পাশাপাশি বেশ ভালো পরিমাণ ভিটামিনএ যাতে কে অ্যান্ট- অক্সিডেন্টের সুবিধা পাওয়া যায়।

 

দুই চামচ জিরা এক গ্লাস পানি গরম করে ছেঁকে উষ্ণ গরম অবস্থায় মধু দিয়ে খেয়ে নিন খালি পেটে। আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করবে।

 

শরীরে আঘাতজনিত কারণে ব্যথা, প্রদাহ দেখা দিলে তা কমাতে সাহায্য করে জিরা। এমনকি আথ্রাইটিস, অ্যালার্জি, অ্যাজমা ও ক্যানসারের প্রদাহ কমাতেও উপকারী এটি।

 

জিরা শরীরের কোলেস্টেরল কমায়। এক গবেষণায় দেখা গেছে দেড় মাস ধরে যেসব রোগী জিরা খেয়েছেন, তাদের শরীরে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা ১০ শতাংশ কমেছে।

 

জিরায় কিউমিনালডিহাইড, থায়মল ও ফসফরাসের মতো উপাদান থাকে, যা শরীর থেকে টক্সিন দূর করে।

 

জিরায় আয়রনের পরিমাণ বেশি থাকে। এটি অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা সারায়। তাই যারা রক্তস্বল্পতায় ভুগছেন, তারা জিরা খেলে উপকৃত হবেন।

 

এছাড়া লম্বা এবং ঝলমলে চুলের জন্য জিরা অসাধারণ কার্যকরী একটি উপাদান। ৩/৪ গ্লাস পানির সাথে এক চা চামচ জিরা গুড়া এবং একটি ডিমের কুসুম মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। পুরো চুলে লাগিয়ে শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একবার কিংবা দুইবার ব্যবহার করলে চুল পোড়া কমবে এবং চুল দ্রুত বৃদ্ধি পাবে।

 

(ঢাকাটাইমস/২৭নভেম্বর/আরজেড/এজেড)