‘পারিবারিক আদালতের মামলার দীর্ঘসূত্রিতা ন্যায়নীতি পরিপন্থী’

প্রকাশ | ২৭ নভেম্বর ২০২১, ১৩:৪২ | আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২১, ১৪:০০

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

দেশের পারিবারিক আদালতে শিশুদের অভিভাবকত্ব এবং হেফাজত সম্পর্কিত চলমান মামলাগুলো আগামী ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দিয়ে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট।

শনিবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে পাঁচ পৃষ্ঠার এই রায় প্রকাশ করা হয়।

রায়ে বলা হয়েছে, ‘পারিবারিক আদালতগুলোর মামলা এত দীর্ঘ সময় ধরে চলমান থাকা দুঃখ ও হতাশাজনক এবং ন্যায়-নীতির পরিপন্থী। এই মামলাসমূহ দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া বাঞ্ছনীয়। এমতাবস্থায়, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১০৯ অনুযায়ী দেশের সকল পারিবারিক আদালতকে শিশু সন্তানদের অভিভাবকত্ব ও হেফাজত সম্পর্কিত মামলাসমূহ যাতে মামলা দায়েরের ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয় সে বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করা হলো।’

রায়ে আদালত আরও বলেন, ‘পারিবারিক অধ্যাদেশ ১৯৮৫ এর ধারা-১৯ অনুযায়ী পারিবারিক আদালতকে অবমাননা করা হলে অবমাননাকারীকে মাত্র দুইশত টাকা জরিমানা করার বিধান রয়েছে। সময়ের বাস্তবতায় পারিবারিক আদালত অবমাননায় শাস্তির এই বিধানটি সংশোধন করে আরও কঠোর করা বাঞ্ছনীয়। এক্ষেত্রে সিভিল জেল এবং পর্যাপ্ত জরিমানার বিধান প্রণয়ন সময়ের বাস্তবতা।’

অবমাননায় শাস্তির বিধান সংশোধন করে আরও কঠোর করতে বলেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, পারিবারিক আদালত অবমাননায় সিভিল জেল ও পর্যাপ্ত জরিমানার বিধান প্রণয়ন সময়ের বাস্তবতা। সরকারের নীতি নির্ধারক মহল এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে অবিলম্বে যথাযথ ব্যবস্থা করবেন বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।

পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি ঢাকার পারিবারিক আদালত ও প্রথম সহকারী জজ আদালত, আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার, দেশের সব পারিবারিক আদালত, রাজশাহী মহানগরীর পুলিশ কমিশনার ও রাজশা্হী জেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তার কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে।

এক সন্তানের হেফাজত নিয়ে মায়ের দায়ের করা রিট খারিজ করে দিয়ে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ৭ নভেম্বর এই রায় দেন।

রায়ে হাইকোর্ট বলেছেন, পারিবারিক আদালতসমূহের বিভিন্ন আদেশ, বিশেষত শিশু সন্তানকে দেখা-সাক্ষাতের আদেশ সংশ্লিষ্ট পক্ষ মান্য করছেন না। ফলশ্রুতিতে তারা হাইকোর্টে হেবিয়াস কর্পাস অধিক্ষেত্রে এসে আশ্রয় গ্রহণ করছেন।

আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. মোতাহার হোসেন সাজু। অপরপক্ষে ছিলেন ফাওজিয়া করিম ফিরোজ।

মামলার বিবরণ তুলে এ সংশ্লিষ্ট আইনজীবী মোতাহার হোসেন সাজু বলেন, ২০১১ সালে রংপুরের মেয়ে ও রাজশাহীর এক ছেলের বিয়ে হয়। ২০১৫ সালে তাদের একটি কন্যাশিশুর জন্ম হয়। ২০১৮ সালে ওই দম্পতির বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। এরপর শিশুটি তার বাবার কাছে ছিল। এ অবস্থায় শিশুটিকে ফিরে পেতে রিট করেন শিশুটির মা। এর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন।

রুলের শুনানি শেষে আদালত উপরোক্ত রায় দেন। পারিবারিক আদালতে শিশুটির মায়ের করা মামলাটি ৩১ মার্চের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেন আদালত।

(ঢাকাটাইমস/২৭নভেম্বর/এআইএম/জেবি)