টাকা-তদবির ছাড়াই কনস্টেবল হলেন তিন হাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৭ নভেম্বর ২০২১, ২২:০৩ | প্রকাশিত : ২৭ নভেম্বর ২০২১, ২১:৪৬
কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষায় প্রার্থীদের অংশগ্রহণ।

'চাকরি নয় সেবা' এ প্রতিপাদ্যে বাংলাদেশ পুলিশে প্রথমবারের মতো নতুন নিয়োগবিধি অনুযায়ী ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। কোনো ধরনের তদবির কিংবা অর্থ খরচ ছাড়াই তিন লাখ ৩৮ হাজার ৫৩৪ জন আবেদনকারীর মধ্যে সাত ধাপের পরীক্ষা শেষে তিন হাজার জন প্রার্থী কনস্টেবল হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। তাদের বেশির ভাগ অত্যন্ত সাধারণ পরিবারের সন্তান বলে জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।

শনিবার রাতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) মো. কামরুজ্জামানের স্বাক্ষরে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মোট আবেদনকারীর মধ্যে প্রাথমিক বাছাইয়ে উত্তীর্ণ হন ১ লাখ ১৭ হাজার ৬৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৬৩৪ জন এবং নারী ১৬ হাজার ৪৩৪ জন। শারীরিক সক্ষমতা যাচাই শেষে ২৩ হাজার ৬৯৭ প্রার্থী লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন, যাদের ২১ হাজার ৭৫৯ জন পুরুষ এবং ১ হাজার ৯৩৮ জন নারী। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৭ হাজার ৪০০ জন প্রার্থীর মধ্যে কনস্টেবল পদে চূড়ান্ত নিয়োগ পেয়েছেন ৩ হাজার জন।

পুলিশের সংশোধিত নিয়োগবিধি অনুযায়ী কনস্টেবল নিয়োগের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ছিল মেধা ও শারীরিক সক্ষমতার দিক থেকে অধিকতর যোগ্য প্রার্থী নিয়োগ করা। কোনো তদবির কিংবা অর্থের লেনদেন ছাড়াই নিরপেক্ষভাবে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতার ভিত্তিতে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।

এবারের কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষায় অত্যন্ত সাধারণ পরিবারের যেমন- দিনমজুর, কৃষক, ভ্যানচালকের সন্তানরাই বেশির ভাগ চাকরি পেয়েছেন জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কোনো ধরনের তদবির বা টাকা ছাড়া কনস্টেবল পদে চাকরি পাওয়া সাধারণ পরিবারের তরুণ-তরুণী এবং তাদের পিতা-মাতার জন্য ছিল স্বপ্নের মতো। এসব পরিবারের সন্তানদের কাছে মাত্র ১৩৩ টাকা ফি দিয়ে পুলিশের চাকরি পাওয়া ছিল স্বপ্নাতীত। চাকরি পেয়ে আনন্দে তাদের অনেকের চোখ ভিজে উঠেছিল। সন্তানের চাকরি পাওয়ার খুশিতে আবেগ ধরে রাখতে পারেননি তাদের পিতা-মাতাও। দেশের ৬৪ জেলার প্রায় প্রতিটিতেই এমন আবেগঘন দৃশ্য চোখে পড়েছে।

পিআরবি পরিবর্তনের মাধ্যমে মেধা ও শারীরিক যোগ্যতার ভিত্তিতে কনস্টেবল পদে সাত ধাপে নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপে প্রাথমিক বাছাই, দ্বিতীয় ধাপে শারিরীক মাপ এবং ফিজিক্যাল এ্যানডুরেন্স টেস্ট, তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষা, চতুর্থ ধাপে মনস্তাত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষা, পঞ্চম ধাপে প্রাথমিক নির্বাচন, ষষ্ঠ ধাপে পুলিশ ভেরিফিকেশন ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং সপ্তম ও সর্বশেষ ধাপ হলো চূড়ান্তভাবে প্রশিক্ষণে অন্তর্ভুক্তকরণ। প্রার্থীদের শারিরীক সক্ষমতা সাতটি ইভেন্টের মধ্য দিয়ে যাচাই করা হয়েছে। দৌড়, পুশ আপ, লং জাম্প, হাইজাম্প, ড্র্যাগিং এবং রোপ ক্লাইম্বিং।

পুলিশ সদর দপ্তর থেকে জানানো হয়, আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ নতুন নিয়মে কনস্টেবল নিয়োগের লক্ষ্যে প্রথমেই পিআরবি সংশোধনের উদ্যোগ নেন। পিআরবি সংশোধন শেষে সফলতার সঙ্গে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা এবং প্রার্থীদের নিয়োগ প্রক্রিয়ার সাথে অভ্যস্ত করার লক্ষ্যে খাগড়াছড়িতে এপিবিএনের বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে দীর্ঘদিন ধরে পরীক্ষার প্রতিটি ধাপ সম্পর্কে বাস্তবভিত্তিক ভিডিও ধারণ করা হয়। এ ভিডিও পুলিশের ফেসবুক পেজসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচার করা হয়। গবেষণার ভিত্তিতে টাঙ্গাইল জেলা থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পিটিসি টাঙ্গাইলে 'মক' নিয়োগ পরীক্ষারও আয়োজন করা হয়।

প্রার্থীদের নতুন নিয়মে নিয়োগ পরীক্ষায় অভ্যস্ত করতে শারীরিক সক্ষমতা যাচাইয়ের জন্য সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি, এপিবিএনসহ অন্যান্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের দিয়ে শারীরিক সক্ষমতা যাচাইয়ের ইভেন্টসমূহের অনুশীলন ইভেন্ট পরিচালনা করে শারীরিক সক্ষমতা যাচাই পরীক্ষার প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়।

মাঠ পর্যায়ে কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য নিয়োগ সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাগণের জন্য একাধিক ট্রেনিং অব ট্রেইনার্স (টিওটি) কোর্সের আয়োজন করা হয়েছে। অনলাইনে আবেদন গ্রহণ এবং ওয়েব বেইজড স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষা ডিজিটালাইজেশন করা হয়েছে।

কনস্টেবল নিয়োগকে কেন্দ্র করে কেউ যাতে অসাধু পন্থা অবলম্বন করতে না পারে সেজন্য পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া চলাকালীন পুলিশ অত্যন্ত তৎপর ও সচেষ্ট ছিল বলে জানান এআইজি মিডিয়া। তিনি বলেন, কয়েকটি জেলায় কনস্টেবল নিয়োগে প্রতারণার অভিযোগে প্রতারকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

কনস্টেবল নিয়োগ সম্পর্কে আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘আমরা প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য দিকনির্দেশনা ও সার্বিক তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ পুলিশকে উন্নত দেশের উপযোগী পুলিশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করেছি। এবারের কনস্টেবল নিয়োগ সে প্রক্রিয়ারই অংশ। এজন্য বর্তমান নিয়োগ বিধি সংশোধন করা হয়েছে।’

তিনি নিয়োগ বিধি সংশোধনে সার্বিক সহায়তা দেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান।

আইজিপি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর দুর্দমনীয় সাহস ও সুযোগ্য নেতৃত্বে ২০৪১ সালে বাংলাদেশ উন্নত দেশে পরিণত হবে। আমরা পুলিশকেও উন্নত দেশের উপযোগী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে মেধা ও শারীরিকভাবে অধিক যোগ্য প্রার্থীদের কনস্টেবল পদে নিয়োগ করেছি।’

অত্যন্ত স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষতার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করায় তিনি সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

তিনি এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, ভবিষ্যতে পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) এবং সার্জেন্ট পদে নিয়োগের ক্ষেত্রেও মেধা ও শারীরিক যোগ্যতা সম্পন্ন প্রার্থীরাই নিয়োগ পাবেন।

(ঢাকাটাইমস/২৭ নভেম্বর/এএ/ইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে রেলকে গড়ে তুলতে হবে: রেলমন্ত্রী

ইভ্যালির রাসেল-শামিমার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর আশ্বাসে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার

জিম্মি নাবিকদের মুক্তির আলোচনা অনেকদূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ডিএনসিসি কার্যালয় সরানোর মধ্য দিয়ে কারওয়ান বাজার স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরু 

বিএসএমএমইউ উপাচার্যের দায়িত্ব নিলেন দীন মোহাম্মদ, বললেন ‘কোনো অন্যায় আবদার শুনব না’

সাত বিভাগে ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হতে পারে

বাংলাদেশে মুক্ত গণতন্ত্র বাস্তবায়নে সমর্থন অব্যাহত থাকবে: যুক্তরাষ্ট্র

সীমান্তে নিহত দুই বাংলাদেশির লাশ ফেরত দিলো বিএসএফ

ট্রেনে ঈদযাত্রা: পঞ্চম দিনের মতো অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :