যেভাবে মাজলে দাঁত ও মাড়ি সুস্থ থাকে

প্রকাশ | ২৮ নভেম্বর ২০২১, ১১:০৫ | আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০২১, ১১:১৭

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম আমরা বুঝি না! বহুল প্রচলিত একটি কথা। সুস্থ দাঁত মানুষের হাসির সৌন্দর্যের আকর্ষণীয়তা বৃদ্ধি করে। সুন্দর হাসি দিয়ে মন জয় করা যায়। কিছু অযত্ন ও অবহেলার কারণে আমাদের অনেকের সেই আশা পূরণ হয় না। হাসি দিলেও সে হাসি সুন্দর হয় না। আর সুন্দর হাসির না হওয়ার কয়েকটি কারণের মধ্যে হলো ঠিকমতো দাঁত পরিষ্কার না করা। সঠিক সময়ে যত্নের অভাবে দাঁতে আক্রমণ করে রোগ-জীবাণু ও বিভিন্ন রকমের অসুখ।

 

মুখের স্বাস্থ্য সঠিক রাখার জন্য নিয়মিত ভালো করে এবং সঠিক নিয়ম মেনে দাঁত মাজা খুবই জরুরি। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, প্রতিদিন অন্তত ২ মিনিট ধরে দাঁত মাজা প্রয়োজন। তবেই মুখের ভিতরে থাকা জীবাণু ধ্বংস হয়। নিয়মিত সঠিক নিয়ম মেনে দাঁত না মাজলে দাঁতের সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্যের নানা সমস্যা দেখা দেয়। তাই দাঁত মাজার সঠিক নিয়ম জেনে নেওয়া খুবই জরুরি।

 

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, অনেকেরই অভ্যাস রয়েছে, দাঁত খুব চাপ দিয়ে মাজার। এর ফল ভয়ংকর হতে পারে বলে জানাচ্ছেন তারা। তাদের মতে, অত্যধিক চাপ দিয়ে দাঁত মাজলে দাঁতের গোড়া ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, দাঁত অকালে পড়ে যেতে পারে, দাঁতে থাকা এনামেল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এমনকি মাড়িরও নানা ক্ষতি হতে পারে।

 

অত্যধিক চাপ দিয়ে দাঁত মাজার ফলে যখনই দাঁতের এনামেল খারাপ হয়ে যায়, তখন মুখের স্বাস্থ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মুখে জীবাণুর সংক্রমণ হতে পারে। এছাড়াও নানারকম অসুখ দেখা দিতে পারে।

 

গরম কিংবা ঠান্ডা খাবার খাওয়ার সময়ে দাঁতে শিরশিরানিভাব দেখা দিতে পারে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

 

অত্যধিক চাপ দিয়ে দাঁত মাজার পাশাপাশি যে ভুলটা প্রায়শই মানুষ করে থাকেন, তা অত্যধিক দাঁত মাজার প্রবণতা। বিশেষজ্ঞদের মতে, দু মিনিট সময় দিয়ে দাণত মাজা জরুরি। কিন্তু বহু মানুষই এর থেকে বেশি সময় কিংবা দিনের নানা সময়ে বহুবার দাঁত মেজে থাকেন। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, অত্যধিক দাঁত মাজলে দাঁতের পাশাপাশি মাড়িও ক্ষতিগ্রস্থ হয়। সেনসিটিভ টিভ-এর সমস্যা দেখা দেয়।

 

তারা পরামর্শ দিচ্ছেন, প্রতি তিন মাস অন্তর দাঁত মাজার ব্রাশ পরিবর্তন করা জরুরি। দাঁত মাজার ব্রাশ ব্যবহার করতে করতে শক্ত হয়ে যায়। শক্ত ব্রাশ ব্যবহার করলে দাঁত খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

 

চিকিত্সকরা বলছেন, দিনে ২বার ব্রাশ করলেই যথেষ্ট। রাতে ডিনারের পর ঘুমোতে যাওয়ার আগে এবং সকালে ব্রেকফাস্ট করার পর। প্রতিবার ২ থেকে ৩ মিনিট ব্রাশ করলেই হবে। কীভাবে দাঁত মাজবেন? ব্রাশ করার সঠিক পদ্ধতি কী? ভাল মানের টুথব্রাশ ব্যবহার করতে হবে, যার শলাকাগুলো বেশি শক্ত বা বেশি নরম নয়। ৩ মাস অন্তর টুথব্রাশ পরিবর্তন করতে হবে। ব্রাশের শলাকাগুলো বেঁকে গেলেই ব্রাশ বদলাতে হবে।

 

ব্রাশের শলাকাগুলো দাঁতের সঙ্গে ৪৫ ডিগ্রি কোনাকুনি ধরে ওপর পাটির দাঁত ওপর থেকে নিচে এবং নিচের পাটির দাঁত নিচ থেকে ওপরে ব্রাশ করতে হবে। ছোট ছোট গোলাকার আকারে হালকা করে ব্রাশ করতে হবে। ওপর ও নিচের পাটির প্রত্যেক দাঁতের ওপর হালকাভাবে আগুপিছু করে ব্রাশ করতে হবে। দাঁতের একদম ভিতরের দিকে দাঁত ও মাড়ির সংযোগস্থলে হালকা করে ব্রাশ করতে হবে। ছোট ছোট গোলাকার আকারে  দাঁত ও মাড়ির সংযোগস্থল বরাবর ব্রাশ করতে হবে।

 

ব্রাশটাকে এমনভাবে ধরতে হবে যাতে শলাকার সামনের দিকে অর্ধেক অংশ ওপর-নিচ বরাবর দাঁতের ভিতরের দিকে ব্রাশ করা যেতে পারে। সঠিক পদ্ধতি ও সময় মেনে দাঁত না মাজলে গোল্লায় যাবে দাঁত। শুধু দাঁত নয়, বারোটা বাজবে শরীরের। কারণ, দাঁতের স্বাস্থ্যের সঙ্গে লুকিয়ে রয়েছে গোটা শরীরের স্বাস্থ্য। দাঁতে গর্ত হবে। মুখে দুর্গন্ধ। অসময়ে দাঁত পড়ে ফোকলা হয়ে যেতে পারেন। মাড়ির রোগ, এমনকী মুখের ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে। এ ছাড়াও হার্টের রোগ, স্ট্রোক, ফুসফুস দুর্বল হয়ে পড়া বা ডায়াবেটিসের মতো ডেঞ্চারাস রোগের অন্যতম কারণ অসুস্থ দাঁত।

 

টকজাতীয় খাবার খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দাঁত ব্রাশ না করাই ভাল। এইসময় দাঁতের এনামেলের আবরণ নরম হয়ে পড়ে। তখন ব্রাশ ঘষলে এনামেল ক্ষয়ে যাবে। দাঁত মাজার আগে ব্রাশটি ভাল করে ভিজিয়ে নরম করে নিতে হবে। দাঁত যেখানে মাড়ির সঙ্গে মিশেছে, ঠিক সেইখানে ব্রাশের শলাকা ধরতে হবে। মাড়ি ও দাঁতের সংযোগস্থল বরাবর ব্রাশ ঘষতে হবে।

 

(ঢাকাটাইমস/২৮নভেম্বর/আরজেড/এজেড)