যেসব খাবার খেলে নতুন চুল গজায়

প্রকাশ | ২৯ নভেম্বর ২০২১, ১১:০২

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

স্বাস্থ্যকর সুন্দর চুল মানুষের চেহারা ফুটিয়ে তোলে । নিজের সৌন্দর্য বাড়াতে বহু যত্ন আত্তি করে চুলের পরিচর্যা করতে আগ্রহী হন অনেকেই। কিন্তু চুলের যত্ন ঠিকমতো না করলে অকালে চুল পড়ে যেতে পারে। বহু মানুষেরই নানা কারণে চুল পড়ে যাওয়া, চুল পাতলা হয়ে যাওয়া কিংবা ডগা ফেটে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়।

 

বিশেষজ্ঞদের মতে, অস্বাস্থ্যকর লাইফস্টাইল এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কারণে চুলের নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়াও আরো নানারকম শারীরিক অসুস্থতার কারণে এই সমস্যা দেখা দেয়।  সুন্দর, ঝলমলে, ঘন ও বাড়ন্ত চুল পেতে খাবারের দিকে নজর দেওয়া দরকার। খাবার থেকে চুল প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাচ্ছে কি না সেটিও অনেক বড় ব্যাপার।

 

চুলের ফলিকল বা গ্রন্থিকোষ বিপাককার্যে খুবই সক্রিয় এবং এই কোষগুলো খুবই দ্রুত নতুন কোষ দ্বারা পরিবর্তিত হতে থাকে। প্রয়োজনের তুলনায় কম ক্যালোরি গ্রহণ বা প্রতিদিনের খাবারে পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিন, মিনারেল, ফ্যাটি এসিড এবং ভিটামিন না থাকলে চুলের বৃদ্ধি ও গঠন ক্ষতিগ্রস্ত হয় যা চুল রুক্ষ হয়ে যাওয়া, ভেঙে যাওয়া ও চুল ঝরে যাওয়ার কারণ হয়।

 

খাবারের যেসব উপাদান চুলের ঘনত্ব, বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্য নিশ্চিত করে তা হলো: প্রোটিন বা আমিষ, আয়রন বা লৌহজাতীয় খাবার, ভিটামিন এ সি ডি ও ই, বি ভিটামিনগুলো, ওমেগা ৩ এবং ৬ ফ্যাটি এসিড, জিঙ্ক, সেলেনিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আঁশজাতীয় খাবার।

 

বিশেষজ্ঞদের মতে, খাদ্যাভ্যাস সঠিক থাকলে চুল ঘন এবং চুলের সমস্যা দূর করা সম্ভব। কোন কোন খাবার নিয়মিত তালিকায় রাখলে চুল পাতলা হয়ে যাওয়ার সমস্যা দূর হয়, পরিবর্তে ঘন এবং মজবুত চুল পেতে পারেন, তার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

 

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ডিমে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন এবং বায়োটিন রয়েছে। যা চুলের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এছাড়াও ডিমে জিঙ্ক, সেলেনিয়াম রয়েছে। প্রতিদিন নিয়ম মেনে খাবারের তালিকায় ডিম রাখতে তা চুলের ঘনত্ব বৃদ্ধি করতে এবং চুল মজবুত করতে সাহায্য করে।

 

বাদাম, বিভিন্ন বীজ ও নারিকেল চুলের জন্যও খুবই উপকারী। বাদামে থাকা ওমেগা ৩ এবং ওমেগা ৬ ফ্যাটি এসিড চুলপড়া কমায় এবং চুলের বৃদ্ধিতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে, চুলকে ঘন করে। বাদাম ও বিভিন্ন বীজে আছে প্রচুর পরিমাণ ম্যাগনেসিয়াম, বি ভিটামিন, জিঙ্ক ও ভিটামিন ই। মাত্র ২৮ গ্রাম সূর্যমুখী বীজ মানুষের প্রতিদিনের ভিটামিন ই চাহিদার ৫০ শতাংশ পূরণ করতে সক্ষম, তা ছাড়া এতে আছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন বি।

 

কাঠবাদাম, আখরোট এবং নারিকেল বা নারিকেল তেল প্রতিদিনের খাবার তালিকায় রাখলে তা ত্বক ও চুলের ওপর একটি সুরক্ষা প্রলেপ হিসেবে কাজ করে। এছাড়া এই খাবারগুলো চুলকে ভেতর থেকে ময়েশ্চারাইজ করে ঝলমলে করে তোলে।

 

তিসির বীজ প্রতিদিন অল্প অল্প করে খেলে চুলের জন্য খুবই উপকার। সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়ার জন্য নানা ধরনের বাদাম বীজের মিশ্রণ রাখতে হবে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায়।

 

ওটমিল চুল ঘন করতে সাহায্য করে, চুলকে স্বাস্থ্যবান করে তোলে ও চুল বাড়তে সাহায্য করে। এতে রয়েছে আয়রন, জিঙ্ক, ফাইবার, ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড এবং পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড। এ ছাড়া হোল গ্রেইন খাবারে আরো আছে বায়োটিন ও বি ভিটামিন যা কোষের বিস্তারে সাহায্য করে। তা ছাড়া এই খাবারগুলো এমিনো এসিড উৎপাদনে ভূমিকা রাখে যা চুল বাড়তে সাহায্য করে।

 

বিভিন্ন প্রকারের বেরিই চুলের জন্য খুবই উপকারী। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস। চুলের ঘনত্ব বৃদ্ধি করতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দারুণ উপকারী। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, স্ট্রবেরির মতো প্রত্যেক বেরিতেই ভিটামিন সি রয়েছে। নিয়মিত খাবারের তালিকায় রাখলে তা চুলের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

 

স্বাস্থ্যের উপকারে পালং শাকের গুণাগুণ কারও অজানা নয়। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, আয়রন রয়েছে। চুল পড়ার সমস্যা প্রতিরোধ করতে এবং চুল ঘন ও মজবুত করে তুলতে পালং শাক নিয়মিত খাবারের তালিকায় রাখার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

 

কমলালেবু, মাল্টা, লেবু, জাম্বুরা ইত্যাদি ফল ভিটামিন সিতে ভরপুর। ভিটামিন সি দেহে প্রয়োজনীয় পুষ্টি যেমন আয়রন শোষণে ভূমিকা রাখে, আর আয়রন ও অন্যান্য উপাদান চুলের সুস্বাস্থ্য রক্ষায় ভূমিকা রাখে। তা ছাড়া ভিটামিন সি দেহে কোলাজেন তৈরি করে যা চুল বাড়তে সাহায্য করে এবং চুলের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত মজবুত রাখে ফলে চুল ভেঙে পড়ে না।

 

ডাল, শিম, মটরশুঁটি খাবারগুলো উদ্ভিদজাত আমিষে ও খাদ্যআঁশে ভরপুর যা চুলের বৃদ্ধির জন্য দরকারি উপাদান। এতে আছে জিঙ্ক যা চুলের ক্ষতি পূরণ করে এবং চুলকে বাড়তে সাহায্য করে। এ ছাড়া এই খাবারগুলোতে আছে নানা ধরনের প্রয়োজনীয় উপাদান যেমন- আয়রন, বায়োটিন, ফলেট ইত্যাদি যা চুলের স্বাস্থ্যরক্ষা ও বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।

 

স্যামন মাছে রয়েছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। যা প্রোটিন, সেলেনিয়াম, ভিটামিন ডি৩, ভিটামিন বি এবং আরও অনেক পুষ্টিতে ভরপুর। খাবাররে তালিকায় স্যামন মাছ রাখতে উপকৃত হবেন যারা চুলের সমস্যায় ভুগছেন।

 

সাদা রুটি, পাস্তা, চাল ইত্যাদি চুলকে পাতলা ও চিকন করে ফেলে। তাই ময়দা, সাদা চাল ইত্যাদি দিয়ে তৈরি খাবার যেমন- কেক, পেস্ট্রি থেকে দূরে থাকুন। সাদা চালের পরিবর্তে লাল চাল, সাদা আটা বা ময়দার পরিবর্তে লাল আটা খাওয়ার অভ্যাস গড়ুন।

 

অ্যালকোহল, প্রসেসড বা প্যাকেটজাত খাবারে পুষ্টির পরিমাণ খুবই কম থাকে। এ ছাড়া এতে এমন সব উপকরণ ব্যবহার করা হয় যা শরীর ও চুলের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

 

চুল পড়ার অন্যতম কারণ হলো চিনি। সুন্দর চুলের জন্য প্রোটিন একটি অপরিহার্য উপাদান। শরীর যখন খাবার থেকে প্রোটিন শোষণ করে নেয়, চিনি সেই কাজকে বাধাগ্রস্ত করে। তাই চিনি খাওয়া বাদ দিন।

 

(ঢাকাটাইমস/২৯নভেম্বর/আরজেড/এজেড)