খালেদা জিয়ার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছি: কাদের

প্রকাশ | ২৯ নভেম্বর ২০২১, ২০:৪৯ | আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২১, ২২:০০

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
ফাইল ছবি।

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সরকার পর্যবেক্ষণ করছে বলে জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, আমরা বেগম জিয়ার মৃত্যু কামনা করি না। তিনি দ্রুত আরোগ্য লাভ করুন এটা আমরাও চাই। খালেদা জিয়ার অবস্থা আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। আমরা এমনও বলেছি প্রয়োজনে বিদেশ থেকে ডাক্তার নিয়ে আসুন।

সোমবার লালবাগ থানাধীন নবাবগঞ্জ পার্ক প্রাঙ্গণে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের ২৩ নং ওয়ার্ডে ছয়টি ইউনিটের সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, আপনি (খালেদা জিয়া) আইনের ফাঁদে পড়েছেন। আমরা অপারগ এই একটি মাত্র কারণে। কিন্তু সবকিছুর একটা নিয়ম আছে। আইন মন্ত্রী বলেছেন, এরপর এ বিষয় নিয়ে আমি কথা বলতে চাই না। তারপরও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

বিএনপির আমলে প্রধানমন্ত্রী শেখা হাসিনার ওপর নৃশংস গ্রেনেড হামলার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘মানবিকতা; যাকে মারতে চেয়েছেন সেই তিনিই (শেখ হাসিনা) খালেদা জিয়ার প্রতি মানবিক হয়েছে, শেখ হাসিনা তার প্রমাণ। আপনি কি মানবিকতা দেখিয়েছেন? আপনি তার পিতাকে হত্যা করেছেন, তাকে হত্যা করার জন্য গ্রেনেড হামলা করেছেন। আজকে যারা মায়া কান্না করেন, এটা তারা কী করে ভুলে যান।’

বিএনপির নেতাদের উদ্দেশে কাদের বলেন, আপনারা বেগম জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে ভাবুন, তাকে নিয়ে আর রাজনীতি করবেন না। আপনারা তো করেছেন রাজনীতি। শুধু খোঁজেন কোন ইস্যু নিতে হবে। এখন বেগম জিয়ার অসুস্থতার ইস্যু পেয়েছেন।  বিএনপি আন্দোলনের ডাক দিয়ে দেখেছে, কেউ আসে না। নেতারা ঘরে বসে হিন্দি সিরিয়াল দেখে। বিএনপির নেতারা মাঠে নামে না। আর টেলিফোনে খবর নেয়, পুলিশের গতিবিধি কেমন, এত ভীতু নেতৃত্ব!

 

সড়কমন্ত্রী আরও বলেন, খালেদা জিয়াকে নিয়ে এত মায়া কান্না। অথচ বেগম জিয়ার এ মামলাটা সাত বছর ঝুলিয়ে রেখেছে। অনুপস্থিত, অসুস্থ বলে-বলে এ মামলাটা ঝুলিয়ে রাখছে, সে কারণে মামলার রায় হয়েছে দেরিতে। 

বেগম জিয়ার বেশি অসুস্থতার জন্যও বিএনপি দায়ী বলেও অভিযোগ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বেগম জিয়া যদি বেশি অসুস্থ হয়, এর জন্যও দায়ী বিএনপি।  বিএনপি তার (খালেদা জিয়া) শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে যত কথা বলেছে তারচে বেশি রাজনীতি করেছে। আমরা অমানবিক নই, শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন। কে ঘটিয়েছে ১৫ আগস্ট? কে খুনিদেরকে পুরস্কৃত করেছে? নিরাপদে বিদেশে যেতে দিয়েছে?  খুনিদের যাতে বিচার না হয়, সে আইন সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত করেছে কে? জেনারেল জিয়াউর রহমান। বঙ্গবন্ধু হত্যার দুঃসাহস খুনিরা পেতো না, যদি জিয়া তাদের সঙ্গে না থাকতো। কারাগারে জাতীয় ৪ নেতার হত্যাকাণ্ডের পেছনে আপনারা। ২১ আগস্ট শেষ করে দিতে চেয়েছিলেন শেখ হাসিনাকে। ২১ আগস্ট গ্রেনেট হামলার হত্যাকাণ্ড কে করেছে, বিএনপি নয়?

এসময় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ির ধাক্কায় দুজনের নিহত হওয়ার প্রসঙ্গেও কথা বলে সড়কমন্ত্রী। বলেন, আজকে ২ সিটির ময়লার গাড়িতে ২টি মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটেছে, একজন ছাত্র, একজন ব্যবসায়ী। আজকে সরকার হিসেবে এর দায় এড়াতে পারি না। যদিও এটা সিটি করপোরেশনের বিষয়। রাস্তাও সিটি করপোরেশনের, গাড়িও সিটি করপোরেশনের, আমার কোনো মালিকানা নেই।  তারপরও আমি দায় অস্বীকার করি না।

হাফ ভাড়া নিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, শিক্ষার্থীরা হাফ ভাড়া দাবি করেছে, সরকারি গাড়িতে আমরা হাফ ভাড়া মওকুফ করেছি। সিটিতে দেয়ার কথা কনশেসন, নেত্রী বললেন না  সারাদেশেই দাও। নেত্রী নিজে অনুরোধ করেছে বেসরকারি বাস মালিকদের। বাস মালিকরা আমায় গতকালও বলেছেন, আজকে তারা আবারও বৈঠকে বসেছেন। বাস মালিকদের আমি বলেছি সামাজিক দায়বদ্ধতা রয়েছে। ছাত্ররা কনশেসন বহু আগ থেকেই পেত। মাঝখানে কিছু দিন বন্ধ ছিলো। বাস মালিকরা আজকেও আলোচনায় বসেছেন, আমরা আশা করবো আপনরা ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবেন সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে। আমরা ছাত্রদের রাজপথে দেখতে চাই না, তারা ক্যাম্পাসে ফিরে যাক। ফখরুল সাহেবেরা সাপোর্ট করার নামে উস্কানি দিচ্ছে। এর আগেও উস্কানি দিয়েছিলো, এখনও দিচ্ছে। 

দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, মানুষের সঙ্গে খারাপ আচরণ করবেন না। একটি খারাপ আচরণ ১০টি ভালো উন্নয়ন ঢেকে দিতে পারে। মানুষকে অখুশি করলেন, ক্ষমতার দাপট দেখাবেন, মানুষ হয়তো এখন আপনাদের ভয় করবে। কিন্তু নির্বাচন যখন হবে ব্যালটের মধ্যে শাস্তি দিয়ে দেবে। নির্বাচনে খারাপ ব্যবহারে শাস্তি পেতে হবে। কাজেই যতই উন্নয়ন হোক, ভালো ব্যবহার করবেন। জনগণকে খুশি রাখবেন। মাঝেমধ্যে এখানে ওখানে চাঁদাবাজির অভিযোগ আসে, সন্ত্রাসের অভিযোগ আসে, জমি দখলের অভিযোগ আসে। বাড়ি দখলের অভিযোগ আসে, মাদক ব্যবসার অভিযোগ আসে। এইসব অপকর্ম আমাদের পার্টি উন্নয়নকে ম্লান করে দিচ্ছে।

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রসঙ্গও উঠে আসে ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যে। তিনি বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন উৎসব উদ্দীপনা, ৭০ থেকে ৭৫ ভাগ ভোটার কেন্দ্রে আসছে। সারাদেশে উৎসবমুখর নির্বাচন হচ্ছে। কিছু বুদ্ধিজীবী, কিছু রাজনীতিক বলেন, মানুষ নাকি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। অবশ্য ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে কিছু অসুস্থ প্রতিযোগিতা আমাদেরকে বিড়ম্বিত করছে। এতে কোনো সন্দেহ নেই।

সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দিপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী সেলিম, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনিবাহী সদস্য, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, মোফাজ্জল হোসেন মায়া, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনসহ অনেকেই। এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহম্মদ মন্নাফি সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবিরসহ বিভিন্ন নেতাকর্মী।

(ঢাকাটাইমস/২৯নভেম্বর/ইএস)